গ্রহীয় বলয় (ইংরেজি ভাষায়: Planetary ring) বলতে কোন গ্রহের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট চাকতি আকৃতির অঞ্চলে আবর্তনরত ধূলি ও ছোট ছোট কণার বেষ্টনীকে বোঝায়। সবচেয়ে স্পষ্ট ও দর্শনীয় বলয় রয়েছে সৌর জগতের শনি গ্রহের চারপাশে। এছাড়াও সৌর জগতের অন্য তিনটি গ্যাসীয় দৈত্যের (বৃহস্পতি, ইউরেনাসনেপচুন) চারপাশে বলয় রয়েছে। ক্যাসিনি নভোযান থেকে পাওয়া তথ্য থেকে সম্প্রতি ধারণা করা হচ্ছে, শনির একটি উপগ্রহের চারদিকেও বলয় রয়েছে। রিয়া নামের এই উপগ্রহের বলয় আবিষ্কৃত হলে প্রমাণিত হবে যে, উপগ্রহেরও বলয় থাকতে পারে।

উপগ্রহ প্রমিথিউস (ডানদিকে) এবং প্যান্ডোরার কক্ষপথটি শনির এফ বলয়ের ঠিক ভিতরে এবং বাইরে, কিন্তু শুধুমাত্র প্রমিথিউসকেই একটি গ্রহীয় বলয় হিসাবে কাজ করার কথা ভাবা হয়

সৃষ্টি প্রক্রিয়া

সম্পাদনা

তিনটি উপায়ে গ্রহীয় বলয় গঠিত হতে পারে:

  • ভ্রূণ গ্রহীয় চাকতির যে উপাদানগুলো রোশ সীমার মধ্যে ছিল সেগুলো একসাথে মিলে উপগ্রহ গঠন করতে পারেনি। এরাই বলয় গঠন করেছে।
  • গ্রহটির কোন উপগ্রহ বিরাট কোন সংঘর্ষের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে গেলে সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে গঠিত হতে পারে।
  • উপগ্রহটি হয়তো হঠাৎ কখনও রোশ সীমার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় গ্রহের জোয়ার-ভাটা জনিত টানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

গাঠনিক উপাদান

সম্পাদনা

অধিকাংশ বলয়ই খুব অস্থিতিশীল হয় এবং লক্ষ লক্ষ বছরের ব্যবধানে মহাকাশে মিলিয়ে যায়। কিন্তু, ধারণা করা হয় শনির বলয় অনেক প্রাচীন, সৌর জগতের একেবারে প্রাথমিক সময়ে এই বলয় গঠিত হয়েছিল। বলয়ের উপাদান বিভিন্ন রকম হতে পারে: সিলিকেট বা বরফ দ্বারা গঠিত ধূলি। বড় বড় শিলা ও স্থানভ্রষ্ট প্রস্তরখণ্ডও থাকতে পারে। ২০০৭ সাল শনির বলয়ের মধ্যে আটটি ভিন্ন ভিন্ন চন্দ্রকণার (মুনলেট) জোয়ার-ভাটাজনিত টান আবিষ্কার করা হয়েছে।

কখনও কখনও বলয়ে "রাখাল" চাঁদ থাকতে পারে। এগুলো খুব ছট চাঁদ যারা বলয়ের বহিঃস্থ প্রান্ত বা বলয়গুলোর মধ্যকার ফাঁকা স্থানে আবর্তিত হয়। রাখাল চাঁদগুলোর মহাকর্ষ টানের কারণেই বলয়ের একটি নির্দিষ্ট সূক্ষ্ণ প্রান্তসীমা থাকে। পদ্ধতিটা এরকম: যে বস্তুটি বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সেটি হয় রাখাল চাঁদের মহাকর্ষ টান দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে বলয়ে ঢুকে পড়ে নয়তো আকর্ষিত হয়ে রাখাল চাঁদের সাথে লেগে যায়।

 
প্রমিথিউস (বামে) এবং প্যান্ডোরা (ডানে) শনির বলয়ে রাখালগিরি করছে।

সৌর জগতের বিভিন্ন বলয়

সম্পাদনা

বৃহস্পতি গ্রহের ভিতরের দিকের কয়েকটি উপগ্রহ তার বলয়ের মধ্যে অবস্থিত। এমনকি এদের অবস্থান বৃহস্পতির রোশ সীমার মধ্যেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেটিস এবং অ্যাড্রাস্টিয়া। এটা সম্ভব যে, এই উপগ্রহগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বস্তু খসে পড়ে বলয়ের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর পৃষ্ঠে বলয়ের মত উপাদান থাকায় গ্রহের জোয়ার-ভাটাজনিত টানে এগুলো বেরিয়ে পড়ে। রোশ সীমার মধ্যে অবস্থিত যেকোন উপগ্রহ কেবল তার যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে পতন থেকে নিজেকে ঠেকিয়ে রাখে, মহাকর্ষের মাধ্যমে নয়। এর ফলে প্রতিনিয়তই তাকে হারাতে হয় অনেক কিছু।

নেপচুনের বলয়গুলো খুবই অস্বাভাবিক। প্রথমে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, সেখানে কেবল অসম্পূর্ণ কিছু বক্র অংশ আছে। কিন্তু, ভয়েজার ২ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি পূর্ণ বলয় তবে অনেকটা গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যালাটিয়া এবং অনাবিষ্কৃত আরও কিছু রাখাল উপগ্রহের কারণে এই গুচ্ছবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

প্লুটোর কোন বলয় নেই। অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০১৫ সালে নিউ হরাইজন্‌স সন্ধানী যান যখন প্লুটোতে পৌঁছুবে তখন, সেখানেও বলয় আবিষ্কৃত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মঙ্গল গ্রহের উপগ্রহ ফোবোস আজ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর পর ভেঙে গিয়ে মঙ্গলের চারদিকে বলয় গঠন করবে। ফোবোসের নিম্ন কক্ষপথের কারণেই এটি ঘটবে। এছাড়া ধারণা করা হয়ে থিয়া নামক বস্তুর সাথে পৃথিবীর যে সংঘর্ষের কারণে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল সেই সংঘর্ষের পরপর পৃথিবীরও বলয় ছিল।

বিভিন্ন গ্রহের বলয়

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা