কোহিমার যুদ্ধ

যুদ্ধ

কোহিমার যুদ্ধ (Battle of Kohima) ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিসেনার (Japanese U Go offensive) ভারত-এর সাথে যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ৷ ১৯৪৪ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের কোহিমায় ৪ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল৷ ৩ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাপানি সেনা কোহিমা পাহাড় (Kohima ridge) দখল করতে চেষ্টা করে৷ এই পাহাড়ে থাকা পথেে ইম্ফলে থাকা ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীতে রসদ-পাতি পাঠানো হয়েছিল৷ ১৮ এপ্রিল থেকে তেরো মের মধ্যে নতুনভাবে আসা ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ইতিমধ্যে জাপানি সৈন্য দখল করা শহরসমূহ থেকে মুক্ত করতে প্রতি-আক্রমণ আরম্ভ করে৷ জাপানি সৈন্য কোহিমা পাহাড় থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয় কিন্তু কোহিমা-ইম্ফল বাটটি দখলে রাখে৷ ১৬ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সেনা অধিক পরাক্রমে জাপানি সৈন্যকে বাধা দিয়ে বাটটি মুক্ত করতে সক্ষম হয়৷ ২২ জুনের দিন কোহিমা এবং ইম্ফল থেকে ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ১০৯ নং মাইলস্টোন পাওয়ার পর এই যুদ্ধের অবসান ঘটে৷

কোহিমার যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: the Burma Campaign of the Second World War

কোহিমায় ব্রিটিশদের প্রতিরক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান গ্যারিসন পাহাড়ের যুদ্ধক্ষেত্র
তারিখ4 April – 22 June 1944
অবস্থান
ফলাফল Allied victory
বিবাদমান পক্ষ

যুক্তরাজ্য British Empire

জাপানের সাম্রাজ্য Japan
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
যুক্তরাজ্য Montagu Stopford জাপানের সাম্রাজ্য Kotoku Sato
শক্তি
at start:
approx. 1 Infantry Brigade 1500 men fit for duty
at end:
2 Infantry Divisions
1 "Chindit" Brigade
1 Motor Brigade
1 Infantry Division: 12,000–15,000 [১]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
4,064[২] 5,764–7,000,[২] mainly from starvation and disease[৩][৪]

কোহিমা যুদ্ধকে প্রায়শ ’পূর্বের স্টালিনগ্রাড’ ("Stalingrad of the East") বলে অভিহিত করা হয়৷[৫][৬] ২০১৩ সালে ব্রিটিশ ন্যাশনাল আর্মি সংগ্রহালয় (National Army Museum) কোহিমার যুদ্ধকে ’ব্রিটেইনের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ’ ("Britain's Greatest Battle") বলে আখ্যা দেয়৷[৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

জাপানের ভারত আক্রমণ (কোড নাম: অপারেশন U-Go), মণিপুরের ইম্ফলে বহর পেতে থাকা ব্রিটিশ সৈন্যের (British IV Corps) করা আক্রমণ ছিল৷ এই যুদ্ধর মূল উদ্দেশ্য ছিল মিত্রপক্ষের আক্রমণের পরিকল্পনাসমূহে ইতি টানা৷ জাপানের পঞ্চদশ সৈন্যবাহিনীর কমাণ্ডার জেনারেল রেনিয়া মোটাগুচ্চি এই পরিকল্পনাকে বিকাশ করে ভারত আক্রমণ করে ব্রিটিশ শাসনকে ওপরাবার সিদ্ধান্ত নেন৷[৮][Note ১] জাপানি সৈন্য ভারতের ভূমি নিজেদের দখলে আনতে পারলে জাপানি সৈন্যদের ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উৎসাহিত করারও পরিকল্পনা ছিল৷[১০] তাছাড়া ইম্ফলের চারপাশের শহরসমূহ জাপান দখল করলে আমেরিকা সেইসময় চীনের চিয়াং চাই শেক (Chiang Kai Shek) -এর সৈন্যদের দেওয়া সাহায্যটি বাধা পড়ত[১১][১২] এই যুক্তিসমূহের সব বিভাগেে পতিয়ন নিয়াই ভারত আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ১৯৪৪ সালের ৭ জানুয়ারীর দিন ইম্পেরিয়াল জেনারেল হেডকোয়ার্টারে (Imperial General Headquarters) গৃহীত হয়৷[১৩]

