গোণ্ডা জেলা

উত্তর প্রদেশের একটি জেলা

গোণ্ডা জেলা হল ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের একটি জেলা। এই জেলাটি দেবীপাটন বিভাগের অন্তর্গত এবং জেলার সদর দপ্তর হল গোণ্ডা

গোণ্ডা জেলা
উত্তরপ্রদেশের জেলা
গোণ্ডা জেলার স্কাইলাইন
উত্তরপ্রদেশে গোণ্ডার অবস্থান
উত্তরপ্রদেশে গোণ্ডার অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যউত্তরপ্রদেশ
প্রশাসনিক বিভাগদেবীপাটন বিভাগ
সদরদপ্তরগোণ্ডা
সরকার
 • লোকসভা কেন্দ্রগোণ্ডা
আয়তন
 • মোট৪,০০৩ বর্গকিমি (১,৫৪৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৩৪,৩৩,৯১৯
 • জনঘনত্ব৮৬০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
 • সাক্ষরতা৫৮.৭১%.
প্রধান মহাসড়কএন.এইচ ২৭
ওয়েবসাইট[gonda.nic.in দাপ্তরিক ওয়েবসাইট]

ইতিহাস সম্পাদনা

বর্তমানে গোণ্ডা জেলা প্রাচীনকালে কোশল রাজ্যের অংশ ছিল। কোশল রাজ্যের শাসনকারী সৌর রাজবংশের বিখ্যাত শাসক ভগবান রাম চন্দ্র। তিনি চলে যাওয়ার পর রাজ্যটি ঘাঘরা নদী বরাবর দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল। উত্তরের অংশটি তখন তার পুত্র লভ দ্বারা শাসিত হয় যার রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী শহর।[১]

অতি সম্প্রতি, শ্রাবস্তী শহরের সমগ্র অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন পাওয়া গেছে।[২]

পরবর্তীকালে গোণ্ডা জেলা গোরখপুরের নিজামতের অংশ ছিল কিন্তু ১৮০১ সালে গোরখপুর ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তর হওয়ার পর গোণ্ডা জেলা বাহরাইচ জেলার সাথে একত্রিত হয়।[৩] ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা যখন অওধকে সংযুক্ত করে তখন এটি একটি পৃথক জেলা হিসাবে তৈরি হয়েছিল।[৩] ১৮৭৫ সালে গোণ্ডা জেলার কিছু অংশ বাঘাউরা তাল এবং আরাহ নদীর মধ্যবর্তী অংশ ব্রিটিশ সরকার নেপালের কাছে হস্তান্তর করেন।[৩]

গোণ্ডা জেলা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই অঞ্চলের অনেক মানুষ সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত ছিল রাজা দেবী বক্স সিং যিনি নেপালে পালিয়ে গিয়েছিলেন।[৪] চন্দ্র শেখর আজাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই জেলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং রাজেন্দ্র লাহিড়ী গোণ্ডার জেলে বন্দী ছিলেন এবং পরে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলানো হয়েছিল।[৫]

সাম্প্রতিক সময়ে গোণ্ডা জেলা চর্চিত ছিল, ১৯৮২ সালে গোণ্ডা এনকাউন্টার নামে পরিচিত ১৩ জনের হত্যাকে ঘিরে দীর্ঘ আদালতের মামলার কারণে জেলাটি সারা ভারতে মিডিয়ার মনোযোগ পেয়েছে।[৬][৭]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে গোণ্ডা জেলার জনসংখ্যা ৩,৪৩৩,৯১৯ জন।[৮] জনসংখ্যায় এটি ভারতে ৯৫ তম জেলায় স্থান পেয়েছে (মোট ৬৪০টি জেলার মধ্যে)। এই জেলার মোট সাক্ষর সংখ্যা ১,৬৭৯,৯৯ জন যা মোট জনসংখ্যার ৪৮.৯%।[৮] ০ থেকে ৬ বছর বয়সের জনসংখ্যা ৫৭২,৩৮৬ জন। কার্যকর সাক্ষরতা সংখ্যা (৭ বছর বা তার বেশি) জনসংখ্যা ৫৮.৭%।[৮] এর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৫৭ জন (প্রতি বর্গমাইলে ২,২২০ জন) বাসিন্দা রয়েছে।[৮] ২০০১-২০১১ এর দশকে জেলার জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ২৪.১৭%। গোণ্ডা জেলায় প্রতি ১০০০ পুরুষের জন্য ৯২১ জন মহিলা লিঙ্গ অনুপাত রয়েছে এবং সাক্ষরতার হার ৫৮.৭% এবং তফসিলি জাতি জনসংখ্যার ১৫.৪৯%।[৮]

