এডিথ হোয়ার্টন
এডিথ হোয়ার্টন (ইংরেজি: Edith Wharton; জন্ম: এডিথ নিউবল্ড জোন্স, ২৪ জানুয়ারি ১৮৬২ - ১১ আগস্ট ১৯৩৭)[১] ছিলেন একজন মার্কিন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার ও নকশাকার। তিনি তার লেখায় নিউ ইয়র্কের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর আভিজাত্যের জীবন ও নৈতিকতার বাস্তবভিত্তিক চিত্রায়ন ঘটিয়েছেন। তিনি দি এজ অব ইনোসেন্স উপন্যাসের জন্য ১৯২১ সালে সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেন, তিনিই প্রথম নারী হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি তিনবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।[২] ১৯৯৬ সালে ন্যাশনাল উইমেন্স হল অব ফেমে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৩]
এডিথ হোয়ার্টন | |
---|---|
স্থানীয় নাম | Edith Wharton |
জন্ম | এডিথ নিউবল্ড জোন্স ২৪ জানুয়ারি ১৮৬২ নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | আগস্ট ১১, ১৯৩৭ সাঁ-ব্রিস-সু-ফোরে, ফ্রান্স | (বয়স ৭৫)
সমাধিস্থল | গনার সমাধি |
পেশা | ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, নকশাকার |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | কথাসাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার ১৯২১ দি এজ অব ইনোসেন্স |
দাম্পত্যসঙ্গী | এডিথ হোয়ার্টন (বি. ১৮৮৫; মৃ. ১৯১৩) |
স্বাক্ষর |
জীবনী
সম্পাদনাপ্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাএডিথ হোয়ার্টন ১৮৬২ সালের ২৪শে জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটির ১৪ ওয়েস্ট টুয়েন্টি-থার্ড স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার প্রকৃত নাম এডিথ নিউবল্ড জোন্স। তার পিতা জর্জ ফ্রেডরিক জোন্স এবং মাতা লুক্রেশিয়া স্টিভেন্স রাইনল্যান্ডার। তার বন্ধু ও পরিবারের নিকট তিনি "পুসি জোন্স" নামে পরিচিত ছিলেন। তার দুই ভাই ফ্রেডরিক রাইনল্যান্ডার ও হেনরি এডওয়ার্ড। হোয়ার্টনকে ১৮৬২ সালের ২০ এপ্রিল গ্রেস চার্চে ইস্টার সানডেতে অভিসিঞ্চিত করা হয়েছিল।[৫]
হোয়ার্টন পৈতৃক পরিবার জোন্সেস ছিল ধনী ও সামাজিক প্রতিপত্তিসম্পন্ন পরিবার, যারা আবাসন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলেন। "জোন্সেসদের সাথে মানিয়ে চলা" কথাটি তার পরিবারকে নির্দেশ করে।[৬][৭] পুরনো প্যাট্রুন পরিবারদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত পরিবার রেনসেলারদের সাথেও তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। রেনসেলাররা নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির সাবেক ওলন্দাজ সরকারের নিকট থেকে জমি অনুদান পেয়েছিলেন।
প্রারম্ভিক লেখনী
সম্পাদনাহোয়ার্টন শৈশবে তার যখন চার বা পাঁচ বছর বয়স তখন তার পরিবার ইউরোপে চলে যায়।[৮] এই সময়টাকে তিনি "গড়ে ওঠার সময়" বলে উল্লেখ করেন। তিনি তার পরিবারের জন্য গল্প বানাতেন এবং খোলা বই নিয়ে হাটতেন, পাতা উল্টাতেন যেন মনে হত তিনি পড়ছেন, এবং গল্প রচনা করতেন।[৮] হোয়ার্টন কিশোরী বয়সে কবিতা ও কথাসাহিত্য রচনা শুরু করেন এবং ১১ বছর বয়সে তার প্রথম উপন্যাস রচনার প্রয়াস নেন।[৯] তার মাতার সমালোচনা তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইতি ঘটায় এবং তিনি কবিতা রচনায় ফিরে যান।[৯] ১৫ বছর বয়সে তার প্রথম কাজ হাইনরিখ কার্ল ব্রুগশের জার্মান কবিতা ওয়াস ডাই স্টেইন এরৎজাহলেন-এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যার জন্য তিনি ৫০ মার্কিন ডলার পেয়েছিলেন। তার পরিবার তার নাম মুদ্রণে আসুক তা চায়নি, কারণ সে সময়ে অভিজাত পরিবারের নারীদের জন্য লেখনী উপযুক্ত পেশা হিসেবে গণ্য হত না। ফলে কবিতাটি তার বন্ধুর পিতা ই. এ০ ওয়াশবার্নের নামে প্রকাশিত হয়েছিল।