গরুবাথান

পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার গোরুবাথান সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম

গোরুবাথান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কালিম্পং জেলার একটি সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লক। গরুবাথান তার অনিন্দ্য সুন্দর ভূ-দৃশ্য, নদী, পাহাড়, বন এবং চা বাগানের জন্য পরিচিত যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পূর্বদিকের পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটান, উত্তরে সিকিম রাজ্য, রাচেলা রেঞ্জের ঘন জঙ্গল, পশ্চিমে কালিম্পং ব্লক ১ ও ২ এবং দক্ষিণ খাতে জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তৃত সমভূমি অঞ্চল নিয়ে গরুবাথান গঠিত। জনসাধারণের আয়ের প্রধান উৎস হল ফসলাদি যেমন চা, এরিকা বাদাম, বড় এলাচ, ঝাড়ু, আদা, ফলমূল এবং শাকসবজি।[৩]

গরুবাথান
সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লক
গরুবাথান পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
গরুবাথান
গরুবাথান
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৬°৫৮′ উত্তর ৮৮°৪২′ পূর্ব / ২৬.৯৭° উত্তর ৮৮.৭০° পূর্ব / 26.97; 88.70
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাকালিম্পং
উচ্চতা৪১৭ মিটার (১,৩৬৮ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৬০,৬৬৩ (২,০১১ সালের জনগননা অনুসারে)
ভাষা
 • সরকারীবাংলা এবং নেপালি[১][২]
 • অতিরিক্ত সরকারীইংরেজি[১]
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
লোকসভা নির্বাচনক্ষেত্রদার্জিলিং
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্রকালিম্পং

ইতিহাস সম্পাদনা

গরুবাথানের নিজস্ব একটি অনন্য ইতিহাস রয়েছে। একসময় এই জায়গাটি লেপচা রাজারা শাসন করতেন। গরুবাথানে গেব্বো আচিয়ক নামে এক লেপচা রাজা ছিলেন, তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গেরুবাথানে লুংসিওলের চিয়াখুং দারায়। ডালিম বস্তির একটি পাহাড়ের চূড়ায় রাজা গেব্বো আচিয়ক নির্মিত ডালিম দুর্গর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্থানটি ঐতিহ্য স্থান হিসাবে ঘোষণা করেছে। ‘গোরুবাথান’ নামকরণ কীভাবে হয়েছিল তা এখনও বিতর্কিত। তবে, আগেকার সময়ে এই অঞ্চলের খোলা সমতল জমিতে বিশাল চারণভূমি এবং বিশাল সংখ্যায় গবাদি পশুপালন করার কারণে নিশ্চয়ই স্থানীয় লোকেরা নেপালি ভাষায় জায়গাটিকে গোরুবাথান হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কেউ কেউ বলেন যে, পূর্বের যুগে এই জায়গাগুলিতে গুরুদের (পুরোহিত) আধিপত্য ছিল, তাদের দেবতা এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির কারণে, এবং পরবর্তীকালে এই অঞ্চলকে গুরুবাথানকে বলে ডাকতে শুরু করা হয়। এটাও বলা হয় যে, ভুটান থেকে আসা রাখালেরা কালিম্পং হাট বাজারের জন্য প্রচুর পরিমাণে গরু সরবরাহ করত। তারা একদিনের জন্য বর্তমান চেল নদীর তীরে সোমবারে বাজারে থাকত। সেই গরুগুলি ফাগুর ওপর অংশে এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলে বিস্তৃত চারণ অঞ্চলে চরে বেড়াত। এভাবেই জায়গাটির নাম গরুবাথান (গরুর পাল) হয়েছিল।

ভূগোল সম্পাদনা

গরুবাথান ২৬°৫৮′ উত্তর ৮৮°৪২′ পূর্ব / ২৬.৯৭° উত্তর ৮৮.৭০° পূর্ব / 26.97; 88.70 অবস্থিত।[৪] এর গড় উচ্চতা হল ৪১৭  মিটার (১,৩৬৮  ফুট)। এর চারদিক ঘন বনাঞ্চল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানে আছে নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান। এখানকার জলবায়ু মাঝারি। এখানে গ্রীষ্মে খুব বেশি গরম পড়ে না এবং শীতের সময়ে খুব বেশি ঠাণ্ডাও থাকে না।

প্রশাসন সম্পাদনা

গরুবাথান কালিম্পং জেলার একটি সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লক। গরুবাথান ব্লক ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল ডালিম, গরুবাথান ১, গরুবাথান ২, পাতেঙ্গোদক, টোডিট্যাংটা, কুমাই, পোখরেবং, সামসিং, অহল্যা, নিম এবং রঙ্গো। এই ব্লকে দুটি থানা রয়েছে: একটি গরুবাথান ও অপরটি জলঢাকা। এই ব্লকের সদর দফতর ফাগুতে। গরুবাথানে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং সিভিল জজ আদালত রয়েছে। এই দুটি বিভাগ ২০০৫ সাল থেকে চালু আছে।

শিক্ষা সম্পাদনা

কিছুদিন যাবৎ, গরুবাথান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। এখানে আছে গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজ, স্নাতক স্তরে পড়াশুনো করার জন্য। এছাড়াও এখানে সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে আছে জুধাবির হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল এবং অ্যাম্বিওক হাই স্কুল। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিও এই এলাকায় উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে আসছে।

সোমবারে বাজার সম্পাদনা

গরুবাথানে কেবল একটি এবং একমাত্র শহর হল সোমবারে বাজার। এটি চেল নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এখানে প্রতি সোমবার সাপ্তাহিক বাজারের আয়োজন করা হয়। 'পশ্চিমবঙ্গ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা'র একটি তথ্যে সোমবারে বাজার প্রতিষ্ঠার বছর হিসাবে ১৯০৫ সালকে উল্লেখ করা হয়েছে। শহরটি জেলার অন্যান্য অংশের সঙ্গে রাস্তা দিয়ে ভালভাবে সংযুক্ত। এটি কালিম্পং শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ি থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নিকটতম রেলস্টেশনটি হল নতুন মাল জংশন স্টেশন এবং নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন। এই স্টেশন দুটি গরুবাথান থেকে যথাক্রমে ১৫  কিলোমিটার এবং ৬৫  কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Fact and Figures"www.wb.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৯ 
  2. "52nd REPORT OF THE COMMISSIONER FOR LINGUISTIC MINORITIES IN INDIA" (পিডিএফ)nclm.nic.inMinistry of Minority Affairs। পৃষ্ঠা 85। ২৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৯ 
  3. http://www.wbdmd.gov.in/writereaddata/uploaded/DP/Disaster%20Management%20Plan%20of%20KALIMPONG.pdf
  4. Falling Rain Genomics, Inc - Gorubathan