গোণ্ডা জেলার মানব উন্নয়ন সূচক খুবই কম।[৯]


ধর্ম সম্পাদনা

গোণ্ডা জেলা হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে উল্লেখযোগ্য মুসলিম সংখ্যালঘু। জেলার সরকারী ভাষা হিন্দি এবং অতিরিক্ত সরকারী ভাষা উর্দু।[১০]

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারির অনুসারে, জেলার জনসংখ্যার ৮১.০৩% হিন্দি, ১৬.০৪% অওধ এবং ২.৬৮% উর্দু।[১১]


শিল্প সম্পাদনা

গোণ্ডা জেলায় বেশ কিছু চিনিকল, রাইস মিল এবং আরও অনেক ছোট শিল্প ও হস্তশিল্প রয়েছে। ভারতের ছয়টি টেলিফোন শিল্পের মধ্যে একটি মানকাপুরে অবস্থিত এবং ভারতের বৃহত্তম চিনিকলটি কুন্দরখিতে অবস্থিত।[১২]

২০০৬ সালে পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক গোণ্ডা জেলা দেশের ২৫০ টি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলার একটি (মোট ৬৪০ টির মধ্যে) ধরা হয়েছে। এই জেলাটি উত্তরপ্রদেশের ৩৪ টি জেলার মধ্যে একটি যা বর্তমানে (BRGF) অনুদান তহবিল গ্রহণ করছে।[১৩]

জনস্বাস্থ্য সম্পাদনা

গোণ্ডা জেলায় ৬৬ টি সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও ১৫ টি হাসপাতাল, ২৭ টি আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল, ১১ টি হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল এবং ২ টি ইউনানি হাসপাতাল রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারির অনুসারে শিশুমৃত্যুর হার গোণ্ডা জেলায় শীর্ষে, ১০০ টি জেলার তালিকার মধ্যে একটি জেলা। এছাড়াও মাতৃমৃত্যুর সর্বোচ্চ হার শীর্ষে ৫৭ টি জেলার মধ্যে পড়ে।[১৪]


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Gonda District at The Imperial Gazetteer of India, 1908, v. 12, p. 312.
  2. "Excavations at Sravasti"IndiaDivine.org 
  3. Nevill, H.R. (১৯০৫)। Gonda: A Gazetteer, Being Volume XLIV Of The District Gazetteers Of The United Provinces Of Agra And Oudh। Allahabad: Government Press। পৃষ্ঠা 115–6, 149–50, 156–7। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২১ 
  4. 1857:The Oral Tradition, Pankaj Rag, Rupa Publication,2010
  5. "Rajendra Nath Lahiri Was Convicted in the Kakori Conspiracy Case And Was Hanged On December 17, 1927 – This Day in History"BYJUS (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫ 
  6. "3 cops get death, 5 life term for Gonda fake encounter"Pioneer। ৬ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২২ 
  7. Rai, Rajat (এপ্রিল ৫, ২০১৪)। "3 cops get death penalty, life term to 5 in Uttar Pradesh fake encounter case"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২২ 
  8. "District Census Handbook: Gonda" (পিডিএফ)censusindia.gov.inRegistrar General and Census Commissioner of India। ২০১১। 
  9. "Planning commission release" (পিডিএফ)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২৩ 
  10. "Table C-01 Population by Religion: Uttar Pradesh"censusindia.gov.inRegistrar General and Census Commissioner of India। ২০১১। 
  11. "Table C-16 Population by Mother Tongue: Uttar Pradesh"www.censusindia.gov.inRegistrar General and Census Commissioner of India 
  12. Official Site ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে
  13. Ministry of Panchayati Raj (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme" (পিডিএফ)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  14. "Census of India Website : Office of the Registrar General & Census Commissioner, India"www.censusindia.gov.in