উদয়ন (তামিল: உதயன் Utayaṉ, ইংরেজি: Morning) একটি তামিল ভাষার শ্রীলঙ্কার দৈনিক সংবাদপত্র। এটি নিউ উদয়ন পাবলিকেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড দ্বারা প্রকাশিত, যা উদয়ন গ্রুপ অফ নিউজপেপার্সের অংশ। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকা প্রথম জাফনা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এর ভগিনী সংবাদপত্র কলম্বো ভিত্তিক সুদার অলিউদয়ন জাফনা থেকে প্রকাশিত একমাত্র সংবাদপত্র যা গৃহযুদ্ধের কারণে প্রকাশনা বন্ধ করেনি।[] সংবাদপত্রটি বেশ কয়েকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। আধাসামরিক গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বাহিনী এর বেশ কয়েকজন কর্মীকে হত্যা কয়েছে এবং এটি নিয়মিত হুমকি পায়।[]

উদয়ন
ধরনদৈনিক সংবাদপত্র
ফরম্যাটপ্রিন্ট, অনলাইন
মালিকউদয়ন গ্রুপ অব নিউজপেপার্স
প্রতিষ্ঠাতাই. সারাবনাপবন
প্রকাশকনিউ উদয়ন পাবলিকেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড
প্রধান সম্পাদকএম. ভি. কানামলনাথন
পরিচালনার সম্পাদকই. সারাবনাপবন
প্রতিষ্ঠাকাল২৭ নভেম্বর ১৯৮৫; ৩৯ বছর আগে (1985-11-27)
রাজনৈতিক মতাদর্শনিরপেক্ষ
ভাষাতামিল
সদর দপ্তর৩৬১ কস্তুরিয়ার রোড, জাফনা, শ্রীলঙ্কা
সহোদর সংবাদপত্রসুদার অলি
ওয়েবসাইটuthayan.com

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
ডেভিড ক্যামেরন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ১৫ নভেম্বর ২০১৩-এ জাফনায় উদয়ন সংবাদপত্রের ছাপাখানা পুড়ে যাওয়া পরিদর্শন করছেন, যখন সংবাদপত্রের সম্পাদক এমভি কানাময়লনাথন তাকে কিছু ব্যাখ্যা করছেন। ই. সারাবনাপবন, পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা দেখছেন।

উদয়ন ১৯৮৫ সালে ই. সারাবনাপবন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার প্রথম সংস্করণ ২৭ নভেম্বর ১৯৮৫ এ প্রকাশিত হয়েছিল।[][] সেই সময়ে জাফনা থেকে প্রকাশিত আরও দুটি সংবাদপত্র ছিল: তামিল ভাষার ইলামুরাসু এবং ইলানাডু[] মুরাসোলি ১৯৮৬ সালে জাফনা থেকে প্রকাশনা শুরু করে।[]

গৃহযুদ্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে জাফনা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলি সরকারী বাহিনী এবং বিদ্রোহী জঙ্গি গোষ্ঠী উভয়ের চাপের মুখে পড়ে। ইলামুরাসু এবং ইলানাডু যথাক্রমে ১৯৮৭ এবং ১৯৯৪ সালে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ঈলম (এলটিটিই) দখল করে নেয়।[]

অক্টোবর ১৯৯৫ সালে, শ্রীলংকান সামরিক বাহিনী এলটিটিই-র কাছ থেকে জাফনা উপদ্বীপ প্রতিগ্রহণ করার জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে। এই সময় ভালিকামাম অঞ্চলের সব জনগন উপদ্বীপের অন্য অংশ ভানিতে পালিয়ে যায়। উদয়নের কর্মীরা তাদের জাফনা অফিস থেকে প্রিন্টিং মেশিন ও একটি জেনারেটর ইত্যাদি ট্রাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।[] তারা সারাসালাই, থেনমারাচ্চিতে একটি অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে এবং এপ্রিল ১৯৯৬ পর্যন্ত সেখান থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখে।[] সামরিক বাহিনী জাফনা শহর সহ বেশিরভাগ উপদ্বীপ পুনরুদ্ধার করার পরে তারা জাফনায় ফিরে আসে।[] ১৯৯৬ সাল নাগাদ উদয়ন জাফনা থেকে প্রকাশিত একমাত্র সংবাদপত্র ছিল।[]

১৯ মে ২০০০ শ্রীলঙ্কা সরকার সম্প্রতি পাস করা কঠোর আইন - ২০০০ সালের জরুরী (বিবিধ বিধান ও ক্ষমতা) রেগুলেশন নং-১ ব্যবহার করে উদয়ন বন্ধ করে দেয়।[] শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী ফোন লাইন কেটে দেয়, অফিসে তালা মারে এবং চাবি নিয়ে যায়।[] সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর মোট ৪৫ দিন পর ৪ জুলাই ২০০০ তারিখে সংবাদপত্রটি পুনরায় চালু হয়।[][]

সহ-সম্পাদক এন. বিথ্যাথারনকে ২০ জানুয়ারী ২০০১, এলটিটিই-এর প্রধান আলোচক এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টা আন্তন বালাসিংহামের সাথে একটি সাক্ষাত্কারের বিষয়ে তার অফিসে দুই ঘন্টা ধরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।[]

গৃহযুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এ৯ রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়, যা জাফনা উপদ্বীপ এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে প্রধান সড়ক সংযোগ ছিল। এর ফলে উপদ্বীপে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং নিউজপ্রিন্ট এবং মুদ্রণ কালি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রি সরবরাহের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়। এই সময় উদয়নকে তার পৃষ্ঠার সংখ্যা এবং অনুলিপি ছাপানো কমাতে বাধ্য করা হয়েছিল - তখন পত্রিকাটি ১২-পৃষ্ঠার ও ২০,০০০ অনুলিপি থেকে ৪-পৃষ্ঠার ৭,৫০০ অনুলিপিতে নামিয়ে আনতে হয়েছিল।[১০]

সম্পাদক এন. বিথ্যাথারনকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ কোন পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, কারণ তিনি মাউন্ট ল্যাভিনিয়ায় একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশি হেফাজতে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে।[১১][১২] গ্রেপ্তারের আন্তর্জাতিক সমালোচনা তীব্র হওয়ার সাথে সাথে শ্রীলঙ্কা সরকার দাবি করে যে, কলম্বোতে এলটিটিই বিমান হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ভিথ্যাথারনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[১৩][১৪] ২৪ এপ্রিল ২০০৯ কলম্বো ক্রাইমস ডিভিশন আদালতকে জানায় যে, বিমান হামলার সাথে তাঁর যুক্ত থাকার কোনো প্রমাণ নেই। এরপর বিথ্যাথারনকে মুক্তি দেওয়া হয়।[১৫][১৬] বিথ্যাথারন অভিযোগ করেন, ভানিতে বেসামরিক দুর্দশা পত্রিকায় তুলে ধরা প্রতিরোধ করার জন্যই তাঁকে আটক করা হয়েছিল।[১৭][১৮]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Officials pledge to lift Sri Lanka censorship International Freedom of Expression Exchange – 15 June 2000
  2. Azeez, Abdul H. (১২ জুন ২০১১)। "Uthayan Under Fresh Attack"The Sunday Leader 
  3. "SL Policeman, claiming EPDP, threatens Tamil daily in Jaffna"TamilNet। ১৭ মার্চ ২০১১। 
  4. Samath, Feiza (৫ আগস্ট ২০০১)। "Pressing on"The Sunday Times (Sri Lanka) 
  5. Kamalendran, Chirs (২১ মে ২০০০)। "Jaffna's Uthayan newspaper sealed"The Sunday Times (Sri Lanka) 
  6. "SLA shuts down Jaffna paper"TamilNet। ২০ মে ২০০০। 
  7. "World Press Freedom Day bloodied by Uthayan attack"The Sunday Times (Sri Lanka)। ৭ মে ২০০৬। 
  8. "Ban on Jaffna paper lifted"TamilNet। ৩ জুলাই ২০০০। 
  9. "Uthayan journalist interrogated"TamilNet। ২০ জানুয়ারি ২০০১। 
  10. "Open letter to the donor countries' ambassadors regarding the situation of the media in Jaffna"Reporters Without Borders। ২৬ জানুয়ারি ২০০৭। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১ 
  11. "Prominent Tamil Editor abducted in Colombo, later claimed 'arrested'"TamilNet। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। 
  12. "Sri Lanka: Editor Arrested and Beaten"Human Rights Watch। ১ মার্চ ২০০৯। 
  13. Mushtaq, Munza (৬ ডিসেম্বর ২০০৯)। "And ... The White Vans Are Back!"The Sunday Leader। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১ 
  14. "Tamil editor arrested in Sri Lanka"Committee to Protect Journalists। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। 
  15. Jayawardene, Kishali Pinto (২৬ এপ্রিল ২০০৯)। "Calling for a change of policy in arrests and detentions"The Sunday Times (Sri Lanka) 
  16. "Vithiyatharan released"TamilNet। ২৪ এপ্রিল ২০০৯। 
  17. Satyapalan, Franklin R. (২৬ এপ্রিল ২০০৯)। "Fight with people with guns, not those with pens – Editor Vithiyatharan"The Island (Sri Lanka)। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১ 
  18. "Colombo wanted to hide forced displacement of Tamils – Vithiyatharan"TamilNet। ২৫ এপ্রিল ২০০৯। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা