কিম ওক (কোরীয়: 김억; ১৮৯৬-অজানা) একজন কোরীয় কবি ছিলেন। তিনি কোরীয় কবিতার আধুনিকতা আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধিত্বকারী কবি ছিলেন। তিনি পশ্চিমা কবিতা ও পদ্য অনুবাদ করেন এবং নিজেও মৌলিক কবিতা রচনা করেন।[১] তার প্রথম অনুদিত কবিতার সংকলন অনোই মুদো ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় এবং তার প্রথম আধুনিক কবিতার সংকলন হেপারিউ নুরে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়।[২] কবি কিম সোয়োল তার ভাবশিষ্য ছিলেন এবং তারা দুজনে মিলে লোক কবিতা রচনা করেন।[১]

কিম ওক
স্থানীয় নাম
김억 (Kim Ok)
জন্ম১৮৯৬
জেওংজু, উত্তর পিয়োঙ্গান প্রদেশ, কোরীয় সাম্রাজ্য
পেশাকবি
ভাষাকোরীয়
নাগরিকত্ব Korean Empire
ধরনকবিতা
সাহিত্য আন্দোলনআধুনিকতা
কোরীয় নাম
হাঙ্গুল
হাঞ্জা
সংশোধিত রোমানীকরণKim Eok
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াKim Ŏk

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কিম ওক ১৮৯৬ সালে উত্তর পিয়োঙ্গান প্রদেশের জেওংজু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি গ্রাম্য বিদ্যালয় সেওডাং-এ ঐতিহ্যবাহী চীনা ধ্রুপদী রচনা শিখেন এবং পরে আধুনিক মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ই সেউং-হুন প্রতিষ্ঠিত ওসান স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপানের টোকিও শহরে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ইংরেজি, জাপানি, ধ্রুপদী চীনা এবং এসপেরান্তো ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন এবং ওসান বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন। সেখানে শিক্ষাদানকালে তিনি কিম সোয়োল নামে তার এক শিক্ষার্থীর সাথে পরিচিত হন। সোয়োলের মৃত্যু অবধি তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।[৩]

সাহিত্য জীবন সম্পাদনা

১৯১৪ সালে জাপানে অধ্যয়নরত অবস্থায় কিম ওক টোকিওতে অধ্যয়নকারী কোরীয় শিক্ষার্থীদের একটি সাময়িকীতে তার কবিতা হাকজিগওয়াং প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্য জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সাময়িকী টেসোমুনিয়েসিনবো-তে পশ্চিমা সাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার কবিতা বোমেউন গান্ডা প্রকাশ করেন। ১৯২১ সালে তিনি অনুউই মুডো অনুবাদ করেন এবং প্রকাশ করেন। এটি অনূদিত কবিতার প্রথম আধুনিক বই। ১৯২৩ সালে তিনি প্রথম আধুনিক কোরীয় কবিতার সংকলন হেপারিউই নোরে প্রকাশ করেন। এই বইতে ই কোয়াং-সু ও কিম ওকের মুখবন্ধ এবং কিমের ৮৩টি কবিতা রয়েছে, যা নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত।[৩]

তিনি ১৯২৫ সালে কবিতার সংকলন গেউমোরেবোমেউই নোরে প্রকাশ করেন এবং সাহিত্য সাময়িকী গামেয়োন-এর প্রধান সম্পাদক হন। ১৯৩০ সালে তিনি মায়েইল সিনবোর সাহিত্য শাখার দায়িত্ব পান এবং ১৯৩৪ সালে গিয়োংসেওং সেন্ট্রাল ব্রডকাস্টিং কোম্পানিতে যোগদান করেন। ১৯৪৬ সালে জাপানের শাসন থেকে কোরিয়ার স্বাধীনতার পর তিনি প্রকাশনা সংস্থা সুসেওনসার নির্বাহী সম্পাদক হন এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সাহিত্যের উপর বক্তৃতা দিতেন। ১৯৪৭ সালে তিনি তার কবিতার সংকলন মেওডং তেউল জে এবং অনূদিত কবিতার বই গেউমজান্ডি প্রকাশ করেন।[৪] ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন এবং সিউলের গিয়ে-ডং এলাকায় রয়ে যান। সেখান থেকে তাকে উত্তর কোরিয়ায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।[৫]

লেখনী সম্পাদনা

১৯২০-এর শুরুর সময় পর্যন্ত কিম ওক প্রধানত কোরিয়ায় বিদেশি সাহিত্যের তত্ত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পশ্চিমা-ধারার মুক্ত পদ্য ধরন গ্রহণ করেন। ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝিতে তিনি ঐতিহ্যবাহী কবিতা ও ধরন, চীনা কবিতা অনুবাদ, লোকগান আবিষ্কার, প্রাচ্য-ধারার পদ্য রচনার দিকে মনোযোগ দেন।[৬][৭]

প্রারম্ভিক লেখনী সম্পাদনা

কিমের সাহিত্য জীবনের শুরুর সময়ের প্রধানতম কাজ ছিল বোমেউন গান্ডা (১৯১৮)। তিনি চতুর্মাত্রিক রচনাশৈলী এবং ঐতিহ্যবাহী কবিতায় নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করতেন, কিন্তু প্রতীকী ও কাব্যিক ভাষার গুরুত্ব বর্ণনা করে এমন লেখনীর ক্ষেত্রে আধুনিক মুক্ত ছন্দ ব্যবহার করতেন।[৮] লোক কবিতার তার আগ্রহের পূর্বে হেপারিউই নোরে (১৯২৩) কবিতা সংকলনে তার নিজস্ব কবিতার বৈশিষ্ট লক্ষণীয়।[৯] এই সংকলে তার অধিকাংশ কবিতা ধ্রুপদী চীনা ধারায় লিখিত নয় বরং ভিন্ন ধারার সুর ও মুক্ত ছন্দ রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ধ্রুপদী কাব্যিক ভাষা ব্যবহার করতেন এবং কোরিয়ায় মুক্ত ছন্দের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের জন্য প্রশংসিত হন।[১]

পরবর্তী লেখনী সম্পাদনা

কিম পশ্চিমা সাহিত্য ধারা ও কবিতা এবং কোরীয় ভাষায় পশ্চিমা কবিতা অনুবাদ বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে তিনি আট শতাধিক চীনা কবিতা অনুবাদ করেন এবং কোরীয় ভাষায় সেসব রচনাশৈলী প্রয়োগের চিন্তা করেন।[১০] এর ফলে চীনা কবিতা ও লোক কবিতা আন্দোলনের প্রভাবে আধুনিক কোরীয় ধারার কবিতা সৃষ্টি হয়।[১১] ১৯২৫ সালে তিনি বিদেশি থেকে ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য ধারায় ফিরে আসেন, যা তার কবিতা সংকলন আনসেও সিজিপ (১৯২৯)-এ লক্ষণীয়।[১২] আনসেও সিজিপ-এ কিম ৭-৫ বর্ণের ছন্দ ব্যবহার করতেন এবং কবিতার ঐতিহ্যবাহীতা রক্ষার্থে কোরিয়ার প্রকৃতির গুণকীর্তন করতেন। বিশেষ করে "ওডা গাডা" কবিতায় তিনি নির্দিষ্ট ছন্দের উপযুক্ত ব্যবহার করেন এবং কাব্যিক শব্দ যেমন "পর্বত পথ" ও "খুবানি ফুল"-এর প্রতি জোর দেন।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kwon, Youngmin (২০০৪)। 김억Encyclopedia of Modern Korean Literature (한국현대문학대사전) (কোরীয় ভাষায়)। Seoul National University Press। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  2. 김억 [Kim Ŏk]। Doosan Encyclopedia (কোরীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  3. Committee for the Compilation of a Series of Studies on 100 Years of Modern Literature (근대문학100년연구총서편찬위원회) (২০০৮)। Yakjeoneuro ingneun munhaksa 1-2। (약전으로 읽는 문학사1-2 Literary History in Brief Sketches 1-2)। Somyung Books। ১৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ – Online Original Text Service (온라인원문서비스)-এর মাধ্যমে। 
  4. 김억(金億) [Kim Ŏk]। Encyclopedia of Korean Culture (কোরীয় ভাষায়)। The Academy of Korean Studies। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  5. "List of Koreans abducted to the North"। Korean War Abductees' Family Union। ১৪ মার্চ ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. "Book information for Haepariui norae"Naver Books। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  7. ও, সে-ইয়োং (১৯৮৩)। Hanguk nangmanjuui si yeongu (한국낭만주의시연구) (কোরীয় ভাষায়)। Iljisa। 
  8. Choi, Yong-seok (২০০৩)। "A Study on the Origination of Modern Korean Poetry"। The Review of Korean Cultural Studies (১৩)। 
  9. "Haepariui norae"Encyclopedia of Korean Culture। The Academy of Korean Studies। 
  10. Jeong, Gi-in (২০১৭)। Formation of Modern Korean Poetry and the Tradition of Classical Chinese (Ph.D diss.)। Seoul National University। 
  11. Woo, Won-ho (২০১২)। "Poet (3) Kim Ŏk"Webzine Seein Kwangjang। ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  12. "Anseo sijip"Encyclopedia of Korean Culture। The Academy of Korean Studies। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  13. "Oda gada"Doosan Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • "Taeseo munye sinbo"Encyclopedia of Korean Culture (কোরীয় ভাষায়)। 
  • "Onoeui mudo"Doosan Encyclopedia (কোরীয় ভাষায়)। 
  • "Haepariui norae"Doosan Encyclopedia (কোরীয় ভাষায়)। 
  • "Mulle"Doosan Encyclopedia (কোরীয় ভাষায়)। 
  • "Bomeun ganda"Doosan Encyclopedia (কোরীয় ভাষায়)। 
  • 국어국문학자료사전 [Sourcebook of Korean Language and Literature] (কোরীয় ভাষায়)। Hanguksajeonyeongusa। ১৯৯৪।