ঔষধসঞ্চরণবিজ্ঞান
ঔষধসঞ্চরণবিজ্ঞান (ইংরেজি Pharmacokinetics, সংক্ষেপে PK) বলতে ঔষধবিজ্ঞানের একটি শাখা বোঝায় যেখানে দেহ কর্তৃক ঔষধ (বা অন্য কোনও বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থ) শোষণ বা গ্রহণ, দেহের ভেতরে শোষিত বা গৃহীত ঔষধের জৈব-রূপান্তর, দেহকলাতে ঔষধ ও তার বিপাকীয় উৎপাদের বিস্তরণ, এবং অতিবাহিত সময়ের সাপেক্ষে দেহ থেকে ঔষধ ও তার বিপাকীয় উৎপাদের নিষ্কাশন বা রেচনের বিষয়গুলি অধ্যয়ন ও গবেষণা করা হয়। ইংরেজি ভাষাতে "ফার্মাকোকাইনেটিকস" পরিভাষাটি দিয়ে উল্লিখিত সমস্ত প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়াগুলি গবেষণাকারী বিজ্ঞান উভয়কেই নির্দেশ করা হয়।[১]
ডাক্তারি ঔষধের পাশাপাশি কীটনাশক, খাদ্যের স্বাদ-গন্ধ-রুচিবর্ধনের জন্য সংযোজিত দ্রব্য, প্রসাধনী দ্রব্য, ইত্যাদির সঞ্চরণ প্রক্রিয়াও এই বিজ্ঞানে আলোচিত হয়। ঔষধ সঞ্চরণ বিজ্ঞানীরা দেহে বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থের রাসায়নিক বিপাক কীভাবে ঘটে এবং দেহে শোষিত হবার পর থেকে দেহ থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃত হওয়া পর্যন্ত এর ভাগ্যে কী ঘটে, তা আবিষ্কার করতে প্রচেষ্টা চালান।
ঔষধসঞ্চরণবিজ্ঞান হল কী করে একটি জীবদেহ একটি ঔষধকে প্রভাবিত করে, তার গবেষণা। অন্যদিকে ঔষধক্রিয়াবিজ্ঞান হল একটি ঔষধ কী করে একটি জীবদেহকে প্রভাবিত করে, তার গবেষণা। কোনও ঔষধের মাত্রা, উপকারিতা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মতো ব্যাপারগুলি উপর্যুক্ত দুইটি বিজ্ঞানের সমন্বয়ে বুঝতে পারা যায়। এজন্য ঔষধের ঔষধসঞ্চরণ ও ঔষধক্রিয়া প্রতিমান (PK/PD model) নির্মাণ করা হয়।
ঔষধ সঞ্চরণ প্রক্রিয়াগুলির প্রতিমান বা মডেল হিসেবে বহু-প্রকোষ্ঠীয় প্রতিমানটি বাস্তব বিশ্বের সবচেয়ে কাছাকাছি হলেও এটির গাণিতিক সূত্রায়ন জটিল, তাই সচরাচর এক-প্রকোষ্ঠীয় প্রতিমান বা দ্বি-প্রকোষ্ঠীয় প্রতিমানই ব্যবহৃত হয়। দ্বি-প্রকোষ্ঠীয় প্রতিমানে একটি প্রকোষ্ঠ হচ্ছে কেন্দ্রীয় প্রকোষ্ঠ যেখানে রক্ত, সর্বব্যাপী দেহকলা ও কোষবহিঃস্থ তরলে ঔষধের দ্রুত বিতরণঘটে। অপরটি হল প্রান্তীয় প্রকোষ্ঠ যেখানে রক্ত কম যায় এমন বিভিন্ন ধরনের দেহকলা, যেগুলির একেকটির ঔষধাসক্তি একেক রকম ও যেগুলিতে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির ঔষধ শোষণ ঘটে।
একটি ঔষধ বা বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থ দেহে প্রবেশের পরে সাধারণত বেশ কয়েকটি দশা অতিক্রম করে। এগুলি হল মুক্তি[২][৩] (Liberation), শোষণ (Absorption), বিতরণ (Distribution), বিপাক (Metabolism) ও নিষ্কাশন বা রেচন (Excretion) এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিষক্রিয়া (Toxicity)। এগুলিকে ইংরেজিতে আদ্যক্ষরা LADMET দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Nordberg M, Duffus J, Templeton DM (১ জানুয়ারি ২০০৪)। "Glossary of terms used in toxicokinetics (IUPAC Recommendations 2003)"। Pure and Applied Chemistry। 76 (5): 1033–1082। ডিওআই:10.1351/pac200476051033।
- ↑ Koch HP, Ritschel WA (১৯৮৬)। "Liberation"। Synopsis der Biopharmazie und Pharmakokinetik (German ভাষায়)। Landsberg, München: Ecomed। পৃষ্ঠা 99–131। আইএসবিএন 3-609-64970-4।
- ↑ Ruiz-Garcia A, Bermejo M, Moss A, Casabo VG (ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "Pharmacokinetics in drug discovery"। Journal of Pharmaceutical Sciences। 97 (2): 654–90। ডিওআই:10.1002/jps.21009। পিএমআইডি 17630642।