গ্রাবরেখা বা অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ হল হিমবাহের অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় এর সাথে যেসব পাথরখণ্ড, বালি, কাদা প্রভৃতি বাহিত হয়, হিমবাহ গলতে শুরু করলে সেগুলি হিমবাহের প্রবাহপথের আশেপাশে সঞ্চিত হতে থাকে। এই অসংবদ্ধ মিশ্র পদার্থের সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বা অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ বলে।[]

গ্রাবরেখা

প্রকারভেদ

সম্পাদনা

অবস্থান ও প্রস্তুতি অনুযায়ী গ্রাবরেখাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  • পার্শ্ব গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের দুইপাশে সরু দৈর্ঘ্য আকারে যে সরু গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
  • ভূমি গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের নিচে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
  • প্রান্ত গ্রাবরেখাঃ হিমবাহ যেখানে এসে মিলিত হয় অর্থাৎ হিমবাহের সামনে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
  • মধ্য গ্রাবরেখাঃ দু'দিক থেকে এগিয়ে আসা দুটি হিমবাহ যেখানে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের গ্রাবরেখা দ্বারা সৃষ্ট গ্রাবরেখাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
  • হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখাঃ অনেক সময় নানা আকৃতির পাথরের টুকরো হিমবাহের ফাটলের মধ্যে ঢুকে হিমবাহের মধ্যে আবদ্ধ হয়। এই ধরনের গ্রাবরেখা হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা নামে পরিচিত।

উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়। উপরিউক্ত গ্রাবরেখাগুলি ছাড়াও ভূপৃষ্ঠ-এ যে বিশেষ ধরনের কিছু গ্রাবরেখা দেখা যায় সেগুলি হল-

  • অবিন্যস্ত গ্রাবরেখাঃহিমবাহের প্রান্তভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত গ্রাবরেখা কে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
  • বলয়ধর্মী গ্রাবরেখাঃহিমবাহের প্রান্তভাগে বলয়ের আকারে সঞ্চিত গ্রাবরেখা কে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
  • রোজেন গ্রাবরেখাঃগ্রাবরেখা গুলি একে অপরের ওপর সঞ্চিত হলে তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
  • স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখাঃউপকূল অঞ্চলে হিমবাহ প্রসারিত হলে সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় এদের স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা বলে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ভূগোল ও পরিবেশ। ১ বিধান সরণি, কলকাতা- ৭০০০৭৩: ছায়া প্রকাশনী। জানুয়ারি ২০১৬। পৃষ্ঠা ১২।