গোলাম কুদ্দুস ( ২০ জানুয়ারি ১৯২০ - ১৩ ডিসেম্বর ২০০৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাম্যবাদী বাঙালি কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। [১] [২]

গোলাম কুদ্দুস
জন্ম(১৯২০-০১-২০)২০ জানুয়ারি ১৯২০
সাট্টিগ্রাম ফরিদপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৩ ডিসেম্বর ২০০৬(2006-12-13) (বয়স ৮৬)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ
পেশাকবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
দাম্পত্যসঙ্গীঅধ্যাপিকা হেনা মৈত্র

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

গোলাম কুদ্দুসের জন্ম ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সাট্টিগ্রামে তার মাতুলালয়ে। পৈতৃক নিবাস ছিল কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালী থানার ধলনগর নামক এক গ্রামে। পিতা গোলাম দরবেশ জোয়াদার ছিলেন একজন আইনজীবি এবং মাতা ছিলেন সৈয়দুন্নেসা খাতুন। গোলাম কুদ্দুসের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় গ্রামের সোলেমান পণ্ডিতের পাঠশালায়। তারপরে হরিনারায়ণপুরের হাই স্কুলে, তবে ম্যাট্রিক পাশ করেন কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে। এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে চলে আসেন কলকাতায়। ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ইতিহাসের খ্যাতনামা অধ্যাপক সুশোভন সরকারের মার্কসিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস পড়ানোয় গোলাম কুদ্দুস ছাত্রবস্থাতেই একজন কমিউনিস্ট হয়ে ওঠেন [৩] এবং আমৃত্যু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। গোলাম কুদ্দুস কলকাতার বেকার হস্টেলে থাকতেন। ওই হস্টেলে তার পাশের রুমে থাকতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও। গোলাম কুদ্দুস ইতিহাসে এম এ পাস করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। [৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "স্বাধীনতা" পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন এবং তিনি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রর সঙ্গে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস’-এর যুগ্ম সম্পাদক হন। এসবের পাশাপাশি তিনি ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষকসভার সঙ্গে ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন, প্রগতিশীল লেখক সংঘ, রুশ-ভারত মৈত্রী সমিতি, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ প্রভৃতির কাজের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি দৈনিক "কালান্তর" পত্রিকার সূচনা পর্ব থেকে দীর্ঘদিন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সাংবাদিকতার জন্য তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন তাকে বিশেষভাবে সংবর্ধনা জানায়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

গোলাম কুদ্দুস ভারতে থাকলেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নৈতিক সমর্থন জানাতে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে সভাসমিতিতে অংশগ্রহণ করেন। কিছুদিন কুষ্ঠিয়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে নির্যাতিত ও নিপীড়িতদের আশ্রয়েরও ব্যবস্থা করেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুহৃদ কবি হিসাবে আখ্যায়িত হন।[৪]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

গোলাম কুদ্দুস বামপন্থী সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। কবিতা দিয়েই তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থটি বিদীর্ণ প্রকাশিত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। পরের বছরেই কৃষক আন্দোলন তথা তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম মহিয়ষী নেত্রী ইলা মিত্রকে নিয়ে একটি কাব্যগ্রন্থ ইলা মিত্র রচনা করেন। তিনি বর্ণময় সাহিত্যজীবনে কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও উপন্যাস। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থ গুলি হল -

কাব্যগ্রন্থ-
  • টুনটুনির গান (১৯৫৪)
  • নাচে মনময়ূর
  • স্বেচ্ছাবন্দী
উপন্যাস-
  • মারিয়ম (১৯৫৪)
  • এক শৃঙ্গে (১৯৫৫)
  • বাঁদী (১৩৫৯ ব)
  • লেখা নেই স্বর্ণাক্ষরে
অন্যান্য -
  • ইরাকে ঈগল
  • উজানিয়া
  • জগৎজয়ের যাত্রী
  • নররামায়ণ
  • যুগসন্ধিক্ষণ
  • সম্মোধন
  • সুরের আগুন

চল্লিশের দশকে তিনি ফ্যাসিবাদী কবিদের সংকলন "একসূত্র" যুগ্মভাবে সম্পাদনা করতেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বাংলা সাহিত্যের জন্য বহু পুরস্কার লাভ করেছেন।বিভিন্ন সময়ে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্র, নজরুল, মুজফ্ফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

গোলাম কুদ্দুস ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় পরলোক গমন করেন। নিঃসন্তান গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী হেনা মৈত্র একজন বিশিষ্ট অধ্যাপিকা।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১১৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৬৯। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  3. "কলকাতার কড়চা - ফিরে দেখা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৩ 
  4. "কলকাতার পথে পথে সভা-সমাবেশ করেছেন গোলাম কুদ্দুস"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০২