কালপুরুষ (তারামণ্ডল)
কালপুরুষ আকাশের সবচেয়ে পরিচিত তারামন্ডল হিসেবে গণ্য হতে পারে। এই মন্ডলটি খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়।[১][২] শিকারী নামে সুপরিচিত এই মন্ডলের উল্লেখযোগ্য তারাগুলো মহাকাশের বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করায় পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে একে দেখা যায়। উত্তর গোলার্ধে শীত শেষ সময় হতে বসন্তের প্রাথমিক সময় পর্যন্ত কালপুরুষ মন্ডলটি দেখা যায়।
তারামণ্ডল | |
সংক্ষিপ্ত রূপ | Ori |
---|---|
জেনিটিভ | Orioni |
বিষুবাংশ | |
বিষুবলম্ব | |
আয়তন | ৫৯৪ বর্গডিগ্রি (২৬তম) |
উল্কাবৃষ্টি | |
সীমান্তবর্তী তারামণ্ডল | |
+৮৫° ও −৭৫° অক্ষাংশের মাঝে দৃশ্যমান। জানুয়ারি মাসে রাত ৯ টায় সবচেয়ে ভাল দেখায়। |
বিশেষ দিকসমূহসম্পাদনা
কালপুরুষ মন্ডলে প্রচুর উজ্জ্বল তারা এবং গভীর আকাশের বস্তু রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য তারাসমূহের নাম উল্লেখিত হল:
- ল্যাম্বডা অরিয়নিস (Meissa) হল কালপুরুষের মাথা। অবশ্য আর্দ্রার উত্তরে বেশ কয়েকটি তারা দেখা যায় যার সবকটিই মাথা গঠন করে। বাংলায় এদের একত্রে মৃগশিরা বলা হয়।
- জেটা অরিয়নিস (Alnitak - ঊষা), এপসাইলন অরিয়নিস (Alnilam - অনিরুদ্ধ) এবং ডেল্টা অরিয়নিস (Mintaka - চিত্রলেখ) নামক তারা তিনটি পূর্ব আকাশে লুব্ধকের সামান্য উত্তর-পশ্চিমে থাকে এবং এই যুক্ততারাটি (Asterism) কালপুরুষের কোমরবন্ধ গঠন করে। এই তারাসমষ্টিটি এক সরলরেখায় উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে মুখ করে অবস্থান করে। সর্ব উত্তরে চিত্রলেখ এবং সর্বদক্ষিণে ঊষা অবস্থান করে।
- আলফা অরিয়নিস বা আর্দ্রা তারাটি এর ডান কাঁধে অবস্থিত। এটি লাল বর্ণের তারা যার ব্যস শুক্র গ্রহের চেয়ে বেশি। কোমরবন্ধের তারাসমষ্টিটির উত্তরে দুইটি তারা আছে এবং এদুটির মধ্যে পূর্বদিকের তারাটিই হল আর্দ্রা। এটি কালপুরুষ মন্ডলের প্রথম তারা হলেও বাণরাজা (Rigel) অপেক্ষা মৃদু।
- গামা অরিয়নিস (Bellatrix - কার্তিকেয়) তারাটি এর বাম কাঁধে অবস্থিত। আর্দ্রার পশ্চিম দিকে তাকালে অতি সহজেই তারাটি চোখে পড়ে। এর অপর নাম হচ্ছে নারী যোদ্ধা বা Warrior woman।
- কার্তিকেয়'র পশ্চিমে ছোট ছোট কয়েকটি তারা ধনুকের আকৃতি ধারণ করে আছে দেখা যায়। এগুলো কালপুরুষের হাতের দন্ডের আকার দেয়।
- কাপ্পা অরিয়নিস (Saiph - কার্তবীর্য) ডান পায়ের হাটুর তারা। কোমরবন্ধের নিচে পূর্বদিকে এর অবস্থান।
- বিটা অরিয়নিস (Rigel - বাণরাজা) বাঁ পায়ের তারা যা কোমরবন্ধের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি একটি অতিদানব নীলাভ-সাদা তারা। আকাশের উজ্জ্বলতম তারাগুলোর অন্যতম।
- আইওটা অরিয়নিস (Hatsya) তারাটি কালপুরুষের তরবারির ডগায় অবস্থিত।
- ইটা অরিয়নিস তারাটি ডেল্টা অরিয়নিস এবং বাণরাজা তারাদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
ইতিহাসসম্পাদনা
