কাজী লেন্দুপ দর্জি

শিকিমের প্রধানমন্ত্রী (১৯৭৪-১৯৭৯)

কাজী লেন্দুপ দর্জি  (১১ অক্টোবর ১৯০৪- ২৮ জুলাই ২০০৭[১]), কাজী লেন্দুপ দর্জি খাংসারপা  নামেও পরিচিত, ছিলেন ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার পরে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী।[২]

কাজী লেন্দুপ দর্জি খাংসারপা
কাজী লেন্দুপ দর্জি
১ম সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৬ মে ১৯৭৫ - ১৮ আগস্ট ১৯৭৯
পূর্বসূরীনতুন পদ
উত্তরসূরীনর বাহাদুর ভান্ডারী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯০৪-১০-১১)১১ অক্টোবর ১৯০৪
পাকিয়ং, পূর্ব সিকিম, সিকিম রাজ্য
মৃত্যু২৮ জুলাই ২০০৭(2007-07-28) (বয়স ১০২)
কালিম্পং, পশ্চিমবঙ্গ
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৯৭৫-এর পরে)
সিকিম জাতীয় কংগ্রেস (১৯৭৫-এর পূর্বে)
দাম্পত্য সঙ্গীকাজীনি এলিসা মারিয়া
বাসস্থানগ্যাংটক, সিকিম, ভারত

প্রাক জীবন সম্পাদনা

১৯০৪ সালে কাজী লেন্দুপ দর্জি সিক্কিমের পূর্ব সিক্কিম জেলার পাক্যংয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪] তিনি সিক্কিমী জনগোষ্ঠীর খাংসারপা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তিনি ছিলেন লেপচা জনগোষ্ঠীর লোক। ৬ বছর বয়সে তিনি রুমতেক মঠে যোগ দেন। তার চাচা শুরফুক লামা রাবদেন দর্জি ছিলেন তৎকালীন মঠপ্রধান। লেন্দুপ তার অধীনে শিক্ষাগ্রহণ করেন। সিক্কিমের মহারাজা সিদকেয়ং তুলকু নামগ্যল মঠ পরিদর্শনকালে সন্যাসী লেন্দুপকে খুবই পছন্দ করেন। তিনি তাকে সাথে করে গ্যাংটক নিয়ে এসে একটি তিব্বতি স্কুলে ভর্তি করে দেন। ১৬ বছর বয়সে লেন্দুপ রুমতেক মঠে ফিরে আসেন। পরবর্তী দুই বছর তিনি সন্যাসজীবনের কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে পার করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রুমতেক মঠের প্রধান লামা হিসেবে মনোনীত হন। কাজী লেন্দুপ আটবছর ধরে রুমতেক মঠের প্রধান লামার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি তার ভাই কাজী ফ্যাগ শেরিং এর সংগে কাজ করার উদ্দেশ্যে মঠ ত্যাগ করেন। ফ্যাগ দার্জিলিংয়ে যুব বৌদ্ধ সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। দুই ভাই পশ্চিম সিক্কিমে প্রচুর বিদ্যালয় নির্মাণ করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

১৯৪৫ সালে দর্জি সিকিম প্রজা মন্ডল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪] দর্জি ১৯৫৩ সালে সিকিম রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি হন এবং ১৯৫৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। [৪]

১৯৬২ সালে দর্জি সিকিম জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।[৪] সিকিম জাতীয় কংগ্রেস অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই রাজনৈতিক একতার ফলে সিকিম জাতীয় কংগ্রেস সিকিমের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে আঠারোটির মধ্যে আটটি আসন জয় করে।[৪] ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দিলে সিকিম জাতীয় কংগ্রেস দলকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সঙ্গে একীভূত করা হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচারের জন্যে কাজী সিকিম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন।"[৪]

১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানে দর্জি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।[২] দর্জি ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সালে দাপ্তরিকভাবে ভারতের অংশ হওয়ার আগ পর্যন্ত সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২] ২০০২ সালে ভারত সরকার দর্জিকে পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রদান করে।[২] ২০০৪ সালে সিকিমের রাজ্য সরকার দর্জিকে সিকিম রত্ন উপাধিতে ভূষিত করে।[২] দর্জি সিকিমে দেশ বেচুয়া নামে অধিক পরিচিত।

কাজিনী এলিসা মারিয়া সম্পাদনা

কাজিনী এলিসা মারিয়া হচ্ছে লেন্দুপ দর্জির স্ত্রী যিনি পূর্বে এলিসা মারিয়া ল্যাংফোর্ড-রে নামে পরিচিত এক বেলজীয় অভিজাত পরিবারের বিধবা ছিলেন।[৫] তিনি ছিলেন স্কটিশ রক্তের এবং এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে অধ্যায়ন করেন।  তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে সংঘরক্ষিতা নাম গ্রহণ করেন।[৬][৭] ১৯২০ এর দিকে তিনি বার্মায় ছিলেন।[৮] তার নাতনীর মতানুসারে কাজিনীর আসল নাম সম্ভবত এথেল মাউদ শিররান ছিলো।[৯]

মৃত্যু সম্পাদনা

কাজি লেন্দুপ দর্জি ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্তর বঙ্গের কালিম্পংয়ে নিজগৃহে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।[২][১০] কালিম্পং সিকিম রাজ্যের সীমানা লাগোয়া একটি জেলা। দর্জির মৃত্যকালে বয়স হয়েছিলো ১০২ বছর, ২৯০ দিন বছর।[২] যদিও দর্জি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান কিন্তু তিনি কয়েক বছর ধরে যকৃতের সমস্যায় ভুগছেন।[২] ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট সিক্কিমের রুমতেক মঠে দর্জির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[২]

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং দর্জিকে অন্যতম রাজনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করে কারণ তিনি ১৯৭৩ সালে চামলিংকে সিকিমের গণতন্ত্র আন্দোলনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন।[২]

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দর্জির মৃত্যুতে শোকবার্তা দেন।"[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [১]
  2. "Sikkim's first Chief Minister Kazi Lhendup Dorjee dies"।  The Times of India ।  । 2007-07-30 ।  অজানা প্যারামিটার | ইউআরএল= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  3. India Who's who, INFA Publications 2004, p. 247
  4.  ,   (2007-07-31  )। "Man who ushered in democracy in Sikkim" The Hindu  ।   । ২০০৭-১০-০১  তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2007-08-16    |url-status=অকার্যকর  অবৈধ (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. Sunanda K. Datta-Ray   (3 January 2001 )। "The Nepal Realpolitik"। The Hindu Businessline  ।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Dharmachari Subhuti, Subhuti Bringing Buddhism to the West: A Life of Sangharakshita Windhorse Publications, 1995 আইএসবিএন ০-৯০৪৭৬৬-৬৯-১
  7. Maloy Krishna Dhar If not for him, Sikkim wouldn't be a part of India Rediff India Abroad The Rediff Special 2 August 2007
  8. Michael Shelden Orwell: The Authorised Biography William Heinemann 1991
  9. (http://members.madasafish.com/~cj_whitehound/family/Ethel_is_Elisa.htm)
  10. Sikkim's first Chief Minister Kazi Lhendup Dorjee dies ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-১০-১৭ তারিখে, The Times of India – 30 July 2007
  11. "PM Condoles The Death of Shri Kazi Lhendup Dorjee"।  Press Information Bureau Government of India ।  । 2007-07-31 ।  অজানা প্যারামিটার | ইউআরএল= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);

টেমপ্লেট:সিক্কিমের মুখ্যমন্ত্রী টেমপ্লেট:পদ্মভূষণ পুরস্কার