কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এম.এ মাদ্রাসা
কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এম.এ মাদ্রাসা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার বিনাজুরির কাগতিয়া নামক গ্রামে অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য আলিয়া মাদ্রাসা।[১] সৈয়দ গাউছুল আজম ১৯৩২ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[২] মাদ্রাসাটি সংক্ষেপে কাগতিয়া মাদ্রাসা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।[৩] মাদ্রাসাটির মূল ক্যাম্পাস বাদেও চট্টগ্রাম মহানগরে আরেকটি ক্যাম্পাস রয়েছে।[৪] মাদ্রাসাটি কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে। মাদ্রাসাটি ফলাফলের দিক থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে, এমনকি গোটা বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করে।[৫][৬][৭] মাদ্রাসাটিতে প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে থাকে। ২০১০ সালে মাদ্রাসাটি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনার্স মাদ্রাসার স্বীকৃতি লাভ করে।[৮]
ধরন | এমপিও ভুক্ত |
---|---|
স্থাপিত | ১ জানুয়ারি ১৯৩২ |
প্রতিষ্ঠাতা | সৈয়দ গাউছুল আজম |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি |
|
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তি | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ১০৪ |
শিক্ষার্থী | আনু. ২০০০ |
ঠিকানা | কাগতিয়া, বিনাজুরি , , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে, গ্রাম্য |
ক্রীড়া | ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন |
ইতিহাস
সম্পাদনাচট্টগ্রামের ইসলাম প্রচারক সৈয়দ গাউছুল আজম ইসলাম প্রচারের জন্য নিজেকে আত্ননিয়োগ করেন। তিনি চট্টগ্রামে কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ নামে একটি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি ১৯৩২ সালে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমানে মাদ্রাসাটি দরবার শরীফের তত্ত্বাবধায়নেই পরিচালিত হয়ে থাকে। ১৯৫২ সালের পর থেকে সৈয়দ গাউছুল আজম নিজে এই মাদ্রাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত থাকাকালীন সময়ে পরিদর্শকদল মাদ্রাসাটি সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে।[৯]
কার্যক্রম
সম্পাদনা“ | এলমে শরিয়তের মহা শিক্ষা নিকেতন,
এলমে মারেফতের আরো শুদ্ধ বিচরন। জাহের-বাতেন উভয় জ্ঞানের যেথা সংমিশ্রন, কাগতিয়া মাদ্রাসা হলো অন্যতম। |
” |
— এই মাদ্রাসা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার জন্য একটি ছন্দ ব্যবহার করে। |
এই মাদ্রাসাটিতে ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফত শিক্ষার সমন্বয়ে পাঠদান করা হয়। মাদ্রাসার প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী জালছা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৩২ সাল থেকে মাদ্রাসায় নিয়মিত ইসলামি জালছার আয়োজন হয়ে থাকে।[১০] এই জালছায় দেশের প্রধান ইসলামি ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করে থাকে।[১১]
মাদ্রাসায় প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থী, ১০৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসার ফ্রি বা স্বল্পমূল্যে থাকার জন্য মাদ্রাসা হোস্টেল রয়েছে, এতে প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারে। এছাড়াও মাদ্রাসা শিশুদের কুরআন শিক্ষার জন্য আলাদা নূরানি মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম স্তরে বিজ্ঞান ও সাধারণ বিভাগে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। মাদ্রাসার ফাজিল স্তরে আল-কুরআন, আল হাদিস প্রভৃতি বিষয় চালু রয়েছে, এবং ফাজিল শ্রেণীতে অনার্স ক্লাসের সুযোগ রয়েছে। মাদ্রাসার কামিল বিভাগের উচ্চতর গবেষণার সুযোগ রয়েছে। মাদ্রাসায় পাঠদানের সময় কুরআন ও হাদিস বিষয়ের উপর আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই মাদ্রাসার ইসলামের জাহেরি ও বাতেনি বিষয়ের উপরও পাঠদান করা হয়।
সুযোগ-সুবিধা
সম্পাদনা- জামে মসজিদ: মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রয়েছে। এখানে ছাত্র ও শিক্ষার্থীরা নামাজ পরতে পারে। ক্লাসের ফাকে নামাজ পরার জন্য দুপুরে ক্লাসের বিরতি থাকে।
- আল ফজল মুনীরি গাউছুল আজম সম্মেলন কক্ষ: এটা মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় মিলনায়তন, এখানে মাদ্রাসার বিশেষ প্রোগ্রামের আয়োজন হয়ে থাকে। দেশের বিশেষ দিনগুলো যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস প্রভৃতি দিন এই সম্মেলন কক্ষে আয়োজন হয়ে থাকে।
- কম্পিউটার ল্যাব: মাদ্রাসার একমাত্র কম্পিউটার ল্যাব ও ট্রেনিং সেন্টার। মাদ্রাসার যাবতীয় অনলাইন সংক্রান্ত কাজ এই ল্যাবে করা হয়। এছাড়াও ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এই ল্যাবের মাধ্যমেই প্রদান করা হয়।
- আল্লামা রুহুল আমিন (রহ.) গ্রন্থাগার: মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, এখানে কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন, বিজ্ঞান, কম্পিউটারসহ নানা বিষয়ের উপর বহু বই রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এই পাঠাগার থেকেই নিজেদের প্রয়োজন মেটায়।
- বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার: বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেন্দ্রিক নানা বইয়ের আয়োজন রয়েছে এই কর্নারে, স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত নানা তথ্য, ম্যাগাজিন, বইয়ের সংগ্রহশালা রয়েছে এই কর্নারে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সাফল্য ধরে রেখেছে রাউজান কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এম এ মাদ্রাসা"। www.kalerkantho.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ Cvoice24.com। "৯ দশক ধরে দীপ্তমান কাগতিয়া মাদরাসা"। Cvoice24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "কাগতিয়া মাদ্রাসা দ্বীনি শিক্ষার মডেল"। www.jugantor.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "কাগতিয়া মাদ্রাসা চট্টগ্রাম মহানগর ক্যাম্পাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালিত"। www.onlinetalaash.com। ২০২৩-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "সাফল্যের ধারাবাহিকতায় কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসা"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "কাগতিয়া মাদরাসার গৌরবময় ঐতিহ্যকে মহানগর ক্যাম্পাসেও ধরে রাখতে হবে"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "চট্টগ্রামের কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসার শতভাগ সাফল্য"। old.dhakatimes24.com। ২০২৩-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।
- ↑ "কাগতিয়া মাদ্রাসার একটি পোস্টার"। কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৫-০৫-০৩)। "কাগতিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসার সালানা জলসা শনিবার"। জাগো নিউজ। ১৬ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "কাগতিয়া মাদ্রাসার এনামী জলসা ১২ নভেম্বর"। banglanews24.com। ২০১৬-১০-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪।