এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম

কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত একপ্রকার জালিকাকার অঙ্গাণু

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা হলো কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত একপ্রকার জালিকাকার অঙ্গাণু। এরা একক আবরণী ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত অসংখ্য সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নালিকা এবং পরস্পর সংযোগ স্থাপন করে একটি জালকের সৃষ্টি করে। ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানী পর্টার, হেলেন পি. থমসন এবং ফ্রান্সিস কেলমেন সর্বপ্রথম যকৃত কোষে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম আবিষ্কার করেন। নামকরণ করেন ১৯৫৩ সালে।

 নিউক্লিয়াস    নিউক্লিয়ার রন্ধ্র   এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম  অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম     মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম     রাইবোসোম,অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে    আমিষ ,পরিবাহিত    পরিবাহিত ভেসিকল     গলগি বস্তু     সম্মুখ দিকে গলগি বস্তু    ১০ বিপরীত দিকে গলগি বস্তু    ১১ গলগি বস্তুর সিস্টারনি

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম শুধু মাত্র সুকেন্দ্রিক কোষে পাওয়া যায়। [১]এর পৃষ্ঠে রাইবোজম দানা থাকলে তাকে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে যা প্রোটিন সংশ্লেষে সক্ষম। এবং রাইবোজম দানা না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে যা লিপিড সংশ্লেষে সক্ষম। প্রাণিকোষে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম লিপিড সদৃশ স্টেরয়েড হরমোনগুলি সংশ্লেষ করে l এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষগহ্বর এগুলো সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অবস্থানসম্পাদনা

এরা সাইটোপ্লাজমে অবস্থান করে। যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কোষে বেশি দেখা যায়। অগ্ন্যাশয়, ফাইব্রোব্লাস্ট এবং প্লাজমা কোষে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের পরিমাণ বেশি।

উৎপত্তিসম্পাদনা

সাইটোপ্লাজমীয় ঝিল্লি, নিউক্লীয় ঝিল্লি অথবা কোষঝিল্লি হতে এদের উৎপত্তি হয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

আকার ও গঠনসম্পাদনা

ভৌত গঠন:

গঠনগতভাবে এরা তিন প্রকার; যথা-

  1. সিস্টার্নি (Cisternae):এরা দেখতে চেপ্টা,শাখাহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো। সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালে বিন্যস্ত থাকে। এগুলো ৪০-৫০ মিলি মাইক্রন পুরু। এদের গায়ে অনেক সময় রাইবোসোম যুক্ত থাকে।
  2. ভেসিকল(Vesicles):এগুলো বরতুলাকার ফোস্কার মতো। ২৫-৫০ মিলি মাইক্রন ব্যাস যুক্ত।
  3. টিউবিউল(Tubules):এগুলো নালিকার মতো,শাখান্বিত বা অশাখ। এদের ব্যাস ৫০-১৯০ মিলি মাইক্রন। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।


রাসায়নিক গঠন:

প্রোটিন (৬০-৭০ ভাগ)

লিপিড (৩০-৪০ ভাগ)

প্রায় ১৫ ধরনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়- NADH ডায়াফোরেজ, সক্রিয় ATPase, গ্লুকোজ ৬-ফসফেটেজ ইত্যাদি। অমসৃণ রেটিকুলামে আরএনএ ও গ্লাইঅক্সিজোম পাওয়া যেতে পারে। অমসৃণ রেটিকুলামের বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র অংশকে মাইক্রোসোম (Microsome) বলে।

কাজসম্পাদনা

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম নিম্নোক্ত কাজ সম্পাদন করে:

১. সাইটোপ্লাজমকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা।

২. অমসৃণ রেটিকুলাম প্রোটিন সংশ্লেষণে ভূমিকা পালন করে।

৩. মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম ফসফোলিপিড, গ্লাইকোজেন সংশ্লেষ করে।

৪. ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য আহিত কণাদের সঞ্চয় ও দরকারমত নিঃসরণ (যেমন পেশী সঞ্চালনে)।

৫. কিছু রেচনপদার্থের পরিশোধন.

৬. এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে ।

৭. এটি লিপিডপ্রোটিন এর অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।

৮. রাইবোসোম, গ্লাইঅক্সিসোমের আকার ধারণ করে।

৯. কোষের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্ক্রিয় করে।

১০. কোষপ্রাচীরের জন্য সেলুুুলোজ তৈরী করে।

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. PORTER KR (মে ১৯৫৩)। "Observations on a submicroscopic basophilic component of cytoplasm"The Journal of Experimental Medicine97 (5): 727–50। ডিওআই:10.1084/jem.97.5.727পিএমআইডি 13052830পিএমসি 2136295