কিশোর পারেখ
কিশোর পারেখ (১৯৩০-১৯৮২) একজন ভারতীয় চিত্রগ্রাহক ছিলেন।[১] তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চিত্রধারণের জন্য বিখ্যাত। মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি সাংবাদিক ছবি তুলেছেন এদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম কারণ তিনি কোন অ্যাসাইনমেন্ট ছাড়াই স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলেছিলেন। মাত্র ৮ দিনে তার তোলা ৬৭টি ছবি মুক্তিযুদ্ধের এক অসামান্য দলিল হয়ে আছে।[২]
কিশোর পারেখ | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩০ |
মৃত্যু | ১৯৮২ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | চিত্রগ্রাহক, প্রেস ফটোগ্রাফার |
নিয়োগকারী | হিন্দুস্তান টাইমস, দি প্যাসিফিক ম্যাগাজিন লিমিটেড |
পরিচিতির কারণ | ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছবি গ্রহণ ও প্রকাশ |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাকিশোর পারেখের জন্ম ১৯৩০ সালে, ভারতে । ১৯৫৬ সালে ২৬ বছরের কিশোর যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র ও স্থিরচিত্রের ওপর ডিগ্রী নেন।[১]
পেশাগত জীবন
সম্পাদনা১৯৬১ সালে মাতৃভূমিতে ফিরে এসে তিনি চেষ্টা করেন তার মেধা বম্বের চলচ্চিত্র জগতে কাজে লাগাতে। কিন্তু তিনি বম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোন চাকরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। এসময় ভারতের প্রভাবশালী বিড়লা পরিবার কিশোরের মেধা দেখে তাকে কাজের সুযোগ করে দেখেন। কিশোর যোগ দেন তাদের পত্রিকা দি হিন্দুস্তান টাইমসের চিফ ফটোগ্রাফার হিসেবে। এর পর ছয় বছর কিশোর কাজ করেন ফটো জার্নালিস্ট হিসেবে। বিহারের দুর্ভিক্ষ কভার করতে গিয়ে তিনি তার মেধার পূর্নাঙ্গ প্রতিফলন ঘটান।[১] ১৯৬৭ সালের পর কিশোর পারেখ ফটো জার্নালিজম ছেড়ে দিয়ে সিঙ্গাপুর ও হংকং গিয়ে দি এশিয়া ম্যাগাজিনে যোগ দেন। এরপর তিনি দি প্যাসিফিক ম্যাগাজিন লিমিটেডে ছবি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনাবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিশোর যখন ভ্রমণ এবং ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দ্রুত ৪০ রোল ফিল্ম যোগাড় করে তিনি ভারতে চলে আসেন। ৮ই ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত কিশোর ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। এই সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৬৭টি ছবি তোলেন। এই ছবিগুলিকে অলম্বন করে পরে তিনি বাংলাদেশ : এ ব্রুটাল বার্থ নামে একটি ফটোগ্রাফি বই প্রকাশ করেন। ভারত সরকার তার ছবি দেখে ২০ হাজার কপির অর্ডার দেন।[২]
তার স্ত্রী সরোজ পারেখ তার স্মৃতিতে উল্লেখ করেছেন:
" ১৯৬৭ সালে হিন্দুস্তান টাইমসের চাকরি পরিত্যাগ করার পর স্বপরিবারে হংকং চলে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তারা হংকং এ অবস্থান করছিলেন। তিনি সমুদ্র সৈকতে ছবি আকতে পছন্দ করতেন। উপমহাদেশ যখন অগ্নিবলয়ে এবং যুদ্ধ কবলিত, এমতবস্থায় বিবেকের তাড়নায় সিদ্ধান্ত নিলেন ভারত হয়ে বাংলাদেশে যেয়ে পুরো যুদ্ধটাকে ছবির মাধ্যমে কভার করা। ঢাকায় অবস্থানকালীন সময় তার পক্ষে একজন সিভিলিয়ান হয়ে সরাসরি যুদ্ধ ক্ষেত্রের ছবি তোলা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। তাই তিনি পাকিস্তান আর্মির পোশাক যোগার করে ঐতিহাসিক কাজগুলো সাহসিকতার সাথে সম্পন্ন করেছিলেন। এর জন্য তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ধরাও পড়েন। পড়ে অবশ্য বোঝাতে সক্ষম হন, তিনি ভারতীয় নাগরিক এবং ফটো সাংবাদিক। কোনো চাকুরিগত বাধ্যবাধকতা নয়, আর্থিক কোনো লাভ নয়, স্রেফ একটি যুদ্ধকে ইতিহাসের অংশ করে রাখার জন্যেই চলে আসেন যুদ্ধ আক্রান্ত এ দেশে।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শেষ জীবন
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধের পর কিশোর ফিরে যান কমার্শিয়াল ফটোগ্রফির পেশায়। ১৯৮২ সালে মাত্র ৫২ বছর বয়সে হিমালয় পবর্তে ছবি তোলার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "ফটোগ্রাফিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং একজন কিশোর পারেখ"। মুক্তির কণ্ঠ।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "কিশোর পারেখ"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ই নভেম্বর ২০১৩। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)