কার্ল নাগেলি

সুইজারল্যান্ডীয় উদ্ভিদবিদ

কার্ল ভিলহেল্ম ফন নাগেলি[২][৩][৪] (২৬/২৭ মার্চ ১৮১৭- ১০ মে ১৮৯১)[৪] ref>"VL People [per346]"vlp.mpiwg-berlin.mpg.de </ref>[৫] একজন সুইস উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন। কোষ বিভাজনপরাগায়ন নিয়ে নাগেলি বিস্তারিত অধ্যয়ন করেন। কিন্তু গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যা নিয়ে অধিকতর কাজ করার জন্য নিরুৎসাহিত করার জন্য নাগেলি পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন নয়, বরঞ্চ পরিশীলিত রূপান্তর (অর্থোজেনেসিস)-ই হলো বিবর্তনের মাধ্যম।

কার্ল ভিলহেল্ম ফন নাগেলি
জন্ম২৬ বা (১৮১৭-০৩-২৭)২৭ মার্চ ১৮১৭
কিলচবার্গ, জুরিখ
মৃত্যু১০ মে ১৮৯১(1891-05-10) (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাসুইস
পরিচিতির কারণক্রোমোজোম
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজীববিজ্ঞানী
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেনগিওর্গ বোর[১]

জন্ম সম্পাদনা

নাগেলি জুরিখ শহরের নিকটে ক্লিচবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করেন। ১৮৩৯ সালে জেনেভা শহরে এ পি ডি ক্যান্ডোলের অধীনে তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৮৪০ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে অভিসন্দর্ভ জমাদানপূর্বক তিনি স্নাতক হন। ম্যাথিয়াস জ্যাকব শ্লেইডেন সে সময় জার্মানির জেনা শহরে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অধ্যাপনা করছিলেন। শ্লেইডার নাগেলিকে উদ্ভিদের আণুবীক্ষণিক অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮৫৮ সালে নাগেলি মেরিস্টেম্যাটিক কলার ধারণা উদ্ভাবন করেন।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

নাগেলি স্নাতক হবার পর "প্রিভাতডোজেন্ট" বা শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন। অতঃপর তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাধারণ অধ্যাপক (প্রফেসর এক্সট্রাঅর্ডিনারি) পদে নিয়োগ লাভ করেন। অতঃপর তাকে ফ্রেইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের আহবান জানানো হয়। ১৮৫৭ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই অধ্যাপনা করেন।

অবদান সম্পাদনা

ইতোপূর্বে ধারণা করা হতো, ১৮৪২ সালে কার্ল নাগেলি পরাগরেণু গঠনের সময় প্রথম কোষ বিভাজন প্রত্যক্ষ করেন।[৬] তবে হেনরি হ্যারিস এটি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, "উদ্ভিদকোষের মধ্যে নাগেলি আদৌ কী দেখেছিলেন, সেটা অনেকটা ধোঁয়াশার মতো। রবার্ট রেমাক একই সময়ে উদ্ভিদকোষে নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রত্যক্ষ করলেও নাগেলি কিন্তু সেটা দেখেননি। কারণ,১৮৪৪ সালে কোষীয় কার্যক্রমে নিউক্লিয়াসের বিভাজনের গুরুত্ব নাগেলির পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব ছিল না। [৭]

১৮৫৭ সালে নাগেলি সর্বপ্রথম মাইক্রোস্পরিডিয়ার বর্ণনা দেন। এটি রেশমপোকার পেব্রিন রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ইউরোপের রেশম শিল্প মাইক্রোস্পরিডিয়ার তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।[৮]

নাগেলি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে — জেইটশ্রিফট ফুর ভিইজেনশাফটলিসে বোটানিক (১৮৪৪-১৮৪৬), ডাই নিউয়েরেন আলজেনসিস্টেনে (১৮৪৭), গাটুনগেন আইনজেলিঙ্গার অ্যালগেন (১৮৪৯), ফ্লানজেনফিজিওলজিশ্চে উন্টারসুশুঙ্গেন (১৮৫৫-১৮৫৮)। এছাড়াও নাগেলি কার্ল এদুয়ার্দ ক্রেমারের সঙ্গে বাইটরেজ জুর ভিইজেনশাফটলিশেন বোটানিক (১৮৫৮-১৮৬৮) পত্রিকায় গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। রাজকীয় বাভারীয় একাডেমি হতে তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এগুলো মিলে তিন খণ্ডে ১৮৬১-১৮৮১ সালে "বোটানিশ্চে মিতেইলুঙ্গেনে" প্রকাশিত হয়। ১৮৮৪ সালে তিনি মেকানিশ্চ ফিজিওলজিশ্চে থিওরি ডার অ্যাবস্টামুংসলেহের গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

লেখক সাইমন মোয়ার "গ্রেগর মেন্ডেল:বংশগতিবিদ্যার বীজ বপন"(গ্রেগর মেন্ডেল:প্ল্যান্টিং দ্য সিডস অব জেনেটিক্স) গ্রন্থে নাগেলি ও গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের পত্রালাপের আকর্ষণীয় বিবরণ প্রদান করেন। মোয়ার বলেন, মোরাভিয়া থেকে নাগেলি মেন্ডেলের সাথে পত্রালাপ করছিলেন। ১৮৮৪ সালে মেন্ডেল যখন পরলোকগমন করেন, নাগেলি তখন জৈব বিবর্তনের যান্ত্রিক ও শারীরতাত্ত্বিক তত্ত্ব বইটির উপর কাজ করছিলেন। তিনি "ইডিওপ্লাজম"-এর ধারণা প্রদান করেন, যাকে তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যের সঞ্চালক হিসেবে বিবেচনা করেন। মোয়ার লক্ষ্য করেন, ফন নাগেলির গ্রন্থে মেন্ডেলের কাজের বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই।

নাগেলি ও হুগো ফন মোল প্রথম কোষপ্রাচীর ও কোষের বাকি উপাদানগুলো পৃথক করেন। পরবর্তীতে বাকি উপাদানগুলোর নাম ১৮৪৬ সালে প্রোটোপ্লাজম দেওয়া হয়।

নাগেলি ১৮৫৮ সালে জাইলেম, ফ্লোয়েম ও মেরিস্টেম শব্দগুলো উদ্ভাবন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Baur, George Herman Carl Ludwig (1859–1898)" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  2. Naegeli, Carl Wilhelm von (২০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪)। Mechanisch-physiologische Theorie der Abstammungslehre – Max Planck Institute for the History of Science: Virtual Laboratory Library-এর মাধ্যমে। 
  3. "IPNI Author Details"www.ipni.org 
  4. Neuenschwander, Erwin। "Nägeli, Carl Wilhelm von"HLS-DHS-DSS.CH 
  5. "Nägeli, Carl von - Deutsche Biographie" 
  6. http://babel.hathitrust.org/cgi/pt?id=mdp.39015078137034;view=1up;seq=471
  7. Henry Harris. (1997). The Cells of the Body: A History of Somatic Cell Genetics. Cold Spring Harbor Laboratory, Plainview N.Y. p. 15
  8. Texier, Catherine; Vidau, Cyril; Viguès, Bernard; El Alaoui, Hicham; Delbac, Frédéric (1 আগস্ট, 2010)। "Microsporidia: a model for minimal parasite–host interactions"Current Opinion in Microbiology13 (4): 443–449। ডিওআই:10.1016/j.mib.2010.05.005 – ScienceDirect-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা