মুহাম্মদ রোস্তম কায়ানী (১৮ অক্টোবর ১৯০২ -১৫ নভেম্বর ১৯৬২ ) বিচারপতি এম.আর. কায়ানী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পাকিস্তানের অন্যমত আইনজ্ঞ, প্রধান বিচারপতি ( ১৯৫৮ -১৯৬২)। জেনারেল আইয়ূব খানের স্বৈরাচারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান নেয়ার জন্য বিচারপতি কায়ানী স্মরণীয় হয়ে আছেন।[১][২]

এম আর কায়ানী

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মুহাম্মদ রোস্তম কায়ানী ১৮ অক্টোবর ১৯০২ কোহাতের শাহপুর গ্রামের খানবাহাদুর আবদুল সামাদ কায়ানীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কোহাট ইসলামিয়া হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং এডওয়ার্ড কলেজ, পেশোয়ার থেকে এফ. এ. পাস করেন। কায়ানী সরকারি কলেজ, লাহোর থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মুহাম্মদ রোস্তম কায়ানী একজন সিভিল সার্ভেন্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ আট বছর নির্বাহী বিভাগে কাজ করার পরে ১৯৩৮ সালে বিচার বিভাগে আত্মীকরণ হন।[২] তিনি ১৯৪৯ সালে তিনি পাঞ্জাব হাইকোর্ট এর বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৮ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানবিচারপতি হন। ১৯৫৬ কায়ানী সিএসপি এ্যাসোসিয়েশন পশ্চিম পাকিস্তান শাখার সভাপতি নির্বচিত হন। এর মাধ্যমে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের মর্যাদা পুনজাগরিত করেন। কায়ানী বিখ্যাত পাঞ্জাব ডির্স্টাবেন্স কোর্ট অব ইনকোয়ারীর সদস্য ছিলেন।

বিচারক এবং প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তার বক্তৃতা প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে স্থান পেত। তার মাঝে দূর্লভ মেধা, রসবোধ, সাহস এবং সততার সমাবেশ ঘটেছিল। সরস তীর্যক মন্তব্য করা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল - যা থেকে খোদ রাষ্ট্রপতিও রেহাই পেতেন না। অক্টোবর, ১৯৬২ সালে বিচারপতি কায়ানী অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সামরিক সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনা করতেন বিধায় পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি বিবেচিত হন নাই। লাহোরের নাগরিকগণ তার সম্মানে বিদায় সম্বর্ধনার আয়োজন করেন, যেখানে তাকে “পাকিস্থানের কন্ঠস্বর” উপাধিতে ভূষিত করেন। উত্তরে বিচারপতি কায়ানী বলেন এ উপাধি তার কাছে “নিশানে পাকিস্তানে”র চাইতে প্রিয়। এরপর তিনি বলেন যে, গুমোট অন্ধকার এই যুগে সরস বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি মানুষের নৈতিকতার মান উন্নত করতে সচেস্ট আছেন। তার উল্লেখযোগ্য মন্তব্য হল:

There are quite a few thousand men who would rather have the freedom of speech than a new suit of clothes and it is these that form a nation, not the office hunters, the licenses even the tillers of the soil and drawers of the water.

রচনাবলী সম্পাদনা

বিচারপতি কায়ানী জীবনের শেষ চার বছরে দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় বক্তায় পরিণত হন। এই বক্তৃতাগুলো পরে বই আকারে কয়েকটি খণ্ডে প্রকাশ করা হয়। এগুলো হলো : দ্য হোল ট্রুথ, নট দ্য হোল ট্রুথ, হাফ ট্রুথ, অ্যা জাজ মাই লাফ এবং আফকার-ই-পেরেশান ইত্যাদি।[২]

মৃত্যু সম্পাদনা

নভেম্বর ১৯৬২, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বার এসোসিয়েশন এর আমন্ত্রনে পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ১৫ নভেম্বর ১৯৬২ তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্স এর একটি বোয়িং বিমানে করে তার মরদেহ করাচী নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে নিজ গ্রাম শাহপুর পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।[২][৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সমকাল"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৩ 
  2. The whole truth By Hafizur Rahman[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. dawn.com