কালীমোহন ঘোষ (১৮৮২ – ১২ মে ১৯৪০) ছিলেন বিশিষ্ট কর্মব্রতী, সাহিত্যানুরাগী ও শান্তিনিকেতনের শিক্ষক।[১][২] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, রবীন্দ্রনাথ পরিকল্পিত শ্রীনিকেতনের মুখ্য সংগঠক ও অন্যতম রূপকার।

কালীমোহন ঘোষ
কালীমোহন ঘোষ
জন্মআনু. ১৮৮২
মৃত্যু১২ মে ১৯৪০(1940-05-12) (বয়স ৫৭–৫৮)
দাম্পত্য সঙ্গীমনোরমা দেবী
সন্তানশান্তিদেব ঘোষ, সাগরময় ঘোষ, সমীরময় ঘোষ, সলিলময় ঘোষ, সুবীরময় ঘোষ, শুভময় ঘোষ, সুজাতা ঘোষ (কন্যা)
পিতা-মাতা
  • দীননাথ ঘোষ (পিতা)
  • শ্যামাসুন্দরী দেবী (মাতা)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

কালীমোহনের জন্ম বৃটিশ ভারতের (তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার ত্রিপুরার) অধুনা বাংলাদেশের চাঁদপুরের বাজাপ্তি গ্রামে। পিতা দীননাথ ঘোষ ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবীর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন তিনি। জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন দুর্গামোহন। বাল্যকালে তার পিতৃবিয়োগে ঘটে আর সেকারণে আর্থিক অনটনে শৈশব কাটে। তবে এর মধ্যেও মায়ের চেষ্টাতে পড়াশোনা করেন। ঢাকার ইম্পিরিয়াল সেমিনার স্কুল থেকে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষার পরই রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। উচ্চ শিক্ষার্থে কোচবিহার রাজ কলেজে ভর্তি হলেও বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে কলেজ ছেড়ে স্বদেশিতে মাতেন।[৩]

স্বদেশী ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে পাবনায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস কনফারেন্সে উগ্রপন্থীদের পক্ষ নেন[২] এবং প্রচারণার অংশ হিসাবে গ্রামেগঞ্জে বক্তৃতা দেন। তার মাধুর্যপূর্ণ বক্তৃতায় গ্রামের সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারতেন। অনেকের ধারণা ছিল যে, তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী দলের একজন সদস্য। সেকারণে তার উপর পুলিশের সজাগ দৃষ্টি ছিল।[৩]

রবীন্দ্র প্রভাব সম্পাদনা

ছাত্রাবস্থাতেই তিনি রবীন্দ্রনাথের 'স্বদেশী সমাজ' পড়ে রবীন্দ্র অনুরাগী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল কংগ্রেস সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথের 'পল্লীচর্চা' বিষয়ক বক্তৃতা শুনে অনুপ্রাণিত হন।[২] সাক্ষাতে কবি কালীমোহনের স্বদেশ চিন্তা ও আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হন এবং পল্লীউন্নয়নের কাজে তাকে সহযোগী হিসাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। কালীমোহনও শান্তিনিকেতনের পরিবেশ ও কর্মকাণ্ড দেখে অভিভূত হন। প্রথমে তিনি শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে শিশুবিভাগে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ ও সহযোগিতায় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজী সাহিত্য ও শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাপদ্ধতি ও বয়স্ক শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে লন্ডনে পাঠানো হয়।[২] সেখানে তিনি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস, এইচ জি ওয়েলস, উইলিয়াম রোটেনস্টাইন প্রমুখ বরেণ্য মানুষের সাথে পরিচিত হন। সেখানে অর্থাভাব হওয়ায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরিয়ে আনেন এবং শান্তিনিকেতনে শিশুবিভাগের সার্বিক দায়িত্ব দেন।[৩] সেই সাথে রবীন্দ্রনাথ পরিকল্পিত পল্লীসংগঠনের কাজে তিনি শ্রীনিকেতনে আত্মনিয়োগ করেন। কালীমোহন রচিত অজস্র প্রবন্ধ ও নিবন্ধে নূতন চিন্তাধারা ও পরিকল্পনা পরিস্ফুট হয়েছে।

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

কালীমোহন ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে চাঁদপুরের বিখ্যাত উকিল দীননাথ বসুর কন্যা মনোরমা দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের ছয় পুত্র ও এক কন্যা। রবীন্দ্র সঙ্গীতের ও শান্তিনিকেতন ঘরনার নৃত্যের সৃষ্টিশীল কাণ্ডারী শান্তিদেব ঘোষ (১৯১০ - ১৯৯৯) এবং বিশিষ্ট সাহিত্যসেবী ও আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর দেশ সাহিত্য পত্রিকার খ্যাতনামা সম্পাদক সাগরময় ঘোষ (১৯১২ - ১৯৯৯) ছিলেন তার কৃতী সন্তান।[৩]

জীবনাবসান সম্পাদনা

কালীমোহন ঘোষ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই মে পরলোক গমন করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণানন্দ। কবি ও কর্মী রবীন্দ্রনাথ ও কালীমোহন ঘোষ। কলকাতা: দে'জ পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ১১২। 
  2. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৩৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. হাসান, মুহাম্মদ ফরিদ (২৯ এপ্রিল ২০১৯)। "রবীন্দ্রনাথের সহযোগী কালীমোহন ঘোষ"দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠ। ১৯ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।