ঐক্যের মূর্তি

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য

ঐক্যের মূর্তি (স্ট্যাচু অব ইউনিটি নামেও পরিচিত) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা বল্লভভাই পটেলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে নির্মিত একটি শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য[২]  ১৮২ মিটার লম্বা এই ভাস্কর্য বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য।[৩] যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু।

ঐক্যের মূর্তি
৩১ অক্টোবর ২০১৮ সালে তোলা
ঐক্যের মূর্তি গুজরাত-এ অবস্থিত
ঐক্যের মূর্তি
গুজরাতে ঐক্যের মূর্তির অবস্থান
ঐক্যের মূর্তি ভারত-এ অবস্থিত
ঐক্যের মূর্তি
গুজরাতে ঐক্যের মূর্তির অবস্থান
মানচিত্র
স্থানাঙ্ক২১°৫০′১৭″ উত্তর ৭৩°৪৩′০৯″ পূর্ব / ২১.৮৩৮০° উত্তর ৭৩.৭১৯১° পূর্ব / 21.8380; 73.7191
অবস্থাননর্মদা জেলা, গুজরাত, ভারত
নকশাকারকরাম ভি সুতার
ধরনমূর্তি
উপাদানকাঠামোবদ্ধ ইস্পাত, চাঙ্গা কংক্রিট, ব্রোঞ্জ আবৃত[১]
উচ্চতা
  • মূর্তি: ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফু)
  • ভিত্তিসহ: ২৪০ মিটার (৭৯০ ফু)[১]
শুরুর তারিখ৩১ অক্টোবর ২০১৩ (2013-10-31)
খোলার তারিখ৩১ অক্টোবর ২০১৮; ৫ বছর আগে (2018-10-31)
নিবেদিতভারত
ওয়েবসাইটstatueofunity.in
নির্মাণ কাজ 2016 তে

শুরুতে ভারত সরকার এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ₹ ৩,০০১ কোটি (ইউএস$৪২০ মিলিয়ন) নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের অক্টোবরে লারসেন এন্ড টুব্রো তার সর্বনিম্ন দর ₹ ২,৯৮৯ কোটি দিয়ে নকশা, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজ পায়। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়[৪][৫] এবং ২০১৮ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীতে মূর্তির উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী[৬]

অবস্থান সম্পাদনা

এটি ভারতের গুজরাত রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে নর্মদা নদীর পাশে অবস্থিত। ভাস্কর্যটি ২০,০০০ বর্গ মিটারেও বেশি এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং ১২ বর্গ কিঃ মিঃ ক্ষেত্র বিশিষ্ট একটি কৃত্রিম হ্রদ দ্বারা পরিবেষ্টিত।[৭]

কাঠামো সম্পাদনা

ভাস্কর্যটি তিন স্তরবিশিষ্ট কাঠামোয় বিন্যস্ত। অভ্যন্তরীণ স্তরে ১২৭ মিটার দুটি উঁচু টাওয়ার আছে, যা ভাস্কর্যের বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় স্তরটি স্টিলের কাঠামো এবং তৃতীয় স্তর বা ভাস্কর্যের উপরিভাগ আট মিলিমিটার ব্রোঞ্জ দিয়ে মোড়ানো।[১] ভাস্কর্যের আপাদমস্তক দর্শনের জন্য দুটি লিফট আছে। প্রতি লিফট ২৬ জন বহন করতে পারে। লিফটে আধা মিনিটের মধ্যে ভাস্কর্যের শীর্ষ স্থানে পৌঁছানো সম্ভব। উচ্চতার দিক থেকে এর আগে সর্বোচ্চ প্রতিমূর্তির রেকর্ড ছিল চীনের। বুদ্ধের বসন্ত মন্দির নামের মূর্তিটির উচ্চতা ১৫৩ মিটার। বর্তমানে এটির বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার মূর্তি।[৮]

ভাস্কর্য নির্মাণ সম্পাদনা

প্রথমে এলঅ্যান্ডটি কোম্পানি ১৯৪৯ সালের প্যাটেলের একটি আলোকচিত্রকে ভিত্তি হিসেবে নেয়। আলোকচিত্রটির অনুরূপ ১৮ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য তৈরি করেন ভাস্কর রাম ভি সুতার। সেই ভাস্কর্য প্যাটেলের জন্মস্থান গুজরাতের আনন্দ জেলার কারামাসাদে নিয়ে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। মূলত, প্যাটেলের বাস্তব জীবনের সঙ্গে ভাস্কর্যের মিল আছে কি না, সেটা যাচাইয়ে স্থানীয় জনতার মতামত ও পরামর্শের জন্য এটি করা হয়েছিল। জনতার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করে রাম সুতার ৩০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। বিভিন্ন গোষ্ঠীর পরামর্শে সেটাই চূড়ান্ত করা হয়। ভাস্কর্যে ব্যবহৃত ব্রোঞ্জের কাজ করেছে চীনের জিয়াংজি টোকাইন কোম্পানি (জেটিকিউ)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও এলঅ্যান্ডটির কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাম সুতার চীনে গিয়ে জেটিকিউয়ের কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এই কাজের জন্য চারবার চীনে যেতে হয় সুতারকে। বিভিন্ন সাইজের প্রায় সাত হাজার প্লেট ভাস্কর্যটিতে স্থাপন করা হয়েছে। এসব কাজ পর্যবেক্ষণে ছিলেন এলঅ্যান্ডটি প্রকল্পের পরিচালক মুকেশ রাভাল।

প্রচার সম্পাদনা

 
ভারতের প্রজাতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পিতা হিসেবে প্যাটেলকে বিবেচনা করা হয়

সরদার বল্লভভাই প্যাটেল রাষ্ট্রীয় একটা ট্রাস্ট (এসভিপিআরইটি), গুজরাতের সরকার নির্মিত একটি বিশেষ উদ্দেশ্য যানবাহনে করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত জুড়ে প্রচার কার্যক্রম চালায়। ভাস্কর্য এবং অন্যান্য কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় লোহাগুলি সারা ভারতে গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে তাদের ব্যবহৃত কৃষি উপকরণ দান করার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল।[৯] এসভিপিআরইট ভারত জুড়ে এই লোহা সংগ্রহের জন্য ৩৬ টি অফিস স্থাপন করে, ধারণা করা হয় ৫ লক্ষাধিক কৃষক এতে দান করে।[১০] এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছিল 'ঐক্যের মূর্তি আন্দোলন'।[১১][১২] ভাস্কর্য নির্মাণে ৬ লক্ষ গ্রাম লোহার টুকরা সংগ্রহের জন্য তিন মাস ধরে দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে ৫ হাজার টন লোহা সংগ্রহ করা হয়।[১৩] শুরুতে বলা হয়েছিল সংগৃহীত লোহা মূল মূর্তির নির্মাণে ব্যবহৃত হবে, যদিও পরবর্তিতে এই লোহা মূল মূর্তির পরিবর্তে এই প্রকল্পের অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়।[১৪]

পর্যটন সম্পাদনা

সরদার প্যাটেল ভাস্কর্যের নিচ থেকে ২৫ মিটার উঁচু বা আটতলার উঁচু সমস্থানে ৪ হাজার ৭৪৭ স্কয়ার মিটার আয়তনের প্রদর্শনী হল ও চলচ্চিত্র কেন্দ্র আছে। যেখানে প্যাটেলের জাতীয় জীবনের কৃতিত্ব চিত্রায়িত করা হবে। এটি খুব শিগগির বড় পর্যটন কেন্দ্র হবে। এই স্ট্যাচু ও এর আশপাশের পাহাড়ি বনাঞ্চল পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। ভাস্কর্য আরোহণে দুটি লিফটের মধ্যে একটি ১৩৫ মিটার উঁচুতে উঠবে। ছিদ্রযুক্ত জানালার সঙ্গে আছে চিত্তাকর্ষক গ্যালারি। প্রতিদিন ভাস্কর্যটি পরিদর্শনে তিন হাজার দর্শনার্থীকে অনুমতি দেওয়া হবে।

স্ট্যাচুর পাদদেশে আছে ভ্রমণকারীদের জন্য হাঁটার পথ, ফুট কোর্ট, বড় বাজার ও অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। স্ট্যাচুর অদূরে থ্রি স্টার হোটেল ও সেখানে ৫২টি কক্ষ আছে। ২৬৪ আসনের ক্যাফেটেরিয়া ও একটি গিফট শপ আছে। এ ছাড়া ৮০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। স্ট্যাচু অব ইউনিটি ঘিরে বিপুল পর্যটক আকর্ষণ করতে মোদি সরকারের পরিকল্পনা আছে। ভাদোদারা থেকে ৯০ কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যটকেরা আকাশপথে বা রেলপথে ভাদোদারা পৌঁছে যেতে পারবেন। পরে সেখান থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়া করা গাড়ি কিংবা বাসে করে ওই ভাস্কর্যস্থলে যেতে পারবেন।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Gujarat: Sardar Patel statue to be twice the size of Statue of Liberty"। CNN-IBN। ৩০ অক্টোবর ২০১৩। ২০১৩-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. Ashwani Sharma (১ নভেম্বর ২০১৪)। "14 Things You Did Not Know about Sardar Patel, the Man Who United India"Topyaps (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৪ 
  3. "Burj Khalifa consultant firm gets Statue of Unity contract"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। TNN। ২২ আগস্ট ২০১২। ২৭ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৩ 
  4. "L&T to build Statue of Unity, Centre grants Rs 200 crores." (ইংরেজি ভাষায়)। Indian Express। ১১ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৪ 
  5. "Gujarat govt issues Rs 2,97-cr work order to L&T for Statue of Unity"Business-Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১০-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-২৮ 
  6. "যেসব উঁচু ভাস্কর্যকে পেছনে ফেলল 'স্ট্যাচু অব ইউনিটি'"প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৪ 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৮ 
  8. "ভারতে ৬০ তলার সমান উঁচু ভাস্কর্য" 
  9. "For iron to build Sardar Patel statue, Modi goes to farmers" (ইংরেজি ভাষায়)। 
  10. "'District farmers to donate iron for Statue of Unity' - The Times of India"The Times Of India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩০ 
  11. "The Indian Republic"The Indian Republic (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৮ 
  12. "Pan-India panel for Modi's unity show in iron"The New Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৮ 
  13. "Statue of Unity: 36 new offices across India for collecting iron - The Times of India"The Times Of India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩০ 
  14. "Farmers' iron not to be used for Sardar Patel statue"dna (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ ডিসেম্বর ২০১৩। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা