গালিমপুর হত্যাকাণ্ড

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত হত্যাকাণ্ড
(গালিমপুর গণহত্যা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

গালিমপুর গণহত্যা হচ্ছে ২০শে মে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সিলেট জেলার গালিমপুর গ্রামের হিন্দু জনগণের উপর সংগঠিত একটি হত্যাকাণ্ড।[][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে]

গালিমপুর হত্যাকাণ্ড
গালিমপুর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
গালিমপুর হত্যাকাণ্ড
২৪°৩৯′৫৫″ উত্তর ৯১°৩৮′৫৭″ পূর্ব / ২৪.৬৬৫২৮° উত্তর ৯১.৬৪৯১৭° পূর্ব / 24.66528; 91.64917
স্থানগালিমপুর, সিলেট, বাংলাদেশ
তারিখ২০ মে, ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০)
লক্ষ্যবাঙ্গালী হিন্দু
হামলার ধরনগণহত্যা
ব্যবহৃত অস্ত্ররাইফেল
নিহত৩৩
হামলাকারী দলপাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার

পটভূমি

সম্পাদনা

গালিমপুর গ্রামটি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। ১৮ মে ১৯৭১ সালে, ফসল কাটা নিয়ে পার্শ্ববর্তী বল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দাদের ঝগরা বেঁধে যায়। উভয় গ্রামবাসীকে একটি গ্রাম্য সালিশে বসিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯ মে সকালবেলা, পার্শ্ববর্তী ফাজিলপুর গ্রামের মদরিছ আলী তার সহচরদের নিয়ে গালিমপুরে আসে। সে গ্রামবাসীদের কাছে বর্ণনা করে যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন শেরপুরে ক্যাম্প করেছে এবং এই বিবাদ সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তাই বিপুল পরিমাণ টাকা দিলে শুধুমাত্র তখনই গালিমপুর গ্রামবাসীদের রক্ষা করা যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে গালিমপুর গ্রামবাসীদের কাছে থেকে জোড় করে দুই হাজার পাঁচশত রুপি আদায় করা হয়।[]

হত্যাকাণ্ড

সম্পাদনা

২০ মে বিকালবেলা, প্রায় ২টা হবে, পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী গোয়ালাবাজারের রাস্তা দিয়ে বল্লবপুর হয়ে গালিমপুর গ্রামে এসে প্রবেশ করে। স্থানীয় রাজাকার আব্দুল আহাদ চৌধুরী এবং কালা মৌলভী, শেরপুরের একজন মাদ্রাসা শিক্ষক তাদের পরিচালনা করে নিয়ে যায়।[] প্রবেশের সময় তারা ছয়জন গ্রামবাসীকে ঘিরে ফেলে এবং গুলি করে তাদের হত্যা করে।[] তাদেরকে পরবর্তীতে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছে কবর দেয়া হয়। যখন গ্রামবাসীরা তাদের জান নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে, তখন পাকিস্তানি হানাদাররা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে চার কিশোর সহ ২৬ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।[] অতঃপর তারা গ্রামে সোনা, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা সহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। শেষে তারা গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এই গ্রামের দুইজন নারীকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।[][][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে] দুই থেকে তিন ঘণ্টার ভিতরে গ্রামের একশত এর অধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

পরিণাম

সম্পাদনা

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, এমএজি ওসমানী গালিমপুর গ্রাম পরিদর্শনে আসেন। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে তিনি রিলিফের দুই হাজার রুপি এবং ১৪টি ঢেউতোলা লোহার পাত প্রদান করেন। তিনি নিজেই গ্রামবাসীদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য তিনি হস্তচালিত তাঁত শিল্প স্থাপনেরও পরিকল্পনা করেন। সমবায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি দুটি তাঁতকল এবং দশ হাজার রুপি মূলধনের ব্যবস্থা করে দেন। শহীদদের স্মরণে তিনি একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দেন।[] ২০০০ সালে, এমপি শাহ আজিজুর রহমানের অর্থায়নে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "৩৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল হানাদাররা"Samakal। মে ২০, ২০১১। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১২, ২০১২ 
  2. Mohammad, Tajul (ফেব্রুয়ারি ২০০৫) [1989]। সিলেটে গণহত্যা [Genocide in Sylhet] (Revised 2nd সংস্করণ)। Dhaka: Sahitya Prakash। পৃষ্ঠা 54-55। আইএসবিএন 984-465-416-5 
  3. "কাল গালিমপুর গণহত্যা দিবস"Samakal। ১৯ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা