এলজিবিটি

"লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার" এর জন্য প্রারম্ভিকতা

এলজিবিটি (বা জিএলবিটি) (ইংরেজি: LGBT বা GLBT) একটি নাম-আদ্যক্ষর। ১৯৯০-এর দশক থেকে এই আদ্যক্ষরটি পূর্বতন "গে কমিউনিটি"-র সংজ্ঞাবাচক নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সামগ্রিকভাবে "এলজিবিটি" বলতে বোঝায় "লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়ালট্রান্সজেন্ডার" অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী। ১৯৮০-এর দশকের মধ্য থেকে শেষ ভাগের মধ্যে "গে কমিউনিটি"-র পরিবর্তে "এলজিবি" আদ্যক্ষরটির ব্যবহার চালু হয়। এরপর ১৯৯০-এর দশকে "এলজিবিটি" আদ্যক্ষরটি গৃহীত হয়।[] উল্লেখ্য, "গে কমিউনিটি" শব্দটি সম্প্রদায়ের অনেকেরই যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করছিল না বলে মনে করা হচ্ছিল।[]

এলজিবিটি প্রকাশনা, গৌরব পদযাত্রা ও সম্পর্কিত অনুষ্ঠানগুলিতে (এমন ইতালির বোলোনা প্রাইড ২০০৮-এর এই মঞ্চে) এলজিবিটি আদ্যক্ষরটিকে বর্জন করে নতুন নতুন শব্দ নিয়মিতভাবে যোগ করা হচ্ছে।

"যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়-ভিত্তিক সংস্কৃতিগুলির" বৈচিত্র্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্য "এলজিবিটি" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে অ-বিষমকামী সমকামী, উভকামী বা রূপান্তরকামী কোনো ব্যক্তিকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[][] এই ধরনের অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি হিসেবে আদ্যক্ষরটির একটি জনপ্রিয় পাঠান্তরে ইংরেজি "কিউ" (Q) অক্ষরটি যুক্ত করা হয় যৌন অভিমুখিতার স্থলে কুইয়্যার (কিম্ভুত) বা কোয়েশ্চনিং (প্রশ্নবিদ্ধ) বোঝাতে (অর্থাৎ, "এলজিবিটিকিউ" বা "জিএলজিবিটিকিউ", ১৯৯৬ সাল থেকে নথিভুক্ত।[]

সংজ্ঞাবাচক নাম হিসেবে এই আদ্যক্ষরটি মূলধারায় পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কয়েকটি ইংরেজি-ভাষী দেশের অধিকাংশ "যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়-ভিত্তিক" কমিউনিটি সেন্টার ও গণমাধ্যম দ্বারা গৃহীতও হয়।[][]

তবে এই আদ্যক্ষরটি সমাজের সংশ্লিষ্ট অংশের অনেকেরই সমর্থন লাভে বঞ্চিত হয়।[] অন্যদিকে কোনো কোনো ইন্টারসেক্স ব্যক্তি নিজেদের এলজিবিটি গোষ্ঠীভুক্ত করতে চেয়ে আদ্যক্ষরটিকে "এলজিবিটিআই" পর্যন্ত প্রসারিত করার পক্ষে মত দেন (১৯৯৯ সাল থেকে নথিভুক্ত[])।[] আবার এক গোষ্ঠীর কেউ কেউ মনে করেন যে তাদের সঙ্গে অপর গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই জাতীয় আদ্যক্ষর ব্যবহার অপমানজনক।[] কারোর কারোর মতে রূপান্তরকামীরা "এলজিবি" গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।[১০] এই জাতীয় ধারণাগুলি "লেসবিয়ান ও গে বিচ্ছিন্নতাবাদ" তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। উক্ত তত্ত্ব অনুযায়ী, নারী ও পুরুষ সমকামীদের পৃথক সমাজ গঠন করা প্রয়োজন ও সাধারণভাবে তাদের যেসব গোষ্ঠীমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তা থেকেও বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন।[][১১] কেউ কেউ আবার এই শব্দটিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। তারা এটিকে রাজনৈতিকভাবে অতিরিক্ত রকম সঠিক শব্দ মনে করেন। তাদের মতে, এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একই ধূসর এলাকার আবদ্ধ করার এবং প্রধান গোষ্ঠীর ইস্যু ও প্রধান বিষয়গুলিকে সম গুরুত্ব প্রদানের একটি প্রয়াস মনে করেন।[১০][১২]

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৯৬০ সালের পূর্বে বিসমকামীহীনতার পক্ষে কোন সাধারণ শব্দের প্রচলন ছিল না। কাছাকছি শব্ যেটি ব্যবহৃত হত তা হল, তৃতীয় লিঙ্গ, যা ১৮৬০ সালেও ব্যবহৃত হয়েছে কোন কোন জায়গায়। তবে তা আমেরিকার সমাজে তখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।[১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮]

সমকামী শব্দটি সর্বপ্রথম ভালো অর্থে মোটেই ব্যবহার করা হয় নি। হোমোফাইল শব্দ কর্তৃক এটি স্থানান্তরিত হয় ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দিকে।[১৯][সন্দেহপূর্ণ ] এবং ১৯৭০ সালে গে শব্দ ব্যবহার প্রচলন হয়। পরবর্তীতে, সমকামি সমাজে গে শব্দটি গ্রহণযোগ্যতা পায়।[১৩] লারস উলেরস্টাম সেক্সুয়াল মাইনরিটি শব্দজোড়া ১৯৬০ সালের দিকে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। যা মূলতঃ জাতীয়তার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু শব্দের সাথে মিল রেখে প্রয়োগ করে করা হয়।[২০]

বিতর্ক

সম্পাদনা
 
বস্টন শহরে গৌরব পদযাত্রায় এলজিবিটি পরিবার।[২১]

এলজিবিটি বা জিএলবিটি আদ্যাক্ষর সকলের কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা পায় না।[] অনেকেই রূপান্তরলিঙ্গের ও রূপান্তরকামীদের লেসবিয়ান, গে ও বাইসেক্সুয়ালদের (এলজিবি) সাথে একই তালিকায় ফেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।[১০] তাদের পক্ষে যুক্তি হল, রূপান্তরলিঙ্গ ও রূপান্তরকামিতা যৌন পরিচয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যৌন অভিমুখিতার সাথে নয়[২২]

এলজিবি ইস্যুগুলো যৌন অভিমুখিতাকে কেন্দ্র করে, যৌন পরিচয় নিয়ে নয়। মূলত এলজিবি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই পার্থক্য তুলে ধরা হয়।[২২] এলজিবি সম্প্রদায় সমলিঙ্গের বিবাহের আইনি অধিকার এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে, যা রূপান্তলিঙ্গের মানুষের ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই প্রয়োগ করার মত নয়।[২২][২৩]

বাংলাদেশ ও ভারতে

সম্পাদনা

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় স্থানে সমকামীরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ভূষিত হওয়ার বিধান বিদ্যমান। তবে উভয়স্থানে উভলিঙ্গ ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।[২৪]

 
The inclusivity of the LGBTQ community.

পাদটীকা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Acronyms, initialisms & abbreviations dictionary, Volume 1, Part 1 Gale Research Co., 1985, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১০৩-০৬৮৩-৭. Factsheet five, Issues 32-36, Mike Gunderloy, 1989
  2. Swain, Keith W. (২১ জুন ২০০৭)। "Gay Pride Needs New Direction"Denver Post। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৫ 
  3. Shankle, Michael D. (২০০৬)। The Handbook of Lesbian, Gay, Bisexual, and Transgender Public Health: A Practitioner's Guide To Service। Haworth Press। আইএসবিএন 1-56023-496-2 
  4. Aragon, Angela Pattatuchi (২০০৬)। Challenging Lesbian Norms: Intersex, Transgender, Intersectional, and Queer Perspectives। Haworth Press। আইএসবিএন 1-56023-645-0। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৫ 
  5. The 2008 Community Center Survey Report: Assessing the Capacity and Programs of Lesbian, Gay, Bisexual, and Transgender Community Centers ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মে ২০০৯ তারিখে August 29, 2008, Terry Stone, CenterLink (formerly The National Association of Lesbian, Gay, Bisexual and Transgender Community Centers).Report link[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. National Lesbian & Gay Journalists Association: Stylebook Supplement on LGBT Terminology, NLGJA 2008. Stylebook Supplement
  7. Finnegan, Dana G.; McNally, Emily B. (২০০২)। Counseling Lesbian, Gay, Bisexual, and Transgender Substance Abusers: Dual Identities। Haworth Press। আইএসবিএন 1-56023-925-5 
  8. William L. Maurice, Marjorie A. Bowman, Sexual medicine in primary care, Mosby Year Book, 1999, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১৫১-২৭৯৭-০
  9. Bloodsworth-Lugo, Mary K. (২০০৭)। In-Between Bodies: Sexual Difference, Race, and Sexuality। SUNY Press। আইএসবিএন 0-7914-7221-3 
  10. Wilcox, Melissa M. (২০০৩)। Coming Out in Christianity: Religion, Identity, and Community। Indiana University Press। আইএসবিএন 0-253-21619-2 
  11. Mohr, Richard D. (১৯৮৮)। Gays/Justice: A Study of Ethics, Society, and Law। Columbia University Press। আইএসবিএন 0-231-06735-6। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৫ 
  12. Halpin, Mikki (২০০৪)। It's Your World—If You Don't Like It, Change It: Activism for Teenagers। Simon and Schuster। আইএসবিএন 0-689-87448-0 
  13. Ross, E. Wayne (২০০৬)। The Social Studies Curriculum: Purposes, Problems, and Possibilities। SUNY Press। আইএসবিএন 0-7914-6909-3 
  14. Kennedy, Hubert C. (1980) "The "third sex" theory of Karl Heinrich Ulrichs", Journal of Homosexuality. 1980–1981 Fall–Winter; 6(1–2): pp. 103–1
  15. Hirschfeld, Magnus, 1904. Berlins Drittes Geschlecht ("Berlin's Third Sex")
  16. Ellis, Havelock and Symonds, J. A., 1897. Sexual Inversion.
  17. Carpenter, Edward, 1908. The Intermediate Sex: A Study of Some Transitional Types of Men and Women ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ মে ২০২৩ তারিখে.
  18. Duc, Aimée, 1901. Sind es Frauen? Roman über das dritte Geschlecht ("Are These Women? Novel about the Third Sex")
  19. Minton, Henry (২০০২)। Departing from Deviance। University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-53043-4। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-০১ 
  20. Ullerstam, Lars (১৯৬৭)। The Erotic Minorities: A Swedish View। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৫ 
  21. Klesse, Christian (২০০৭)। The Spectre of Promiscuity: Gay Male and Bisexual Non-Monogamies and Polyamories। Ashgate Publishing, Ltd.। আইএসবিএন 0-7546-4906-7 
  22. Ullerstam, Lars (২০০৪)। Bisexuality and Transgenderism: InterSEXions of The Others.। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৭ 
  23. "James Roffee & Andrea Waling Rethinking microaggressions and anti-social behaviour against LGBTIQ+ Youth"। Safer Communities15: 190–201। ডিওআই:10.1108/SC-02-2016-0004 
  24. Welle (www.dw.com), Deutsche। "সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিপক্ষে বাংলাদেশ | DW | 06.10.2017"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-০৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা