মাওলানা ওবাইদুল আকবর (১৯১৫-১৯৭২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, লেখক ও ব্যবসায়ী। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ফটিকছড়ি-হাটহাজারী আসনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১]

মাওলানা ওবাইদুল আকবর
ফটিকছড়ি-হাটহাজারী আসন
কাজের মেয়াদ
১৯৫৪ – ১৯৫৯
পূর্বসূরীমাওলানা বজলুল করিম
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯১৫
চট্টগ্রাম উত্তর জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন মন্দাকিনী গ্রাম
মৃত্যু১৯৭২
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রাজনৈতিক দলনেজামে ইসলাম পার্টি
সরকারি প্রজ্ঞাপন

জীবনী সম্পাদনা

ওবাইদুল আকবর ১৯১৫ সালে মতান্তরে ১৯১৭ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন মন্দাকিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণনাম আবুল মোজাফফর গোলাম মাওলা মুহাম্মদ ওবাইদুল আকবর। তার পিতা মাওলানা বজলুল করিম আল আহমদী আল-কাদেরী (প্রকাশ মাওলানা করিম বখশ) ছিলেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের বড় মাওলানা হযরত শাহ আহমদুল্লাহ (রহঃ) এর একজন উল্লেখযোগ্য অনুসারী।

পিতার তত্ত্বাবধানে পারিবারিকভাবে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। পরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের জন্য তিনি কাটিরহাট স্কুলে ভর্তি হন। তবে পাশাপাশি তিনি মাওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদীর সান্নিধ্যে 'ফনুনাত' বা শাস্ত্রীয় নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম থেকে ১৯৩৪ সালে আলিম এবং ১৯৩৬ সালে ফাজিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উন্নীত হন। ১৯৩৮ সালে তিনি উপমহাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, কলকাতা বা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পরীক্ষায় (বর্তমানে কামিল) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে 'মমতাজুল মুহাদ্দেসিন' খেতাব অর্জন করেন।

তিনি চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসা থেকে সাধারণ শিক্ষা লাভ করেন যা বর্তমানে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম নামে পরিচিত। তিনি ভারতের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম, এ, পাশ করে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হন। আরবি, বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় তার ছিল বিরল দখল।

রাজনীতির পাশাপাশি তার পেশাগত পরিচয় ছিল একজন টিম্বার ব্যবসায়ী হিসাবে যার সাথে তিনি আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। ঢাকার ১৫ নং ফ্রেঞ্চ রোডে 'কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ' নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত ছিল। ১৯৫৯ সালে তাকে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তান কাঠ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের একজন সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তিনি টিম্বার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে স্বশরীরে সাক্ষাৎ করেন এবং স্থানটি পুনরায় ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দের সুপারিশ নিয়ে নেন।

ওবাইদুল আকবর নাজিরহাট কলেজ, নাজিরহাট আহমদীয়া আলীয়া মাদ্রাসা ও মন্দাকিনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

রাজনীতি, ধর্মচর্চা ও ব্যবসার পাশাপাশি মাওলানা ওবাইদুল আকবর একজন লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। লাহোর থেকে প্রকাশিত তৎকালীন ইসলামিক লিটারেচার নামক ম্যাগাজিনের তিনি একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। তার ওরেশনস ওফ মুহাম্মদ (এসএম) গ্রন্থ লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়। বইটিতে বিভিন্ন সময়ে দেয়া হযরত মুহাম্মদ ( সা ) এর ২৮ টি বক্তৃতার মূল টেক্সট এবং সরল ও পরিশীলিত ইংরেজি অনুবাদ স্থান পেয়েছে। [২]উর্দুতে লেখা মৌলভি ছে খেতাব কবিতাগ্রন্থে তিনি মুসলমানদের ঐক্যের লক্ষ্যে সমালোচনা ও সংস্কারমূলক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। 'সুন্নতে হাসনা' নামে আরবিতে লেখা তাঁর একটি পাণ্ডুলিপির ব্যাপারেও জানা যায়।

ওবাইদুল আকবর ১৯৭২ সালের ৯ ই অগাস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. পূর্বতন-সংসদ-সদস্যগণ, hathazari.chittagong.gov.bd (৩ জুলাই ২০২৩)। "হাটহাজারি উপজেলা"hathazari.chittagong.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০২৩ 
  2. Naqvi, Ali Raza (১৯৮৮)। "Review of SERMONS OF THE PROPHET"Islamic Studies27 (4): 369–371। আইএসএসএন 0578-8072