উয়াইস করনি

মুসলিম সুফি

উয়াইস আল করনি (আরবি: أويس القرني) ছিলেন ইয়েমেনের একজন সুফি ও দার্শনিক।হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তিনি জীবিত ছিলেন তবে তাদের কখনো দেখা হয়নি।[২] ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, উয়াইস করনি সিফফিনের যুদ্ধে আলি ইবনে আবি তালিবের পক্ষে লড়াই করে মারা যান। সিরিয়ার রাক্কাহতে তার মাজার ছিল। ২০১৩ সালে চরমপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী এটি গুঁড়িয়ে দেয়।[৩][৪] তার সম্মানে তুরস্কের সির্ত প্রদেশের বায়কানে একটি মাজার নির্মাণ করা হয়েছে।[৫]

উয়াইস
আরবি: أويس
আরবি ক্যালিগ্রাফি
পদবি: করনি আরবি: القرني
পিতাআবদুল্লাহ
জন্মস্থানইয়েমেন (৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
জাতিসত্তাআরব
মৃত্যু৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দ
দাফনের স্থানরাক্কাহ, সিরিয়া[১]
মৃত্যুর কারণসিফফিনের যুদ্ধে নিহত
ধর্মইসলাম
প্রভাবিত করেছেনউয়াইসি মতের সুফি
যাদের কাছে সম্মানিতসুন্নি, সুফি, ও শিয়া

উয়াইস করনির পিতা আবদুল্লাহ একজন মুসলিম ছিলেন এবং উয়াইসের অল্পবয়সে মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় উয়ায়েস করনি মুহাম্মদ(সাঃ) এর সামসময়িক হলেও তাদের কখনও দেখা হয়নি কারণ উয়াইস ধর্ম সাধনায় নিয়ত রত থাকতেন এবং তার অন্ধ মায়ের দেখাশোনা করতেন। [৬] আলি ইবনে আবি তালিবের এবং উমর ইবনে আল-খাত্তাবের সাথে সাক্ষাতের পর তার কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং উৎসুক জনতা তাকে এক নজর দেখার জন্য তার আবাসস্থলে গমন করতে থাকে। এতে উয়াইস করনির ধর্ম সাধনায় ব্যঘাত সৃষ্টি হয় এবং নির্বিঘ্ন সাধনার জন্য উয়াইস করনের উদ্দেশ্যে কুফা ত্যাগ করেন। তার সময়ে তাকে আলির একজন অনুসারী বলে ধরা হত। তিনি উট পালন করে অর্থ উপার্জন করতেন।

মাজার ধ্বংস

সম্পাদনা

২০১৩ সালের ১১ মার্চ একটি সশস্ত্র দল উয়াইস করনি ও আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মাজার ধ্বংস করে।

== উয়াইসি == উয়ায়েছি, অয়েছি ইত্যাদি নামে ভুষিত। বিশ্বের প্রথম পীর/মুর্শিদ এবং এই উপমহাদেশে পাঁচটি জনপ্রিয় তরিকা বিশ্বনবী হযরত মুহম্মাদ (দঃ) ্এর তরিকায় সর্বচেষ্ঠ তরিকা। তার তারিকা জাহির বাতেন উভয়ভাবে প্রচারিত। যারা তাঁর মনোনীত খলিফা তারাই তাঁর সর্বচেষ্ঠ তারিকার ধারক ও বাহক। তার মানোনীত আধ্যাত্মিক খলিফা দুইজন। যথা- ১/ হযরত ইমাম মাওলা আলী (আঃ) (গাদীরে খুমে লক্ষ সাহাবীর সামনে মনোনীত হন তিনি এবং রাসূল (সা) নিজে উপস্থিত থেকে তাকে সকলের মাওলা ঘোষণা করেন এবং সকল সম্মাতিন সাহাবা তাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করেন। এবং ২/ হযরত খাজা আশেকে রাসূল উয়ায়েছ আল করনী (রা)। হযরত রাসূল (সা) নিজ খেরকা (গায়ের জামা) তাকে প্রদানের মাধ্যমে খলিফা মনোনিত করেন। পরবর্তী তে তিনি মাওলা আলী (আ) এর নিকট সানী বা দ্বিতীয় বায়াত গ্রহণ করেন।


উল্লেখ্য, হযরত ইমাম মাওলা আলী (আঃ) এবং তাঁর পুত্রদ্বয় হযরত ইমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) বিশ্বের মানুষের ইমাম। তাঁহারা পীর ছিলেন না। উপরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে খাজা হযরত উয়ায়েছ করণী হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম পীর অর্থ্যাৎ পীরগণের প্রথম। হযরত আলী (আঃ)’র প্রথম খলিফা। প্রনিধানযোগ্য যে, হযরত আলী (আঃ) এর খলিফাগণের দ্বারাই সারা বিশ্বের বিভিন্ন তারীকাহ্ প্রচারিত হয়েছে। পরবর্তীতে পীরগণের নামে বিভিন্ন তারিকাহর চালু হয়; যেমন-

১) খাজা হযরত উয়ায়েছ করণী হতেঃ উয়ায়েছী তরীকাহ্

২) খাজা হযরত হাসান বছরী হতেঃ বাছারীয়া তরীকাহ্

৩) খাজা হযরত আবদুল্লাহ কুমায়েল হতেঃ কুমালিয়া তরীকাহ্

৪) খাজা হযরত আবুল মেকদাম হতেঃ মেকদামীয়া তরীকাহ্

৫) খাজা হযরত আবু যর গিফারী হতেঃ গিফারীয়া তরীকাহ্

৬) খাজা হযরত সালমান ফারসী হতেঃ সালমানিয়া তরীকাহ্

উল্লেখ্য যে, অন্যান্য সকল তরিকায় সময়ের বিবর্তনে মূল নামের বিলোপ সাধণ হয়েছে। নতুন নামে নতুন তরীকাহ্ হিসেবে চালু হয়েছে। কিন্তু একমাত্র ‘উয়ায়ছী তরীকাহ্’ মূল নামে অপরিবর্তীত হিসাবে বিশ্বে প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে প্রচলিত ৫টি তরীকার সময়ের ব্যবধাণ ও সংক্ষিপ্ত তথ্য নিম্নরূপঃ-

১) উয়ায়েছী তরীকাহ্ঃ


হযরত মুহম্মদ (ছাঃ)’র অত্যন্ত প্রিয় পাত্র, আধ্যাত্মিক জ্ঞান সমৃদ্ধ, নজিরবিহীন রাসূল প্রেমিক, রাসূলে মুহব্বতে নিজের সব দন্ত উৎপাটনকারী, মুর্শিদের প্রেমে নিজ জীবন উৎসর্গকারী, মা-বাবর খেদমতে পার্থিব সুখ-শান্তি বর্জনকারী, আল্লাহর প্রেমে সার্বক্ষণিক মশগুল ও উদাসীন হযরত খাজা উয়ায়েছ করণী (রহঃ) এর খলিফাগণ তাদের মুর্শিদের নামানুসারে “উয়ায়েছী” তরিকাহ্ চালু করে। সর্বপ্রথম প্রচার স্থল ইয়েমেন। খাজা হযরত উয়ায়েছ করণীর ওফাত হয়েছে ঈসায়ী ৬৫৭ সনের ২৬ জুলাই বুধবার। বয়সে রাসূলের চেয়ে প্রায় ২৫০ বছর বড় ছিলেন এবং রাসূলের সময় জীবিত ছিলেন। খাজা হযরত উয়ায়েছ করণীর মুর্শিদ মুহাম্মদ(ছাঃ) এবং হযরত আলী (আঃ)। তিনি ৬৩২ ঈসায় সনে হযরত আলী (আঃ) এর খিলাফত প্রাপ্ত হন এবং মুর্শিদ জীবিতকালীন সময়েই তিনি মুরিদ করেন। তার খলিফাদের মধ্যে হযরত হিশাম উদ্দিন ও হযরত জালাল উদ্দিন গুরগানী উল্লেখযোগ্য। উয়ায়েছী তরীকাহ্ প্রবর্তনের ৫০০/৫৫০ বছর পর অন্যান্য তরীকাহর আবির্ভাব ঘটে। ২) কাদেরীয়া তরীকাহ্ঃ

স্বয়ং রাসূলে খোদা (ছাঃ) হতে শুরু করে তরীকতি খিলাফত প্রাপ্ত সপ্তদশ পুরুষ হচ্ছেন শায়েখুল মাশায়েখ কুতুবুল আরিফিন সাইয়েদুল মওয়াহেদিন গাউসুল আজম হযরত খাজা শাহ মহীউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর অনুসারীগণ তাদের মুর্শিদের নামানুসারে “কাদেরীয়া” তরিকাহ চালু করে। প্রচার শুরু হয় বাগদদ থেকে। তাঁর জন্ম ১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে। রাসূল (ছাঃ) ওফাতের ৪৪৫ বৎসর পর। বাগদাদেই তিনি ১১৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ওফাত পান এবং তাঁর পবিত্র মাজার এখানেই অবস্থিত। আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) –এর মুর্শিদের নাম খাজা শাহ্ আবুল খায়ের মুহাম্মদ (রহঃ)। কাদেরীয়া তরীকার অনেকগুলো উপ-তরিকাহ আছে।

৩) চিশতীয়া তরীকাহ্ঃ

হযরত খাজা শাহ্ আবু ইসহাক চিশতী (রহঃ) এর নামানুসার তাঁর অনুসারীগণ “চিশতিয়া” তরীকাহ জারী করে। তাঁর মুর্শিদের নাম খাজা শাহ্ মামশাদ উলভী দীলওয়ারী। এই চিশতী ছিলছিলার অর্থাৎ খাজা শাহ্ আবু ইসহাক চিশতীর নিম্নতম ৭ম খলিফা হচ্ছেন খাজা হযরত গরীবে নেওয়াজ শাহ্ মঈন উদ্দীন চিশতী (রহঃ) । তাঁর জন্মস্থান ইরানে ১১৪২ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ১১৮৩ খ্রিঃ দিল্লী আগমন করেন ও আজমীরে প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং ১২৩৬ খ্রিঃ এ আজমীরে ওফাত হন। কথিত আছে, তিনি ১১জন এর নিকট শিক্ষার্যণে খেদমতে উপনিত হয়েছিলেন। তাঁর শেষ মুর্শিদ-এর নাম খাজা শাহ্ উছমান হারুনী চিশতী (রহঃ)।

৪) নকশবন্দিয়া তরীকাহ্ঃ

হযরত খাজা শাহ মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দ আল বুখারী (রহঃ) হতে “নকশবন্দিয়া তরীকাহ্ চালু হয়েছে। তিনি ১৩১৭খ্রি. সনে বুখারায় জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই ওফাত প্রাপ্ত হন। তাঁর মুর্শিদ শায়েখুল মাশায়েখ হযরত সৈয়দ শামসুদ্দীন আমীর কালাল (রহঃ)। তাঁর উর্দ্ধতন পীরগণ উয়ায়ছী তরিকার অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। নকশবন্দি অর্থ চিত্রকর। খাজা শাহ মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দ (রহঃ) সর্বদা‍ “আল্লাহ” নামের নকশা অংকন করতেন। তাই, তাকে নকশবন্দি খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি রাছূল (ছাঃ) এর ৬৮৫ বছর পর আগমন করেন।

৫) মোজাদ্দেদীয়া তরীকাহ্ঃ

হযরত শায়েখ আহমদ ফরুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দেদী আলফেসানী (রহঃ) হচ্ছেন এ তরিকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মুঘল সম্রাট আকবর প্রজাদের খুশি করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট নতুন ধর্মমত ‘তাওহিদে এলাহি’ এর বিরোধিতা করেন। এ অনাচারের প্রতিবাদ করেন হযরত শায়েখ মুহম্মদ মুজাদ্দেদী আলফেসানী (রহঃ) । হিজরী দ্বিতীয় সহস্রের প্রথম দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে তাকে দ্বিতীয় সহস্রের মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক বলা হয়। এই নকশবন্দী তরিকারই সংস্কারকৃত রূপ। তাঁর মুর্শিদ ছিলেন হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ নকশবন্দ (রহঃ) । পীরের যথাযথ খেদমত করে তিনি খিলাফত লাভ করেন। রাসূল (ছাঃ) ওফতের ৯৩২ বৎসর পর। বাংলাশেদ-ভারতবর্ষে এ তরীকার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সূত্র- ashek murshed uwaisee

আরও দেখুন

সম্পাদনা

উয়ায়েছি তরিকার সাতটি- ভিত্তি বা মূলনীতি (সংক্ষেপিত) ১) এতায়েতঃ (ایتایات) এর শাব্দিক অর্থ তাবেদারী করা বা অনুসরণ করা তরিকতের ভাষায় আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ নিষেধ মেনে সর্বতোভাবে আল্লাহর জ্ঞানে দাখিল হওয়াকে এতায়েত বলে।

২) খেলওয়াতঃ (الخلوات) এর অর্থ নির্জনতা। চক্ষু ও অন্তরের নির্জনতা। আল্লাহ ব্যতিরেকে চোখে ও অন্তরে অন্য কিছু না দেখা আল্লাহর একত্বে নিমজ্জিত থাকা।

৩) খামুশীঃ (سکوت) জিব্বাহ ও অন্তরের নীরবতাকে খামোশি বলা হয়। আল্লাহর ধ্যানে নিজেকে মশগুল রাখা। সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থাকা। আল্লাহর সাথে সংযুক্ত থাকলে জিহ্বা ও অন্তরের নীরবতা পালন সম্ভব।

৪) নযর-বর-কদমঃ (نزار بار قدم) অর্থ পায়ের উপর নজর রাখা। সর্বদা নিচু হয়ে চলা। আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অন্য কোনো দিকে না তাকানো। অন্য কোনো কিছুর প্রতি আসক্তি না থাকা। বিনয় প্রকাশ করা।

৫) হশ-হর-দমঃ (هاش هار دوم) ফার্সি ভাষায় শব্দগুলোর অর্থ হচ্ছে দমের প্রতি সজাগ থাকা। প্রতি দমে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে।

৬) জহর নূশীঃ (خوردن سم) এর বাংলা তরজমা হচ্ছে বিষ পান করা। তরিকতের জ্ঞানে রাগ গোস্বা কে হজম করা। ধৈর্য ধারণ করার শক্তি অর্জন করাকে বিষ পান করার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

৭) পরদাহ পুশীঃ ( پرده پوشی) গোপন রাখা। অন্যের দোষ খুঁজে না বেরিয়ে গোপন রাখা কে পর্দা করা বলা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Militants Blow up Muslim Shrine in Syria's Raqqa." PressTV. N.p., 12 Mar. 2013. Web. 02 Aug. 2013. <http://www.presstv.com/detail/2013/03/12/293239/militants-destroy-muslim-shrine-in-syria/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে>
  2. Beale, Oriental Bibliotheca
  3. পরিষদ, সম্পাদনা (জুন ১৯৮২)। সংক্ষিপ্ত ইসলামি বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড। শেরেবাংলা নগর, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ২১৩। আইএসবিএন 954-06-022-7 
  4. "The Moment Isis Detonated a More Than 500 Year old Shrine"। ৩০ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৪ 
  5. Encyclopedia of Islam, Owais Karni
  6. তাযকিরাতুল আউলিয়া বা অলিদের জীবন কাহিনী

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

বাংলাদেশে উয়ায়েছি তরিকা-