গদর বন্দর
গদর বন্দর আরব সাগরের তীরে গদর শহরে অবস্থিত। এটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত। বন্দরটি গভীর জলের বন্দর। বন্দরটি নির্মাণে সহযোগিতা করছে পাকিস্তান সরকারকে চীন। এই বন্দরটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর এর অংশ। এছাড়া বন্দটি থেকে চীনে মধ্যপাচ্যের নিকটস্থ হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক।[১] এটি তুর্বতের ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ইরানের সিস্তন ও বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার বন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার (১১০ মাইল) পূর্ব দিকে অবস্থিত।
গদর বন্দর | |
---|---|
অবস্থান | |
অবস্থান | গদর, বেলুচিস্তান, পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ২৫°০৭′ উত্তর ৬১°২০′ পূর্ব / ২৫.১১° উত্তর ৬১.৩৩° পূর্ব |
বিস্তারিত | |
চালু |
|
পরিচালনা করে | চীন ওভারসী পোর্ট হ্যান্ডেলিং কম্পানি (২০১৬-২০৫৯) পাকিস্তান সামুদ্রিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় (পাকিস্তান) (২০৬০-এর পরে) |
পোতাশ্রয়ের ধরন | প্রকৃতিক সমুদ্র বন্দর |
জমির আয়তন | ২,২৯২ একর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল |
উপলব্ধ নোঙরের স্থান |
|
জাহাজের ধরন |
|
গভীর জলের সমুদ্র বন্দর হতে গদরের সম্ভাবনা প্রথম ১৯৫৪ সালে উল্লেখ করা হয়েছিল, যদিও শহরটি তখন ওমানী রাজ্যের অধীনে ছিল।[২] পারভেজ মোশাররফের শাসনকালে $২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে খরচে চার বছরের নির্মাণ কাজের পরে বন্দরটির উদ্বোধন করার আগে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা উপলব্ধি করা হয়নি।[৩]
২০১৫ সালে, ঘোষণা করা হয়েছিল যে সিপিইসি-এর অধীনে $১.৬২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বন্দরের আরও উন্নয়ন হবে,[৪] উত্তর পাকিস্তান ও পশ্চিমাঞ্চলীয় চীনকে গভীর জলের সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে।[৫] এই বন্দরটি একটি ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সুবিধার স্থান, যা $২.৫ বিলিয়ন ডলারের বৃহত্তর ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের গদর-নওয়াবশাহ বিভাগের অংশ হিসাবে নির্মিত হবে।[৬] গদর বিশেষঅর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে জুন ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, যা ২,২৯২ একর জমিতে গদর বন্দরের পাশে অবস্থিত।[৭] ২০১৫ সালের শেষের দিকে, বন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০৫৯ সাল পর্যন্ত ৪৩ বছর ধরে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজারা দেওয়া হয়।[৮]
১৪ নভেম্বর ২০১৬ সালে গদর বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়, যখন এটি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহম্মদ নওয়াজ শরীফ উদ্বোধন করেন; পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা জেনারেল রাহেল শরীফকে নওয়াজ শরীফের প্রথম সফরে দেখা যায়।[৯]
অবস্থান
সম্পাদনাবন্দরটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গদর শহরে অবস্থিত। দেশের বৃহত্তম শহর করাচি থেকে এর দূরত্ব ৫৩৩ কিলোমিটার এবং হরান বডার থেকে ১২০ কিমি দূরে অবস্থিত। মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্ঠিত দেশগুলি বন্দর ব্যবহার করবে যা বন্দরটির গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে। এটি ওমান থেকে ৩৮০ কিলোমিটার (২৪০ মাইল) দূরে অবস্থিত এবং পারস্য উপসাগরের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তেল শপিং লেনগুলির কাছে অবস্থিত। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিশ্বের সর্বাধিক প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রমাণিত তেলের ভাণ্ডার রয়েছে। এটি হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলির পাশাপাশি আফগানিস্তান মত স্থলবেষ্ঠিত দেশগুলির কাছে নিকটতম উষ্ণ জলের সমুদ্র বন্দর।[১০]
এই বন্দরটি আরব সাগরের উপকূলের একটি পাথুরে আউটক্রপপিংয়ের উপর অবস্থিত যা পাকিস্তানের প্রাকৃতিক উপকূল থেকে বেরিয়ে আসা প্রাকৃতিক হ্যামারহেড আকৃতির উপদ্বীপের অংশ।[১১] গদর প্রোমেন্টরি নামে পরিচিত উপদ্বীপের মধ্যে রয়েছে ৫৬০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানো পাথুরে আউটক্রপপিং যা ২.৫ মাইল প্রশস্ত প্রস্থ। উপদ্বীপটি পাকিস্তানের তীরে একটি সংকীর্ণ এবং বালুকাময় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যোজক দ্বারা সংযুক্ত।[১২] যোজক পূর্বদিকে গভীর জলের ডেমি জিরার আশ্রয়স্থল থেকে পশ্চিমে অগভীর পদি জিরড় উপসাগরকে পৃথক করে।
নির্মাণ
সম্পাদনাগদর বন্দরটি দুটি পর্যায়ে উন্নীত করা হচ্ছে: প্রথম ধাপে তিনটি বহুমুখী বার্থ এবং সংশ্লিষ্ট বন্দর অবকাঠামো এবং বন্দর পরিচালনা সরঞ্জামাদি নির্মাণ করা হয়েছে এবং ডিসেম্বর ২০০৬ সালে এটি সম্পন্ন হয়েছিল, তবে ২০ মার্চ ২০০৭ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল।[১৩]
প্রথম ধাপ (২০০২-২০০৬)
সম্পাদনা২০০২ সালে গদর বন্দরে নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল এবং ২০০৭ সালে উদ্বোধন করার আগে ২০০৬ সালে বন্দরের প্রথম ধাপের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।[১৪]
- বার্থসমূহের : ৩ টি বহুমুখী বার্থ (ক্ষমতা: ৩০,০০০ ডেডওয়েট টনের [ডিডব্লিউটি] বাল্ক বাহক এবং ২৫,০০০ ডিডব্লিউটি-এর কন্টেইনার জাহাজ)[১৫]
- বার্থসমূহের দৈর্ঘ্য: মোট ৬০২ মিটার।
- প্রবেশ পথ বা চ্যানেল: ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১২.৫ মিটার গভীর।
- ঘূর্ণন বেসিন: ৪৫০ মি ব্যাস।
- পরিষেবামূলক বার্থ: ১০০ মিটারের একটি
- সম্পর্কিত বন্দর অবকাঠামো এবং হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম, পাইলট নৌকা, টাগ, জরিপ জাহাজ ইত্যাদি
- $২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে নির্মিত।[৩]
দ্বিতীয় ধাপ (চলমান)
সম্পাদনাসিপিইসি এবং অন্যান্য সহায়ক প্রকল্পের অধীনে পরিকল্পিত উন্নতির অংশ হিসেবে নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রকল্প মোট $১.০২ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।[১৬] ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, পাকিস্তান সেনেট গদর বন্দরের দ্বিতীয় পর্বের বেশিরভাগ প্রকল্পের অগ্রগতির ধীর গতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কারণ বেশিরভাগ প্রকল্পের জন্য নির্মাণ শুরু হয়নি।[১৭]
- ৪ টি কন্টেইনার বার্থ নির্মাণ ৩.২ কিলোমিটার উপকূল বরাবর
- ১ টি বাল্ক পণ্য টার্মিনাল (ক্ষমতা: ১,০০,০০০ ডিডব্লিউটি জাহাজ)
- ১ টি শস্য টার্মিনাল
- ১ রো-রো টার্মিনাল
- ২ তেল টার্মিনাল (ক্ষমতা: ২,০০,০০০ ডিডব্লিউটি জাহাজ)
- চ্যানেল: ১৪.৫ মি গভীরতার জন্য ড্রেজিং
- ৬ লেনের ইস্ট বে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বন্দরকে মক্রান উপকূলীয় হাইওয়েতে সংযোগ করার জন্য
- নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বন্দরের কাছাকাছি নির্মিত হবে
- প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভাসমান তরল প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল
- বন্দরের নিকটবর্তী ২,২৯২ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ
- ডেসিলিনেশন কেন্দ্র
- ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পূর্ণ কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র
দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা
সম্পাদনা- ২০ মিটার গভীরতার জন্য চ্যানেলের ড্রেজিং
- ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৫০ টি বার্থ নির্মিত হবে
- প্রতি বছর ৪০০ মিলিয়ন টন পণ্য পরিচালনা করার ক্ষমতা
ভবিষ্যতে পরিবেশগত প্রভাব
সম্পাদনাগদর বন্দরের সম্প্রসারণের আলোকে-এ অঞ্চলের পরিবেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পরার (এসজিওএস) বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় "লিড ফেলো" স্টাডি গ্রুপের একটি প্রতিবেদন অভিযোগ করা হয়েছে যে, একটি বন্দরের সম্প্রসারণ সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পরা এবং অন্যান্য মানব শিল্প বর্জ্য সমুদ্রে ঢোকার মত বিষয়গুলি সামুদ্রিক পরিবেশের ভবিষ্যত ক্ষতির দিকে পরিচালিত করবে। এছাড়া এও অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তানএের আইন সামুদ্রিক দূষণের ক্ষেত্রে দুর্বল জরিমানা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের অভাব রয়েছে।[১৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://bangla.www.anandabazar.com/2015/03/15%7Caccessdate[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Gwadar port: 'history-making milestones'"। Dawn। ১৪ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ Walsh, Declan (৩১ জানুয়ারি ২০১৩)। "Chinese Company Will Run Strategic Pakistani Port"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৬।
China paid for 75 percent of the $248 million construction costs,
- ↑ "Chinese firm to develop SEZ in Gwadar"। China Daily। ১১ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৬।
China is expected to invest $1.62 billion in the Gwadar project, including construction of an expressway linking the harbor and coastline, a rail link, breakwater and other nine projects expected to be completed in three to five years.
- ↑ "Industrial potential: Deep sea port in Gwadar would turn things around"। The Express Tribune। ১৭ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "China to build $2.5 billion worth LNG terminal, gas pipeline in Pakistan"। Deccan Chronicle। ১০ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৬।
- ↑ "Construction of industrial free zone in Gwadar begins"। Express Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৬।
- ↑ "Pakistan hands over 2000 acres to China in Gwadar port city"। indianexpress.com। ১২ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Dawn.com (১৩ নভেম্বর ২০১৬)। "'Today marks dawn of new era': CPEC dreams come true as Gwadar port goes operational"। dawn.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "Pakistan launches strategic port"। BBC News। ২০ মার্চ ২০০৭।
- ↑ "Gwadar Port: Gwadar Port Authority"। ২৩ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ Persian Gulf Pilot: Comprising the Persian Gulf, the Gulf of Omán and the Makrán Coast। https://books.google.com/books?id=42sDAAAAYAAJ&dq=gwadar+peninsula+sandy&source=gbs_navlinks_s: Pilot Guides। ১৯২০।
- ↑ Shahid, Saleem (২১ মার্চ ২০০৭)। "Gwadar Port inaugurated: Plan for second port in Balochistan at Sonmiani"। dawn.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "PORT PROFILE CURRENT PORT INFRASTRUCTURE"। Gwadar Port Authority। ২৩ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৬।
- ↑ "Gwadar Port to have 100 berths by 2045: minister"। The News। ১৫ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৬।
The three currently functional multipurpose berths of the deep-sea-port have a capacity to handle carriers of 30,000 deadweight tonnage (DWT) and to handle container vessels of 25,000 DWT.
- ↑ "Zhuhai Port scores big with deal in Pakistan"। China Daily। ৩০ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৬।
- ↑ https://tribune.com.pk/story/1794528/2-senate-body-concerned-slow-pace-work/
- ↑ The Tasman Spirit Oil Spill in Retrospect: Salvaging Lessons from the Disaster : a Report of the LEAD Fellows' Study Group on the Oil Spill (SGOS).। Lead, Pakistan। ১ জানুয়ারি ২০০৫। আইএসবিএন 978-969-8529-26-0।