কম এল শকাফা মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থিত একটি সমাধিস্থল যা ১৯০০ সালে আবিষ্কৃত হয়। মধ্যযুগের ৭টি আশ্চর্যজনক নির্দশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন হচ্ছে কম এল শকাফা। সমাধিস্থলের একটা অংশের নাম "হল অভ কারক্যাল্লা" যেখানে ২১৫ খ্রিষ্টাব্দের সম্রাট কারক্যাল্লার ঘোড়ার অস্থি আছে।[১]

কম এল শকোফা সমাধিস্থল
লোফাস কিরামেইকস (গ্রীক)
রা-ক্বেদিল (মিশরীয়)
কম এল শকোফা
মানচিত্র
স্থানাঙ্ক৩১°১০′৪৩″ উত্তর ২৯°৫৩′৩৫″ পূর্ব / ৩১.১৭৮৫৫৮° উত্তর ২৯.৮৯২৯৫৪° পূর্ব / 31.178558; 29.892954
অবস্থানAlexandria, Egypt
ধরনকবর, সমাধি কক্ষ, নেক্রোপলিস
উচ্চতা১০০ ফুট
শুরুর তারিখ২য় শতক

ইতিহাস সম্পাদনা

এল কম শকাফা ভূগর্ভস্থ সমাধিস্থানটির ব্যবহার শুরু হয় দ্বিতীয় শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে এবং পরবর্তী ২০০ বছর ধরে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। সমাধিক্ষেত্রটি মিশরীয়, গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির সংমিশ্রণযুক্ত। ‘কম এল শকাফা’ নামটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘ভাঙ্গা টুকরার স্তুপ’।[২] প্রাচীনকালে এই স্থানটি ভাঙ্গাচোরা মাটির পাত্রে পরিপূর্ণ ছিল। এসব মাটির পাত্র সাধারণত মদ পানে ও বিভিন্ন খাবার খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। মৃতের আত্মীয়রা যারা এই সমাধিস্থান দেখতে আসতো তারাই সেসব পাত্র এখানে ফেলে যেত। যার ফলে স্থানটি পরিত্যক্ত এসব ভাঙ্গা মাটির পাত্রের স্তুপে পরিণত হয়েছিল।

গবেষকদের মতে, স্থানটি প্রথমে শুধু একটি নির্দিষ্ট পরিবারের পারিবারিক সমাধিস্থান হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু পরে এটা আরো বড় আকারের করা হয় ও অন্যদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে কম এল শকাফাই কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার একমাত্র সমাধিস্থান নয়। বরং এটি ছিল ‘মৃতের নগরী’ নামে পরিচিত বিশাল নেক্রোপলিসের একটি অংশ। এই নেক্রোপলিস বা মৃতের নগরীটি ছিল শহরের পশ্চিম দিকে যা এক সময় ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু মাটির নিচেরর কম এল শকাফা টিকে থাকে।

বর্ণনা সম্পাদনা

 
কবরগাহ যার দেয়ালে মিশরীয় দেবতা ও পুরোহিতদের চিত্র অঙ্কিত আছে।

এক বিশাল সমাধিস্তম্ভ কম এল শকাফার ভূমির ঠিক উপরেই ছিল। বর্তমানে সেখানে শুধু ১৮ ফুট চওড়া গোলাকার একটি কাঠামো টিকে আছে যা সরাসরি মাটির নিচে চলে গেছে। ধারণা করা হয় কাঠামোটি মৃতদেহ ভূগর্ভে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো।[৩] এই কাঠামোটিতে কিছু জানালা আছে যার মাধ্যমে বাইরের আলো মাটির নিচে যাওয়ার ঘোরানো সিঁড়িতে পড়তো। সমাধিস্থানের উপরের স্থানে তেমন কিছু নেই। এটিই এই সমাধিস্থানের মূল অংশ মাটির নিচের সেই সমাধিকক্ষগুলোতে প্রবেশের একমাত্র পথ। সমাধিকক্ষগুলো এই স্থানের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। এটা গ্রিক মন্দিরের আদলে তৈরি। সমাধিস্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো এখানে আছে।

যে সিঁড়ি দিয়ে সমাধিকক্ষগুলোয় যাওয়া যায় সেটা যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক সেখানেই দুটি স্তম্ভের মাঝে রয়েছে মন্দিরে প্রবেশের প্রথম ঘর। এই ঘরটির পেছনে রয়েছে আরেকটি কক্ষ যেখানে আছে চমৎকার একটি শিল্পকর্ম, পুরুষ ও নারীর বিজড়িত একটি মূর্তি। ধারণা করা হয় এটা এই সমাধিস্থানের প্রথম পরিবারের দুজন সদস্যের মূর্তি। মূর্তিটি মিসরীয় ধাঁচে তৈরি হলেও পুরুষটির মাথা তৈরি করা হয়েছে গ্রিক ধাঁচে। একইভাবে নারী মূর্তিটির মাথা তৈরি করা হয়েছে রোমান ধাঁচে। একটি ভাস্কর্যের মধ্যেই ঘটেছে তিন সংস্কৃতির মেলবন্ধন।

এখানে আছে দুটি সাপের ভাস্কর্য যা মাঝের স্থানটিতে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, এটা ‘ভালো আত্মা’ নামে পরিচিত গ্রিক ‘আগাথোডাইমনের’ আলোকে তৈরি করা হয়েছে। এর চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো এটিও অলঙ্কৃত হয়েছে রোমান ও মিশরীয় সংস্কৃতির নানা উপাদানে। এই সাপ দুটির ঠিক মাথার উপরেই রয়েছে গ্রিক পুরাণের কুখ্যাত মেডুসার, এই স্থানের অনাহূত আগন্তুকদের হাত থেকে এই সমাধিস্থানটিকে রক্ষা করার জন্যে।

প্রথমদিকে সমাধিস্থানের এই মাঝের জায়গাটি ছিল ইংরেজি ইউ অক্ষর আকৃতির একটি করিডর। তবে ধীরে ধীরে এখানে সমাধিস্থ মৃতদেহের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আরো কক্ষ ও হলঘর তৈরি করা হয়। ফলে গোটা স্থানটি এক গোলকধাঁধার রূপ নেয়। মাঝের স্থানটির ঠিক নিচেই রয়েছে আরেকটি স্তর। তবে মাটির নিচের এই স্তরটি প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে।

কম এল শকাফা সমগ্র মিশরের সবচেয়ে সেরা সংরক্ষিত নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির অনন্য মিশ্রণ এই স্থানকে অন্য সব স্থানের তুলনায় আলাদা করেছে। আর এজন্যই এই স্থানটিকে মধ্যযুগীয় সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Zahraa Adel Awed (২০০৬-০৫-১৮)। "The catacombs of Kom El Shoqafa, the Mound of Shards, Part III: The Hall of Caracalla (Nebengrab)"। Tour Egypt। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২২ 
  2. "The catacombs of Kom El Shoqafa in Alexandria, Egypt"। Vantage Travel। জানুয়ারি ১, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১২ 
  3. Planet, Lonely। "Catacombs of Kom ash-Shuqqafa in Alexandria, Egypt"Lonely Planet (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৭