এই পরিকল্পনার একটা অংশ ছিল জাপানি ৩১তম ডিভিজনের সৈন্যবাহিনী (৫৮ নং রেজিমেন্ট, ১২৪ নং রেজিমেন্ট, ১৩৮ নং রেজিমেন্ট এবং ৩১তম মাউন্টেইন আর্টিলারী রেজিমেন্টে গঠিত)কে কোহিমা দখল করতে পাঠোনো এবং ইম্ফলের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া৷ মোটাগুচ্চি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সেইসময়ের মূল পরিচালনা কেন্দ্র ডিমাপুর পর্যন্ত ৩১ম ডিভিজনকে পাঠিয়ে কোহিমা বিজয়ের সুবিধা নেওয়ারও পরিকল্পনা করেন৷[১৪]

৩১ম ডিভিজনের কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কোটোকো সাটু (Kotoku Sato) তাঁকে দেওয়া ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি৷ তাঁকে পরিকল্পনার পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং কোহিমা বিজয় সম্পর্কে তিনি সন্দিহানও ছিলেন৷ তিনি ইতিমধ্যে সৈন্যবাহিনীকে বলেন যে তাঁদের সবার রোগগ্রস্ত হয়ে মৃত্যমুখে পড়ার সম্ভাবনাই অধিক৷[১৫] সাটুর সঙ্গে বিশালসংখ্যক জাপানি প্রধানের মোটাগুচ্চির সদ্ভাব ছিল না৷ [১৬]

পূর্বের ঘটনাসমূহ সম্পাদনা

 
কোহিমা যুদ্ধের ম্যাপ

১৯৪৪ সালের ১৫ মার্চে জাপানি সৈন্যের ৩১ম বিভাগ চিন্দউইন নদী পার হয়ে প্রায় ৬০ মাইলজোড়া (৯৭ কিমি) প্রতিবন্ধক (front) গঠন করে উত্তর-পশ্চিম দিকে মুখ করে অরণ্যের পথ দিয়ে এগোতে থাকে৷ [১৭]

স্মৃতিচারণ সম্পাদনা

 
কোহিমা যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের মৃত সৈনিকদের স্মৃতিতে ব্রিটিশ রাজ দ্বারা স্থাপিত যুদ্ধ-স্মারক

কোহিমা যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের মৃত সৈনিকদের যুদ্ধ-স্মারক পেটিকায় লিখিত আছে — "When you go home, tell them of us and say-For their tomorrow, we gave our today"

টিকা সম্পাদনা

  1. According to Julian Thompson, "To this day [in 2009] there is disagreement on whether or not Mutaguchi intended to stop at Imphal. He favoured pressing on into India, and with help from uprisings by Indian nationalist in India, throwing the British out. ... all very highly speculative ... A possible indicator of Mutaguchi's aspirations [was the inclusion of the INA]. The INA was ineffective in battle so Mutaguch's motive for saddling himself with seven thousand useless mouths could only have been to use them for propaganda on arrival in India".[৯]

তথ্যসূত্ৰ সম্পাদনা

  1. Allen 2000, p. 228.
  2. Allen 2000, p. 643.
  3. Rooney 1992, pp. 103–104.
  4. Allen 2000, pp. 313–314.
  5. Dougherty 2008, p. 159.
  6. Ritter 2017, p. 123
  7. "Britain's Greatest Battles"। National Army Museum। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  8. Allen 2000, pp. 154–155.
  9. Thompson 2010, p. 208.
  10. Allen Allen 2000, p. 154
  11. Keane 2010, p. 5
  12. "Burma Campaign: Seizing Imphal and Kohima In World War II"HistoryNet। ৬ ডিসেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. Allen 2000, pp.166–167
  14. Allen 2000, p. 285.
  15. Allen 2000, p. 232.
  16. Allen 2000, pp. 284–285.
  17. Allen 2000, p. 189.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা