করিম উদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

করিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী, ৬ নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সফল রাজনীতিবিদ। তিনি লালমনিরহাট-২ (তৎকালীন রংপুর-৬)[] আসন থেকে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পকিস্তান প্রাদেশিক সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর একই আসন থেকে ১৯৭৩-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[] তিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার উপজেলা কালীগঞ্জের জন্ম থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো প্রতিটা ক্ষেত্রেই তার অবদান লেগে আছে। অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি নিজ এলাকায়। স্বাধীন বাংলাদেশে লালমনিরহাট জেলায় এক বিরাট জনসম্মেলনে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলার সর্বপ্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯১ সালে রংপুর মেডিকেলে মারা যান। বর্তমানে তার ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ জায়গায় স্বশিক্ষিত হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বড় ছেলে নুরুজ্জামান আহমেদ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[]

করিম উদ্দিন আহমেদ
১৯৭০ পকিস্তান প্রাদেশিক সংসদের সদস্য
১৯৭৩-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
1973
ব্যক্তিগত বিবরণ
মৃত্যু২৮ আগস্ট ১৯৯১(1991-08-28) (বয়স ৬৮)
মাতানেছাবি বেওয়া
পিতামৌলভী আজিম উদ্দিন আহমদ
পেশাপাট ও তামাক ব্যবসা[]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

করিম উদ্দিন আহমেদ লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাশীরাম গ্রামে ১৯২৩ সালের ১৯শে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা ছিলেন মৌলভী আজিম উদ্দিন আহমদ এবং মা নেছাবি বেওয়া। তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় মদনপুর বৈরাতীর নিলাম্বর পণ্ডিতের পাঠশালায় পরবর্তীতে গঙ্গাচড়ার চিলাখাল পাইকান মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। এরপর ভর্তি হন তুষভাণ্ডার উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে তিনি দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।[]

মাড়োয়ারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে ১৯৪৫ সালে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে নিজেই পাট ও তামাক ব্যবসায় যুক্ত হন।[]

সমাজসেবা

সম্পাদনা

করিম উদ্দিন আহমেদ তার জীবদ্দশায় কালীগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রী কলেজ, করিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও করিমপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়াও তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশেও ভূমিকা পালন করেন।[]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান

সম্পাদনা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে করিম উদ্দিন আহমেদ কালীগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং কালীগঞ্জে মুক্তিবাহিনী গঠনে ভূমিকা পালন করেন।[] তার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর কার্যালয় স্থাপন করে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। কালীগঞ্জ মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পাকিস্তানি বাহিনী কালীগঞ্জ দখল করার পর তিনি ভারতের কোচবিহারে চলে যান এবং সেখানে মুক্তিবাহিনীর দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এসময় তিনি উত্তরাঞ্চলীয় মুক্তিবাহিনীর সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতি

সম্পাদনা

ব্রিটিশ বিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলনে মুকুন্দ দাসের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করার সময় করিম উদ্দিন আহমেদ গ্রেফতার হন।[] ১৯৫৪ সালে ইউনিয়ন বোর্ডে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। টানা ১৬ বছর ইউনিয়ন বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেন। লালমনিরহাট-২ আসন থেকে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পকিস্তান প্রাদেশিক সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর একই আসন থেকে ১৯৭৩-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মৃত্যু

সম্পাদনা

করিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৮ আগস্ট ৬৮ বছর বয়সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "কালীগঞ্জ উপজেলা"http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৬ 
  2. ""List of 1st Parliament Members"" (পিডিএফ)। Bangladesh Parliament (in Bengali).। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  3. jugantor.com। "প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে জাতীয় পার্টি, আ'লীগ চায় ধরে রাখতে - রাজনীতি - Jugantor" 
  4. খুরশীদুজ্জামান, আহমেদ (২০১৭)। https://shikshabarta.com/133532/  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)