[১০] ১৮৭৭ সালে ১৫ বছর বয়সে তিনি গোপনে ৩০,০০০ শব্দের উপন্যাসিকা ফাস্ট অ্যান্ড লুজ রচনা করেন। ১৮৭৮ সালে তার পিতা তার লেখা দুই ডজন মৌলিক কবিতা ও পাঁচটি অনুবাদ ভার্সেস শিরোনামে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।[১১] হোয়ার্টন ১৮৭৯ সালে ছদ্মনামে নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড-এ একটি কবিতা প্রকাশ করেন।[১২] ১৮৮০ সালে তিনি সাহিত্য ম্যাগাজিন আটলান্টিক মান্থলি-তে অজ্ঞাত পরিচয়ে পাঁচটি কবিতা প্রকাশ করেন।[১৩] এত সফলতার পরও তার পরিবার বা তার সামাজিক বলয় তাকে উৎসাহিত করেনি, এবং তিনি লেখা চালিয়ে গেলেও ১৮৮৯ সালের অক্টোবরে স্ক্রিবনার্স ম্যাগাজিন থেকে তার কবিতা দ্য লাস্ট গিউস্টিনিয়ানি ছাড়া অন্য কোন লেখনীই প্রকাশ করতে পারেননি।[১৪]
বিবাহ ও ভ্রমণ
সম্পাদনাহোয়ার্টন ১৮৮৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং মার্কিন গৃহস্থালি, লেখনী ও ইতালি - এই বিষয়ে আসক্ত হন।[১৫] ১৮৮৫ সালের ২৯শে এপ্রিল[১৬] ২৩ বছর বয়সে ট্রিনিটি চ্যাপেল কমপ্লেক্সে তিনি এডওয়ার্ড (টেডি) রবিন্স হোয়ার্টনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১৭][১৮] টেডি তার থেকে ১২ বছরের বড় ছিলেন। বোস্টনের এক সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান টেডি ক্রীড়াবিদ ছিলেন এবং একই সামাজিক শ্রেণীর সভ্য ও তারই মত ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তারা নিউপোর্টের পেনক্রেইগ কটেজে বাড়ি করেন। ১৯৮৩ সালে তারা $৮০,০০০ দিয়ে নিউপোর্টের অপর পাশে ল্যান্ড্স এন্ডে বাড়ি ক্রয় করেন এবং সেখানে চলে যান।[১৫] হোয়ার্টন নকশাকার ওগডেন কডম্যান্সের সহায়তায় ল্যান্ড্স এন্ডের বাড়ি সজ্জিত করেন। ১৮৯৭ সালে তারা নিউ ইয়র্কের ৮৮৪ পার্ক অ্যাভিনিউয়ে অপর একটি বাড়ি ক্রয় করেন। তারা ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনে ভ্রমণ করতেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইতালিতে, এবং প্যারিস ও ইংল্যান্ডে।[১৯]
১৮৮০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ১৯০২ সালের মধ্যে টেডি হোয়ার্টন তীব্র হতাশায় ভুগেন এবং এই দম্পতি তাদের অত্যধিক ভ্রমণ কমিয়ে দেন।[২০] এই সময়ে টেডির হতাশা মারাত্মক আকার ধারণ করে, এবং এরপর তারা তাদের দ্য মাউন্ট বাড়িতে আলাদা বসবাস করতেন। একই সময়ে এডিথও হতাশা ও হাঁপানিজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগেন।[২১]
গ্রন্থতালিকা
সম্পাদনা- উপন্যাস
- দ্য ভ্যালি অব ডিসিশন (The Valley of Decision, ১৯০২)
- দ্য হাউজ অব মার্থ (The House of Mirth, ১৯০৫)
- দ্য ফ্রুট অব দ্য ট্রি (The Fruit of the Tree, ১৯০৭)
- দ্য রিফ (The Reef, ১৯১২)
- দ্য কাস্টম অব দ্য কান্ট্রি (The Custom of the Country, ১৯১৩)
- দ্য ট্রায়াম্ফ অব নাইট (The Triumph of Night, ১৯১৬)
- সামার (Summer, ১৯১৭)
- দ্য মার্ন (The Marne, ১৯১৮)
- দি এজ অব ইনোসেন্স (The Age of Innocence, ১৯২০; পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী)
- দ্য গ্লিম্পসেস অব দ্য মুন (The Glimpses of the Moon, ১৯২২)
- আ সন অ্যাট দ্য ফ্রন্ট (A Son at the Front, ১৯২৩)
- দ্য মাদার্স রিকমপেন্স (The Mother's Recompense, ১৯২৫)
- টোয়ালাইট স্লিপ (Twilight Sleep, ১৯২৭)
- দ্য চিলড্রেন (The Children, ১৯২৮)
- হাডসন রিভার ব্রেকেটেড (Hudson River Bracketed, ১৯২৯)
- দ্য গডস অ্যারাইভ (The Gods Arrive, ১৯৩২)
