যে পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া[টীকা ১] বলে। অথবা ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হলো ক্রিয়া।ক্রিয়াপদের আরেকটি নাম হলো আখ্যাত বা আখ্যাতিক পদ।[][]

ক্রিয়াপদের গঠন

ক্রিয়ামূল তথা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। []সংক্ষেপে ধাতু+বিভক্তি = ক্রিয়াপদ

যেমন: √পড়্+এ=পড়ে

অনুক্ত ক্রিয়াপদ

যে বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে তাকে অনুক্ত ক্রিয়া বলে।[]

যেমন "ইনি আমার ভাই"(হন)

"তোমার মা কেমন?"(আছেন)

উদাহরণ দুটিতে যথাক্রমে 'হন' ও 'আছেন' উহ্য আছে।[]

ক্রিয়াপদের প্রকারভেদ

ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ

  • সমাপিকা ক্রিয়া
  • অসমাপিকা ক্রিয়া
  • কর্মপদ গ্রহণের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদ চার প্রকার।তথা:
    • অকর্মক ক্রিয়া
    • সকর্মক ক্রিয়া
    • দ্বিকর্মক ক্রিয়া
    • প্রযোজক ক্রিয়া
        • গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে ক্রিয়াপদ চার প্রকার। যথা:
  • একক ক্রিয়া
  • যুক্ত ক্রিয়া - বিশেষ্য ,বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে কর্‌,দি,হ্‌,পা,কাট্‌,মার্‌,ফেল্‌ ইত্যাদি মৌলিকধাতু নিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠন করে তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে । যেমন- উত্তর দিল , সাঁতার কাটে
  • যৌগিক ক্রিয়া - একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে । যেমন- সে বসিয়া পড়িল ।
  • মিশ্র ক্রিয়া[]

সমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়াপদ বাক্যকে পরিপূর্ণ করে এবং বাক্যের অর্থকে সুস্পষ্ট করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন:

 
ক্রিয়াপদের উদাহরণ
  • আমি বাড়ি যাব
  • আমরা সন্ধ্যায় পড়তে বসব

অসমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

  • আমরা হাত-মুখ ধুয়ে...
  • প্রভাতে সূর্য উঠলে...

অসমাপিকা ক্রিয়া ৩ প্রকার ১.ভূত অসমাপিকা ক্রিয়া ২.ভাবী অসমাপিকা ক্রিয়া ৩.শর্ত অসমাপিকা ক্রিয়া

অকর্মক

যে বাক্যে একটিও কর্ম থাকে না তাকে অকর্মক বলে। যেমন:

  • সে হাসছে
  • রমা নাচছে

এখানে 'হাসছে''নাচছে' ক্রিয়ার কর্ম নেই , আবার এদের ক্রিয়া ধারণের ক্ষমতাও নেই ,তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া।

সকর্মক

যে বাক্যে একটি কর্ম থাকে তাকে সকর্মক বলে।যেমন:

  • আমি ভাত খাচ্ছি
  • সে বই পড়ছে

এখানে কী খাচ্ছি আর কী পড়ছে' তা বলা রয়েছে। কাজেই বাক্য দুটিতে খাচ্ছি এবং পড়ছে সকর্মক ক্রিয়া।

দ্বিকর্মক

যে বাক্যে দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক বলা হয়।

এক্ষেত্রে, ববস্তুবাচক কর্মপদটি মুখ্যকর্ম, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদটি গৌণ কর্ম।

  • শিক্ষক ছাত্রদের(গৌণ কর্ম) বাংলা(মুখ্যকর্ম) পড়াচ্ছেন।
  • বাবা আমাকে(গৌণ কর্ম) একটি কলম(মুখ্যকর্ম) কিনে দিয়েছেন

প্রযোজক ক্রিয়া

যে ক্রিয়া অন্যের দ্বারা চালিত হয় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।[] যেমন

  • মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
  • সাপুড়ে সাপ খেলাচ্ছে।

এখানে "মা" এবং "সাপুড়ে" প্রযোজক কর্তা, "শিশু" ও "সাপ" প্রযোজ্য কর্তা। "চাঁদ দেখাচ্ছেন" ও "খেলাচ্ছে" প্রযোজক ক্রিয়া।


তথ্যসূত্র

  1. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৯৪২)। ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণকলকাতা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৫২। 
  2. amarbarta24.com। "ক্রিয়াপদের আরেক নাম ছিল 'আখ্যাত'"amarbarta24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৮ 
  3. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ। ২-১৯৮৩। পৃষ্ঠা ১১২।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. "নবম ও দশম শ্রেণির পড়াশোনা"jjdin। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৮ 
  5. প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ২০১৭(২য় সংস্করণ)। পৃষ্ঠা ১৮২। আইএসবিএন 984-07-5634-6  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. লিটন, মোস্তাফিজুর রহমান। "বাংলা ২য় পত্র"www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৮ 

টীকা

  1. বানান বিশ্লেষণ:ক্+র+ই+য়+আ । বুৎপত্তি সং. √ কৃ + অ + আ