এমএল সাবিত আল হাসান

ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ

এমএল সাবিত আল হাসান ছিল বাংলাদেশের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ যা ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যায়। লঞ্চটিতে প্রায় ১০০ জন যাত্রী ছিল, যার মধ্যে ৩৫ জন মারা যান।[]

এমএল সাবিত আল হাসান ডুবি
তারিখ৪ এপ্রিল ২০২১ (2021-04-04)
সময়সন্ধ্যা ৬/৭টায়
অবস্থানশীতলক্ষ্যা নদী, চর সৈয়দপুর কয়লা ঘাট ও বন্দর মদনগঞ্জ এলাকার মাঝামাঝি, নারায়ণগঞ্জ
কারণএসকেএল-৩ কার্গো জাহাজের সাথে সংঘর্ষ
নিহত৩৫
নিখোঁজ

মুন্সিগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর কয়লা ঘাটের কাছাকাছি, এসকেএল-৩ নামে কার্গো জাহাজের সাথে লঞ্চটির সংঘর্ষ ঘটলে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় যে সংঘর্ষের পরে পণ্যবাহী জাহাজটি ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।

১৯৮৩ সালে নির্মিত নৌযানটি কাঠের তৈরি ছিল। ২০০৩ সালে এটিকে স্টিলে রূপান্তর করা হয়। এর নিবন্ধন নং ছিল এম-১০৩৮৩ এবং এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬.২ মিটার। এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ ৬৮ জন। ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি, নৌ পরিবহন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে সার্ভে করা লঞ্চটির চলাচলের অনুমতি ছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত।[]

৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর কয়লা ঘাট ও বন্দর মদনগঞ্জ এলাকার মাঝামাঝি শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর নিচে এসএকে এল-৩ নামক কার্গোটি “এমএল সাবিত আল হাসান” নামের যাত্রীবাহী লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি ডুবে যায় ও ৩৪ জন ডুবে মারা যান। পরে আরও একজন মারা যান। লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিল।

ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্, তিনি জানান, “অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খারিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে”। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনে প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।[]

৮ এপ্রিল সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় দুটি তদন্ত কমিটির কাছে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী, মৃত যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এক দিনেই গণশুনানি শেষ হয়। এই ডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী তানজিলা আক্তার ও মনিরা আক্তার মুন্নী জানান, ঘটনার দিন তাদের লঞ্চটি নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি আসতেই পেছন থেকে এসকেএল-৩ নামের কার্গো জাহাজটি ধেয়ে আসতে থাকে। ওই সময় লঞ্চের দোতলায় পেছনের দিকে থাকা যাত্রীরা চেঁচিয়ে কার্গোটির গতি কমাতে এবং লঞ্চ বরাবর না আসতে বলতে থাকেন। কিন্তু কার্গোর চালক তাতে পাত্তা না দিয়ে লঞ্চটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন। ধাক্কা দিয়ে বেশকিছু দূর নিয়ে যান। এরপর লঞ্চটি একপাশে ঘুরে গিয়ে কাত হয়ে ডুবে যায়।[]

ঘটনার পর, এসকেএল-৩ জাহাজটি ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে। ৮ এপ্রিল জাহাজটিকে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে জব্দ করে কোস্টগার্ড। ঘটনার সময় জাহাজটি ফিরোজা রঙের থাকলেও আটকের সময় জাহাজটির রং আকাশি পাওয়া যায়।[]

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ মোট ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিআইডব্লিউটি এই ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় বিআইডব্লিউটি-এর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলামকে।

ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটি’র উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "চলাচল অনুপযোগী ছিল এমএল সাবিত আল হাসান"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২১ 
  2. "শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ৩৪ লাশ উদ্ধার"ঢাকা ট্রিবিউন। ৬ এপ্রিল ২০২১। ৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২১ 
  3. "ঘাতক কার্গোর রং বদলে ফেলা হয় ঘটনার পরই"সমকাল। ১০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২১ 
  4. "শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: রং বদলেও শেষ রক্ষা হলো না"বাংলা ট্রিবিউন। ৮ এপ্রিল ২০২১। ১১ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২১