- দ্য বুকানিয়ারস (The Buccaneers, ১৯৩৮; অসমাপ্ত)
- উপন্যাসিকা
- দ্য টাচস্টোন (The Touchstone, ১৯০০)
- স্যাঙ্কচুয়ারি (Sanctuary, ১৯০৩)
- মাদাম দ্য ত্রেমেস (Madame de Treymes, ১৯০৭)
- ইথান ফ্রোম (Ethan Frome, ১৯১১)
- বানার সিস্টার্স (Bunner Sisters, ১৯১৬)
- ওল্ড নিউ ইয়র্ক (Old New York, ১৯২৪)
- ১. ফলস ডন (False Dawn); ২. দ্য ওল্ড মেইড (The Old Maid); ৩. দ্য স্পার্ক (The Spark); ৪. নিউ ইয়ার্স ডে (New Year's Day)
- ফাস্ট অ্যান্ড লুজ: আ নভেলেট (Fast and Loose: A Novelette, ১৯৩৮; ১৮৭৬-১৮৭৭-এ রচিত)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Edith Wharton | American writer"। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৯।
- ↑ "Edith Wharton: a magnificent and subtle writer"। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৯।
- ↑ "Wharton, Edith"। ন্যাশনাল উইমেন্স হল অব ফেম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৯।
- ↑ ডোয়াইট ১৯৯৪, পৃ. ১২-১৩।
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ১৬।
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ২২।
- ↑ বেনস্টক ১৯৯৪, পৃ. ২১৬।
- ↑ ক খ লি ২০০৮, পৃ. ১৩-১৪।
- ↑ ক খ লি ২০০৮, পৃ. ৩৬।
- ↑ বেনস্টক ১৯৯৪, পৃ. ৩৫।
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ৪৩।
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ৪৪।
- ↑ বেনস্টক ১৯৯৪, পৃ. ৩৮।
- ↑ বেনস্টক ১৯৯৪, পৃ. ৪০।
- ↑ ক খ লি ২০০৮, পৃ. ৮১।
- ↑ New York, New York, Marriage Index 1866-1937
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ৭৪-৭৫।
- ↑ U.S., Newspaper Extractions from the Northeast, 1704–1930
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ৮২।
- ↑ ডেভিস ২০০৭।
- ↑ লি ২০০৮, পৃ. ৭৮-৮১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- বেনস্টক, শারি (১৯৯৪)। No Gifts from Chance: A Biography of Edith Wharton (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: পেঙ্গুইন। আইএসবিএন 9780140172836। ওসিএলসি 40336475।
- ডেভিস, ম্যারি ভার্জিনিয়া (২০০৭)। "Edith Wharton"। ম্যাগিলিস সার্ভে অব আমেরিকান লিটারেচার। সালেম প্রেস।
- ডোয়াইট, এলিনর (১৯৯৪)। Edith Wharton: an extraordinary life (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: হ্যারি এন. আব্রামস। আইএসবিএন 978-0-8109-3971-4। ওসিএলসি 28709502।
- লি, হারমিয়ন (২০০৮)। Edith Wharton (১ম সংস্করণ)। লন্ডন: ভিনটেজ। আইএসবিএন 9780099763512। ওসিএলসি 254767936।
- লুইস, আর. ডব্লিউ. বি. (১৯৭৫)। Edith Wharton: A Biography (১ম সংস্করণ)। নিউ ইয়র্ক: হারপার অ্যান্ড রো। আইএসবিএন 9780099358916। ওসিএলসি 476620731।
- মিনকেল, এডিথ (৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Nobody Likes Edith Wharton"। দ্য নিউ ইয়র্কার। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৯।
- মার্শাল, স্কট (১৯৯৬)। "Edith Wharton on Film and Television: A History and Filmography" (পিডিএফ)। এডিথ হোয়ার্টন রিভিউ। ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩ (২): ১৫–২৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- গুটেনবের্গ প্রকল্পে এডিথ হোয়ার্টন-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট আর্কাইভে এডিথ হোয়ার্টন কর্তৃক কাজ বা সম্পর্কে তথ্য
- লাইব্রেরি অব কংগ্রেস কর্তৃপক্ষে Edith Wharton, 345 ক্যাটালগ রেকর্ড সহ
- লিব্রিভক্সের পাবলিক ডোমেইন অডিওবুকসে এডিথ হোয়ার্টন