কলসী
কলসী বা কলস তরল পদার্থ ধারণের একটি গৃহস্থালী পাত্র। এটি দৃশ্যতঃ গোলাকার পাত্র, যার সরু গ্রীবা রয়েছে এবং গ্রীবার শেষে রয়েছে একটি গোলকার মুখ। গোলাকার মুখের অংশ বাইরের দিকে কিছুটা প্রসারিত; একে বলা হয় কানা। কখনো কখনো মাটিতে সুস্থিত থাকার স্বার্থে ফাঁপা গোলকের নিম্নভাগ সমতল করা হয়। পানি ধারণের জন্য কলসি ব্যবহৃত হয়। কলসির ভিন্ন রূপ সোরাই।
সাধারণত কলসি অ্যালুমিনিয়াম অথবা মাটির তৈরি হয়। কলসী পিতল এবং কাশার তৈরিও হতে পারে। মাটির কলসিতে ধারণকৃত পানি অন্য পদার্থ দিয়ে কলসির তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা থাকে।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাবর্তমানে কলসী মাটির আর অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি হলেও একসময় পিতলের কলসির প্রচলন ছিল বেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন প্রকরণ ও প্রকারের কলসি ব্যবহারের কথা জানা যায়। ২০১১ সালে ইসরাইলে ১৩শ শতাব্দীর কলসের সন্ধান পাওয়া যায়। মৌর্য থেকে গুপ্তযুগে কলসি ব্যবহারের কথা জানা যায়। আড়াই হাজার বছর আগেও কলসি ব্যবহারের প্রচলন ছিল। তখন নানা ধরনের মৃৎপাত্র ব্যবহার করা হত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে থালা, পানীয় পাত্র, হাড়ি, কলসি, ঢাকনি, প্রদীপ, বাটি, সুরা পাত্র, ছোট ঘট, কুজো ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু কিছু মৃৎপাত্রের গঠন রীতিতে মহোঞ্জাদারোর মৃৎপাত্রের সাথে সাদৃশ্য বিদ্যমান। বৈদিক যুগে আর্যরা এসব সামগ্রী স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতো। পরবর্তী সময়ে এগুলো একবার ব্যবহার করার রীতি প্রচলিত হয়। চন্দ্রকেতুগড়ের লোকেরাও এ রীতি গ্রহণ করে। তাই এখানকার সর্বত্র অসংখ্য মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া যায়। স্বর্ণের কলসি ব্যবহারের কথাও জানা যায়।
বাংলা সাহিত্যে অবস্থান
সম্পাদনাকলস বা কলসী শব্দের উদ্ভব কীভাবে হয়েছে তা এখনও অজানা। বাংলা সাহিত্যের শব্দ হিসেবে কলস অনেক আগে থেকেই প্রচলন ছিল। চিরায়ত গ্রাম বাংলার নারীদের হাত ধরেই উদ্ভব হয়েছে কলসী নামক আর একটি শব্দের। তাই কলসিকে আমরা চলিত, কথ্য কিংবা আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারি। কবি সাহিত্যিকদের হাত ধরে পরবর্তীতে কলসী শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। "আমার কাংখের কলসি জলে গিয়াছে ভাসি, মাঝিরে তোর নৌকার ঢেউ লাগিয়ারে" কিংবা "কলসী জনম গেল জল ভরতে ভরতে কলসী পারলো না এক ফোঁটা জল খাওয়াইতে" এমন অনেক গানের কথায় আমরা কলসির ব্যবহার দেখতে পাই।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Definition of EWER"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৪।