কালপুরুষ তারামণ্ডলের বর্তমান আকৃতি আজ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ বছর পূর্বে গঠিত হয়েছিলো। পৃথিবীর সাপেক্ষে এর তারাগুলোর আপেক্ষিক গতি কম হওয়ার কারণে আজ থেকে আরও ১০/২০ লক্ষ বছর পর্যন্ত কালপুরুষ তারামণ্ডলকে রাতের আকাশে দেখা যাবে। অর্থাৎ এটিই দৃশ্যমান মণ্ডলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় পর্যবেক্ষণযোগ্য থাকবে। আরও একটি সুবিধা হল এই মণ্ডলের আবির্ভাব মানব সভ্যতার সমসাময়িক কালে হয়েছে। (স্কাইচার্ট ৩ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে)
সুমেরীয়রা কালপুরুষ তারামণ্ডলকে একটি জাহাজ হিসেবে কল্পনা করত। প্রাচীন চীনে এটি ছিল রাশিচক্রের ২৮ টি রাশির একটি যার প্রতীক ছিল Xiu (宿)। এই রাশিটি সেখানে শেন নামে পরিচিত ছিল যার অর্থ তিন। কালপুরুষের কোমরবন্ধের তিনটি তারা দেখেই তারা এই নামকরণ করেছিল।
প্রাচীন মিশরে এই মণ্ডলের তারাগুলো মৃত্যু এবং পাতালপুরীর দেবী অসিরিসের সাথে সম্পর্কিত ছিল। বলা হয়ে থাকে যে গিজা পিরামিড কমপ্লেক্স এই কালপুরুষের কোমরবন্ধের তিনটি তারার খ-মানচিত্র অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। এই কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে গিজার গ্রেট পিরামিড, খফ্রুর পিরামিড এবং মেঙ্কাউ-রার পিরামিড।
কালপুরুষের কোমরবন্ধ এবং তরবারি নিয়ে প্রাচীন এবং আধুনিক অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে। বর্তমানকালেও যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তা ও সৈন্যদের কাঁধের প্রতীক হিসেবে কালপুরুষের কোমরবন্ধ এবং তরবারি ব্যবহৃত হয়। এর একটি কারণ হতে পারে এই ডিভিশনের প্রথম সেনাপতি ছিলেন জন এফ অরিয়ান।[৩][৪]
তারাসমূহসম্পাদনা
সুস্পষ্ট নামবিশিষ্ট তারাসমূহসম্পাদনা
- আলফা অরিয়নিস বা আর্দ্রা - Betelgeuse/Betelgeuze/Beteiguex অথবা আরবি নাম আল মানকিব
< يد الجوزاء (ইয়াদ আল জাওযা)-এর বিকৃত উচ্চারণ। এর অর্থ কেন্দ্রীয় জনের হাত।
< منكب এর অর্থ কাঁধ।
- বিটা অরিয়নিস বা বাণরাজা - Rigel অথবা Algebar/Elgebar
< رِجل الجبار (রিজ্ল আল-জাব্বার) যার অর্থ শক্তিমানের পা।
- গামা অরিয়নিস বা কার্তিকেয় - Bellatrix
< bellātrix এর অর্থ নারী যোদ্ধা।
পুরাণসম্পাদনা
একটি পৌরাণিক কাহিনীতে পাওয়া যায় শিকারের দেবী আরটামিস এবং চাঁদ কালপুরুষের প্রেমে পড়ে আকাশকে আলোকিত করা বন্ধ করে দেয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Orion"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। 20 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 276।
- ↑ Dolan, Chris। "Orion"। ২০১১-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৮।
- ↑ Hart, Albert Bushnell (১৯২০)। Harper's Pictorial Library of the World War, Volume 5। New York: Harper & Brothers। পৃষ্ঠা 358।
- ↑ Moss, James Alfred; Howland, Harry Samuel (১৯২০)। America in Battle: With Guide to the American Battlefields in France and Belgium। Menasha, Wisconsin: Geo. Banta Publishing Co.। পৃষ্ঠা 555।