চন্দ্ৰপ্ৰভা শইকীয়ানী
চন্দ্ৰপ্ৰভা শইকীয়ানী (১৬ মার্চ ১৯০১ - ১৬ মার্চ ১৯৭২) ছিলেন একজন অসমীয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী, সক্রিয় কর্মী, লেখক এবং সমাজ সংস্কারক, যাকে আসামের নারীবাদী আন্দোলনের পথপ্রদর্শক বলে মনে করা হয়।[১][২] তিনি সর্ব আসাম প্রদেশিক মহিলা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, আসামের মহিলাদের কল্যাণের জন্য কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা এবং ১৯৭২ সালে এর জন্য ভারত সরকার থেকে চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী লাভ করেন।[৩] তিন দশক পরে, ভারত সরকার ২০০২ সালে সোশ্যাল রিফর্মার্স ধারাবাহিকের অধীনে শইকীয়ানীর একটি স্মারক ডাকটিকিট জারি করে।[৪]
চন্দ্ৰপ্ৰভা শইকীয়ানী | |
---|---|
চন্দ্ৰপ্ৰভা শইকীয়ানী | |
জন্ম | চন্দ্রপ্রিয়া দাস ১৬ মার্চ ১৯০১ দৈশিংরী, আসাম, ভারত |
মৃত্যু | ১৬ মার্চ ১৯৭২ দৈশিংরী, আসাম, ভারত | (বয়স ৭১)
পেশা | সমাজ সংস্কারক, লেখক |
কর্মজীবন | ১৯১৮-১৯৭২ |
পরিচিতির কারণ | সর্ব আসাম প্রদেশিক মহিলা সমিতি |
দাম্পত্য সঙ্গী | দণ্ডিনাথ কলিতা |
সন্তান | ১ |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
তিনি ১৯৩২ সালের আইন অমান্য আন্দোলন এবং ১৯২০-১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আইনসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী প্রথমদিকের মহিলাদের একজন হয়েছিলেন। এছাড়া, শইকীয়ানী একজন প্রখ্যাত কবি এবং লেখক ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতার বোন রজনীপ্রভা শইকীয়ানীর (যিনি পরে আসামের প্রথম মহিলা ডাক্তার হয়েছিলেন) সাথে মিলে তারা কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি ছেলেদের স্কুলে (কোন মেয়েদের স্কুল ছিল না) পড়ার জন্য কোমরসমান গভীর কাদা মাড়িয়ে হেঁটে যেতেন। তাদের প্রচেষ্টা নীলকান্ত বড়ুয়া নামের একজন স্কুল সাব-ইন্সপেক্টরকে প্রভাবিত করেছিল এবং তাকে নগাঁও মিশন স্কুলে বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল।[৫] নগাঁও মিশন স্কুলে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, যারা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে একজন মেয়ে হিসেবে তাকে ছাত্রাবাসে থাকতে দেয়নি। অবশেষে তিনি তার প্রতিবাদের ফল দেখতে পেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাকে ছাত্রাবাসে ভর্তি করতে নতি স্বীকার করে।[১][৬][৭]
বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি স্থানীয় নিরক্ষর মেয়েদের জড়ো করেছিলেন এবং বিদ্যালয়ের কাছে একটি অস্থায়ী ছাপরাতে যা শিখেছিলেন তা তাদের শেখাতেন।[৫] ছাত্রাবাস অধীক্ষক কর্তৃক হিন্দু শিক্ষার্থীদের সাথে কথিত বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে তার সামাজিক সক্রিয়তা এখানে শুরু হয়েছিল।[১]
সমাজকর্ম ও রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাশইকীয়ানী নগাঁওয়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তেজপুরের গার্লস এম. ই. স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হন। তেজপুরে থাকার সময় তিনি জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, অমিয় কুমার দাস, চন্দ্রনাথ শর্মা, লখিধর শর্মার মতো আলোকিত ব্যক্তিদের সাথে যুক্ত ছিলেন।[৮] ১৯১৮ সালে, আসাম ছাত্র সম্মেলনের তেজপুর অধিবেশনে তিনি একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি ছিলেন এবং আফিম খাওয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে বিশাল জনসমাগমকে সম্বোধন করেছিলেন এবং এটি নিষিদ্ধ করার জন্য বলেছিলেন। এটি ছিল প্রথম ঘটনা যেখানে একজন অসমীয়া মহিলা একটি বিশাল সমাবেশের সামনে বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন কিন্তু পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ফিরে আসেন এবং ১৯৫৭ সালের আসাম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।[১] তার ছেলে অতুল শইকীয়া একজন রাজনীতিবিদ এবং আসাম বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য।[৬]
সাহিত্য কার্যক্রম, পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
সম্পাদনাচন্দ্রপ্রভা শইকীয়ানী একজন প্রখ্যাত কবি এবং লেখক ছিলেন। শইকীয়ানী ১৯১৮ সালে ১৭ বছর বয়সে একটি স্থানীয় ম্যাগাজিন বহিতে তার প্রথম ছোট গল্প প্রকাশ করেন। তিনি পিতৃভিঠা (১৯৩৭), সিপাহী বিদ্রোহ, দিল্লির সিংহাসন এবং কবি অনভ ঘোষের মতো বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেন। তিনি সাত বছর ধরে মহিলা সমিতির অসমীয়া জার্নাল অভিযাত্রীর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন এবং সর্ব ভারত আসাম কৃষক সম্মেলনেরও প্রধান ছিলেন।[৬]
তার মৃত্যুর পরপরই ভারত সরকার ১৯৭২ সালে তাকে পদ্মশ্রী প্রদান করে সম্মানিত করে। আবার ২০০২ সালে, ভারত সরকার তার সম্মানে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ Rina Sonowal Kouli (২০১৫)। "Chandraprabha Saikiani : The Path-Breaking Lady of Assam"। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫।
- ↑ Mitra Phukan (৭ মার্চ ২০১৫)। "Remembering Chandraprabha Saikiani"। Thumb print magazine। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৫।
- ↑ "Padma Shri" (পিডিএফ)। Padma Shri। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Indian Postage Stamps"। Department of Posts, Government of India। ২০১৫। ১৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫।
- ↑ ক খ "The Legendary Crusader"। Assam Times। ১৬ মার্চ ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Basavaraj Naikar (২০০৫)। Literary Vision। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 390। আইএসবিএন 9788176255660।
- ↑ "Chandraprabha Saikiani (1901-1972)"। Stree Shakthi। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৫।
- ↑ "Chandraprabha Saikiani: The Legendary Crusader"। Assam Times। ১৬ মার্চ ২০১০।