কোতারো হোন্ডা

জাপানি পদার্থবিজ্ঞানী এবং ধাতুবিদ

কোতারো হোন্ডা (本多 光太郎, Honda Kōtarō; ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৭০ – ১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪) একজন জাপানি ধাতুবিদ এবং উদ্ভাবক, যিনি তার উদ্ভাবিত কেএস স্টিলের জন্য সুপরিচিত। জাপানের আইচি প্রশাসনিক অঞ্চলের ওকাজাকি শহরে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত কেএস ইস্পাত হলো চৌম্বক প্রতিরোধী এমনই এক ইস্পাত যা টংস্টেন-ইস্পাতের চেয়ে তিনগুণ বেশি চৌম্বকবল প্রতিরোধ করতে সক্ষম।[১] কেএস স্টীলের কেএস আদ্যক্ষর দুটি এসেছে কিচিই সুমিতোমো (Kichiei Sumitomo) এর আদ্যক্ষর থেকে। ইস্পাত এবং সংকর ধাতুর উপর কঠোর মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে ২৫০ ওয়েরস্টেড চৌম্বক-রোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ধাতুটির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছিল।[২]

কোতারো হোন্ডা
本多 光太郎
কোতারো হোন্ডা
জন্ম(১৮৭০-০২-২৩)২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭০
ওকাজাকি, জাপান
মৃত্যু১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪(1954-02-12) (বয়স ৮৩)
টোকিও, জাপান
সমাধিওকাজাকি, আইচি, জাপান
জাতীয়তাজাপানি
মাতৃশিক্ষায়তনটোকিও বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণকেএস ইস্পাত

হোন্ডার জন্ম ইয়াহাগি শহরে, যা বর্তমান ওকাজাকির অংশবিশেষ। টোকিও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির স্নাতক এই বিজ্ঞানী ছিলেন বিখ্যাত জাপানি পদার্থবিদ হানতারো নাগাওকার ছাত্র।

প্রধান যে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলোর মৌলিক গবেষণার উপর জাপানের শিল্প উন্নয়ন নির্ভরশীল সেই মৌলিক গবেষণাগুলোর মধ্যে ১৯১৭ সালে কেএস স্টিলের উপর এবং ১৯৩৪ সালে উন্নয়নকৃত কেএস স্টিলের উপর হোন্ডার পরিচালিত গবেষণাগুলোও রয়েছে, যে গবেষণাগুলো আবার এই বিজ্ঞানীর অবস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।[৩] পরবর্তীতে এনকেএস ইস্পাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি ইস্পাতের আরও উন্নতি ঘটান। জাপানের শিল্প-প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী তাইচি ওহনো যিনি টয়োটার উৎপাদন ব্যবস্থার জনক হিসেবে পরিচিত তিনি তার এক বইয়ে এনকেএস ইস্পাতকে এমন এক জাপানি উপকরণ হিসেবে হিসাবে উল্লেখ করেছেন যার বিকাশ জড়িত ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের সাথে।[৪]

১৯২২ সালে তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আগমন উপলক্ষে কোতারো হোন্ডা, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কেইচি আইচি এবং শিরোটা কুসাকাবে

শিক্ষাবিদ টোকিয়াৎসু হোজোর সাথে হোন্ডা একত্রে একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন, যেখানে সহায়তা করেছিলেন সুমিতোমো পরিবার।[২] পরে এই ইনস্টিটিউট নামকরণ করা হয় ধাতব পদার্থ গবেষণা ইনস্টিটিউট।[২] ১৯৩১ সালে তিনি তোহোকু ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। এখানে তিনি কয়েক বছর যাবৎ পদার্থবিজ্ঞান পড়ান।[৫]

চিবা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রতিষ্ঠায় (千葉工業大学) তিনি ১৯৪০ সাল থেকেপ অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সাল থেকে টোকিও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

১৯৩২ সালে হোন্ডা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।[৬] ১৯৩৭ সালে জাপানে যখন অর্ডার অফ কালচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সে সময় অর্ডার অফ কালচারে ভূষিত প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৩১ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের এলিয়ট ক্রেসন পদক লাভ করেন এবং ১৯৫১ সালে পার্সন অব কালচারাল মেরিট সম্মানে ভূষিত হন। মৃত্যুর পর তাকে অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সানের গ্র্যান্ড কর্ডন প্রদান কর হয়।

১৯৫৪ সালে টোকিওর বুঙ্কিওতে হোন্ডা জীবনাবসান হয় এবং ওকাজাকির মায়োজেন-জি মন্দিরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

জাপানের পেটেন্ট অফিস ১৯৮৫ সালের ১৮ই এপ্রিলে তাকে জাপানি দশজন মহান উদ্ভাবকের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৭]

ইংরেজি ভাষায় তার যেসব বই পাওয়া যায় সম্পাদনা

  • ম্যাগনেটিক প্রোপার্টিস অব ম্যাটার / কোতারো হোন্ডা (১৯২৮)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Japan Patent Office। "Japan Patent Office"www.jpo.go.jp। ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. Phillips, Glyn O. (২০১৮-১০-২৬)। Innovation and Technology Transfer in Japan and Europe: Industry-Academic Interactions (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9780429774546 
  3. Fofack, Hippolyte (২০০৮)। Technology Trap and Poverty Trap in Sub-saharan Africa। Washington, D.C.: World Bank Publications। পৃষ্ঠা 23। 
  4. Ohno, Taiichi, Toyota Production System: Beyond Large-Scale Production, March 1, 1988 আইএসবিএন ৮৫৭৩০৭১৭০২.
  5. Upadhyaya, G. S. (২০১৩)। Metal Science: Past, Present and Future। Trans Tech Publications Ltd। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন 9783038263814 
  6. Kotaro Honda - Nomination Database
  7. "Ten Japanese Great Inventors"। Japan Patent Office।