খাজা খিজির উৎসব

একটি ধর্মীয় উৎসব

খোজা খিজির উৎসব বা বেরা ভাসান উৎসব হল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অনুষ্ঠিত নবাবী আমলের একটি উৎসব। এটি মূলত জলদেবতা 'খোজা খিজির'-এর স্মরণোৎসব, যা মোগল আমলে নবাবদের পোষকতায় চালু হয়েছিল। অতীতের বাঙালী হিন্দু সদাগরদের বাণিজ্যযাত্রার সময়ের নানারকম উৎসব-অনুষ্ঠানের রীতিনীতিও এতে মিশেছিল।[১]

বিবরণ সম্পাদনা

প্রতিবছর ভাদ্রমাসের শেষ বৃহস্পতিবার ভাগীরথী গঙ্গায় বহুবর্ণের দীপালোকে সাজানো বেরার ভেলা ও জলযান ভাসিয়ে এই উৎসব পালিত হয়।[২] হাজারদুয়ারী প্রাসাদের সামনে তোপখানা থেকে কামানদাগা হলে ভেলার দড়ির বাঁধন কেটে দেওয়া হয়। জলযানগুলি মন্থর গতিতে চলতে থাকে এবং তার তালে-তালে বাজনা বাজতে থাকে। বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে এগুলি নির্মিত হয়। মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জ এই জলযানের একটি বড় নির্মাণকেন্দ্র।[১]

নবাবী আমলের উদযাপন সম্পাদনা

নবাবী আমলে কলাগাছ জলে ভাসিয়ে তার উপর বাঁশ-বাখারি-ছেঁচা-চাটাই দিয়ে মিনার, তোরণ, গম্বুজ, নিশান, দুর্গ ইত্যাদির কাঠামো তৈরী করে ভাসানো হত৷ অভ্রের পাত দিয়ে তৈরী আলোতে কোরানের বাণী, মসজিদ, গাছপালা ও নানারকম মূর্তি চিত্রিত করার প্রথা ছিল। রূপালী আচ্ছাদনে আবৃত কৃত্রিম ঝাড়লন্ঠন জলযানে ঝুলিয়ে দেওয়া হত৷ মুর্শিদাবাদের লালবাগ থেকে মহীনগর পর্যন্ত গঙ্গাতীর আলোকময় হয়ে উঠত। নানাবিধ নাচগানের ব্যবস্থা থাকত। নবাবরা তাদের সভাসদ সহ প্রজাদের নিয়ে আতসবাজির প্রদর্শনী উপভোগ করতেন।[১] নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদের এই উৎসব উদযাপন করেছেন।[২][৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ৬৩-৬৭
  2. আহমদ খান, ড. মুইন উদ-দীন (২০০৭)। বাংলায় ফরায়েজী আন্দোলনের ইতিহাস। কিবরিয়া ভূঁইয়া, ড. গোলাম কর্তৃক অনূদিত। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৪৭। 
  3. সেলিম, গোলাম হোসেন। সিয়ার উল মুতাখখিরিন। ২য় খণ্ড। পৃষ্ঠা ৫৩৩।