গহের আলী (জন্ম-১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ), রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের মহাদেবপুর উপজেলার বলিহার সেতু থেকে খোর্দ্দ নারায়ণপুর সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে তিনি ১২০০০ তালের চারা লাগিয়েছিলেন। এর জন্য তিনি ২০০৯ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেন।[১][২]

গহের আলী
জন্ম১৯০২
মৃত্যু২৭ ডিসেম্বর ২০১০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পেশাভিক্ষাবৃত্তি
পরিচিতির কারণবৃক্ষ প্রেমী
সন্তান৪ জন

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি সম্পাদনা

গহের আলী ১৯০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার শিকারপুর নামক গ্রামে তিনি বসবাস করতেন। তার দুইজন ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে।[৩][৪]

তালের সাম্রাজ্য সম্পাদনা

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের নিরীহ গরীব গহের আলী তার জীবন ও সংসার চালাতে সারা দিন অন্যের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষার পাশাপাশি বাড়ী বাড়ী থেকে তালের আঁটি চেয়ে নিতেন। সারাদিন পরিশ্রমের পর সে আটি গুলি নিয়ে এসে রাজশাহী-নওগাঁর মহাসড়কের বেইলী ব্রীজ (বলিহার সেতু) থেকে উত্তর দিকে খোর্দ্দ নারায়নপুর ব্রীজ পর্যন্ত ২ কি.মি. রাস্তার দুই পার্শ্বে এবং সরকারী শাখা রাস্তার দুইধারে এবং সরকারী স্কুল ঈদগাহ ইত্যাদি স্থানে পুতে রাখতেন।[৪] গাছ গজিয়ে উঠার পর দিনের পরিশ্রম শেষে এসে পানি দিতেন, রক্ষনাবেক্ষন ও পরিচর্যা করতেন। বিগত ২৪ বছর ধরে ভিক্ষার পাশাপাশি এটায় তার ছিল নিত্য দিনের কর্মসুচী। এর ফলে গজে উঠা গাছ গুলি ইতিমধ্যেই বড় হয়ে উঠে ৩০/৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বা তাল গাছে ভরে গেছে ওই অংশের রাস্তার দুই ধার। তিনি প্রায় ১৮ হাজারেরও বেশি তালগাছ লাগিয়েছেন।[১][৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

গহের আলীর এমন কর্মকাণ্ডে সাদা মনের মানুষের জন্য ইয়াছিন আলী নামের এক ব্যক্তি এটিএন বাংলায় আবেদন করলে এটিএন বাংলার নিউজ অপারেশান মুন্নী সাহা ও নওগাঁ প্রতিনিধি রায়হান আলম সাথে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করলে সরকার সহ সকলের দৃষ্টি পড়ে তার মহান কর্মকাণ্ডের দিকে। পরে তার কর্মকাণ্ড ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে ও দেখান হয়। সেখান থেকে ২ লাখ টাকা ও ক্রেষ্ট পান। পরিবারে তার স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসে। তালবোরু গহের আলী ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি নিরবে এক মহান কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োগ করলেও চান নি তার স্বীকৃতি। কিন্তু এ গুনীজনকে তার যথাযথ সম্মান দিতে সরকার তাকে প্রদান করেন (২ ভরি স্বর্নের) পরিবেশ পদক ২০০৯ ও ২৫ হাজার টাকা।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।[৩][৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৮ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০ 
  2. তন্ময় ভৌমিক (২০ মার্চ ২০১৭)। "নিয়ামতপুরে সারিবদ্ধ শত শত তাল গাছ"ইত্তেফাক। ২০২০-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০ 
  3. "পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত গহের আলী আর নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. মুহম্মদ আজাদ, আবুল কালাম (৭ আগস্ট ২০১৭)। "'গহের আলীর তাল সাম্রাজ্যে' পড়বে কুঠারের আঘাত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০ 
  5. "প্রকৃতিময় হোক গতিময় জীবন"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০