কৃষ্ণচন্দ্র দাশ
কৃষ্ণচন্দ্র দাশ (১৮৬৯-১৯৩৪) যিনি কে. সি. দাশ নামেও পরিচিত, একজন বাঙালি মিষ্টান্নবাদী,[১] বিশ শতকের গোড়ার দিকের সফল বাঙালি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী ছিলেন।[২] ১৮৬৯ সালে কলকাতার বাগবাজারে জন্মগ্রহণকারী কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন বাঙালি মিষ্টান্ন ও মিষ্টি উদ্ভাবক নবীনচন্দ্র দাশের একমাত্র পুত্র এবং উত্তরসূরি।[৩] কৃষ্ণচন্দ্র বৈজ্ঞানিক অন্বেষণের চেতনায় বহুমুখী উত্সাহী ছিলেন। তিনি একটি বৈদ্যুতিক তাঁত, সোডার ঝর্ণা যন্ত্র তৈরি করেন, এছাড়া হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণা এবং পূর্ব ও পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।[৪] ১৯৩০-এর দশকে কৃষ্ণচন্দ্র দাশ ভ্যাকুয়াম কোটায় ভরে রসগোল্লা বিক্রি করেন,[৫] যা পরে কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ও উত্তরসূরি সারদা চরণ দাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক কোম্পানি কে.সি দাশ প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা সারা ভারত জুড়ে জনপ্রিয় এবং প্রচার করা হয়।[৬]
কৃষ্ণচন্দ্র দাশ | |
---|---|
জন্ম | ১৮৬৯ |
মৃত্যু | ১৯৩৪ (বয়স ৬৫) বাগবাজার |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারত |
অন্যান্য নাম | কে.সি. দাশ |
পেশা | ব্যবসায়ী, মিষ্টান্ন, উদ্যোক্তা |
কর্মজীবন | ১৯০০-১৯৩৪ |
পূর্বসূরী | নবীনচন্দ্র দাশ |
উত্তরসূরী | সারদা চরণ দাশ |
আন্দোলন | বাংলা রেনেসাঁ |
দাম্পত্য সঙ্গী | শ্বেতাঙ্গীনি দেবী |
সন্তান | ৬ |
আত্মীয় | ভোলা ময়রা |
ঐতিহাসিক পটভূমি
সম্পাদনানবীনচন্দ্র দাশ তার একমাত্র পুত্র কৃষ্ণ চন্দ্র দাশের কাছে মিষ্টান্ন ব্যবসার ভার দেন। কৃষ্ণ পারিবারিক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি অনুসন্ধানী চেতনার পথ দেখিয়েছিলেন এবং এটিকে শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় মিষ্টান্ন হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।[৭]
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও যন্ত্রপাতির প্রতি অগাধ অনুরাগী কৃষ্ণচন্দ্র প্রথমে বাগবাজারে একটি যান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক দোকান দেন। তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বাংলা মিষ্টি কনফেকশনারির আধুনিকীকরণ এবং পুনর্নির্মাণের জন্য নতুন প্রযুক্তি বিকাশ করা।[৫] দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর মা খিরোদমণি দেবী বিজ্ঞান ও পরীক্ষার আলোকে নবীনচন্দ্র দাশের মিষ্টান্নকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে কৃষ্ণচন্দ্র তার বাবার মিষ্টান্নের দোকান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পারিবারিক ব্যবসায়ের প্রসার করতে নিজের নামে নিজস্ব উদ্ভাবনে কাজ করতে শুরু করেন। তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি দ্রুত সফলতার মুখ এবং তিনি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্য পান। সম্ভবত কে. সি. দাশের অগ্রণী প্রচেষ্টার ফলেই রসগোল্লা ব্যাপকভাবে ভারতের জাতীয় মিষ্টি হিসাবে বিবেচিত হয়।[৮][৯]
জীবন এবং পরিবার
সম্পাদনাপিতা কিংবদন্তি নোবীন ময়রার উত্তরাধিকারী হওয়ার পাশাপাশি, কৃষ্ণচন্দ্র তার মায়ের পরিবার থেকে একটি সুপরিচিত মিষ্টান্ন উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তাঁর মা খিরোদমনি দেবী ছিলেন ভোলানাথ দে’র নাতনী, ভোলানাথ দে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার ইতিহাসে "ভোলা ময়রা" নামে বেশি পরিচিত। "ভোলা ময়রা" কেবল পেশাদার মিষ্টান্ন হিসাবেই নয়, একজন দক্ষ কবি-সুরকার হিসাবেও বাঙালি লোককাহিনী এবং সংস্কৃতিতে স্থান করে নিয়েছেন। কৃষ্ণচন্দ্র, শ্বেতাঙ্গিনী দেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের পাঁচ পুত্র এবং একটি কন্যা ছিল। ১৯৩০ সালে, কৃষ্ণ চন্দ্র তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র,[১০] সারদা চরণ দাশকে সাথে নিয়ে মিষ্টান্নের দোকান শুরু করেছিলেন।
অবদান
সম্পাদনাকৃষ্ণচন্দ্রের প্রধান অবদান ছিল টিনজাত রসগোল্লার প্রবর্তন এবং " তিনি তার উদ্ভাবন বাজারজাত করার জন্য, তার কনিষ্ঠ উত্সাহী পুত্র সারদা চরণ দাশকে সাথে নিয়ে জোড়াসাঁকোতে (১৯৩০ সালে) একটি নতুন কনফেকশনারির দোকান খোলেন। সেখান থেকে তিনি টিনজাত রসগোল্লাকে জনপ্রিয় করে তোলেন, এটি সেই সময়ে ভারতে উত্পাদিত প্রথম এবং একমাত্র টিনজাত মিষ্টান্ন ছিল। এভাবেই "কে.সি. দাশ" কনফেকশনারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পায়। পরে কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী সারদাচরণ দাশ ১৯৪৬ সালে কোম্পানি আইনের অধীনে এটিকে কে.সি . দাশ প্রাইভেট লিমিটেড হিসাবে উন্নীত করেন এবং আইনীভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Krishna Chandra Das"। iaslic1955.org। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "K.C. Das"। kcdas.co.in। ২২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ Bishwanath Ghosh (২৯ অক্টোবর ২০১৪)। Longing, Belonging: An Outsider At Home In Calcutta। Westland। পৃষ্ঠা 177। আইএসবিএন 978-93-84030-60-5।
- ↑ "K.C. Das"। kcdas.co.in। ১৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ ক খ https://www.youtube.com/watch?v=VMCbYULUB8g
- ↑ Ghosh, Bishwanath (১৫ নভেম্বর ২০১৪)। "Kolkata Chromosome: Like KC for 'rossogolla'"। livemint.com/। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Rasgulla: National Sweet Of India"। iFood.tv। ২২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "K.C. Das"। kcdas.co.in। ১৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৬।