কালিকারঞ্জন কানুনগো

ভারতীয় ইতিহাসবিদ, গবেষক ও অধ্যাপক

ড.কালিকারঞ্জন কানুনগো (ইংরেজি: Kalika Ranjan Qanungo)( জুলাই ১৮৯৫ - ২৯ এপ্রিল ১৯৭২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, গবেষক ও অধ্যাপক। ভারতের মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সামাজিক বিশ্লেষণের চিত্রণে এবং গবেষণার কাজে ধর্ম ও বর্ণগত গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে অধিকতর সমঝোতার নানা বিষয় উপস্থাপনে বিশেষ কাজ করেছেন।১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজস্থান কাহিনী গ্রন্থটির জন্য তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।

কালিকারঞ্জন কানুনগো
জন্ম(১৮৯৫-০৭-০০) জুলাই ১৮৯৫
বোয়ালখালি, চট্টগ্রাম ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৯ এপ্রিল ১৯৭২(1972-04-29) (বয়স ৭৬)
লখনউ উত্তরপ্রদেশ ভারত
পেশাঅধ্যাপনা ও ইতিহাসবিদ
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিরাজস্থান কাহিনী
হিস্ট্রি অফ জাঠস্
উল্লেখযোগ্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬৭)
সন্তাননরেন্দ্রনাথ কানুনগো (মধ্যম পুত্র)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কালিকারঞ্জন কানুনগোর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালির কানুনগোপাড়ার এক জমিদার পরিবারে। পিতা রাজমণি কানুনগো। বাল্যকালেই তিনি পিতৃহারা হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক হন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর তিনি আইন পরীক্ষা পাশ করেন। তিনি যদুনাথ সরকারের অধীনে গবেষণা করে ‘শেরশাহ অ্যান্ড হিজ টাইমস’ শীর্ষক গবেষণা পত্রের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন। [১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

দিল্লির রামযশ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন কালিকারঞ্জন। এরপর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ হতে তিন বৎসর তিনি লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। এখানে শিক্ষকতা করার সময়েই তিনি জাঠদের নিয়ে গবেষণার নিমিত্ত রাজস্থান সংলগ্ন রাজপুত অধ্যুষিত এলাকার নানা গ্রামে ভ্রমণ করেন এবং অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য জরিপের কাজ সম্পন্ন করেন। এই সময়ের দিল্লি ও সংলগ্ন স্থানের মহাফেজখানায় সংরক্ষিত সরকার দলিলপত্র ব্যবহার করে রচনা করেন- হিস্ট্রি অব দ্য বেরোনিয়াল হাউস অব দিল্লি। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক কানুনগো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীডার পদে যোগ দিয়ে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক ও শেষে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। পুনরায় লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপনার সাথে সাথে গবেষণার কাজে লিপ্ত ছিলেন। তার গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস। তিনি ফরাসি ও উর্দু ছাড়াও হিন্দি, আওধীসহ বেশ কিছু স্থানীয় ভাষা দক্ষ ছিলেন।[১] তাই মুসলমান শাসক, রাজপুত ও মারাঠাদের নানা বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ তার পক্ষে সহজসাধ্য হয়েছে। তার রচিত 'স্টাডিজ ইন রাজপুত হিস্ট্রি' এবং 'রাজস্থান কাহিনী' গ্রন্থদুটিতে রাজপুত সম্পর্কে আর্কষণীয় তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।

গ্রন্থসমূহ সম্পাদনা

  • কানুনগো, কালিকারঞ্জন (১৯২১)। শেরশাহ: এ ক্রিটিক্যাল স্টাডি বেসড অন অরিজিনাল সোরসেস্ (ইংরাজিতে)। কলকাতা: কর মজুমদার অ্যান্ড কোম্পানি। 
  • কানুনগো, কালিকারঞ্জন। রাজস্থান কাহিনী। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ পাবলিসার্স প্রাঃ লিঃ। আইএসবিএন 978-81-7293-870-3 
  • কানুনগো, কালিকারঞ্জন (১৯৮৬)। শাহজাদা দারাশুকো। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ পাবলিসার্স প্রাঃ লিঃ। আইএসবিএন 978-81-7293-912-0 
  • কানুনগো, কালিকারঞ্জন (২০১৭)। History Of The Jats: A Contribution To The History Of Northern India। জ্ঞান বুকস্। আইএসবিএন 9789351285144 
  • কানুনগো, কালিকারঞ্জন (২০০৩)। হিস্ট্রি অফ দ্য জাঠস্। জ্ঞান বুকস্। আইএসবিএন 978-81-7536-107-2 

সম্মাননা সম্পাদনা

অধ্যাপক কালিকারঞ্জন কানুনগো ইতিহাস চর্চার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাকে রামপ্রাণ গুপ্ত স্মৃতি স্বর্ণ পদক প্রদান করে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান কাহিনী গ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

অধ্যাপক কালিকারঞ্জন কানুনগো ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল তার লখনউ-এর বাসভবনে প্রয়াত হন।

তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুস্পুত্র সুনীতিভূষণ কানুনগো কালিকারঞ্জনের জীবন ও কর্মের উপর রচনা করেন "কালিকারঞ্জন কানুনগো: জীবন ও কর্ম শীর্ষক এক গ্রন্থ।<ref>কানুনগো, সুনীতিভূষণ (২০১১)। কালিকারঞ্জন কানুনগো: জীবন ও কর্ম। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। আইএসবিএন 984-07-4943-9 


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কানুনগো, কালিকারঞ্জন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২৪