উচ্ছল জীবনানন্দ
উচ্ছল জীবনানন্দ বা উচ্ছল জীবন উপভোগ বলতে যাপিত জীবনকে প্রাণবন্ত আনন্দ-উল্লাস-উচ্ছলতার সাথে গভীরভাবে উপভোগ করাকে বোঝানো হয়। পাশ্চাত্যে ফরাসি ভাষায় ও সেখান থেকে ইংরেজি ভাষাতেও একে জোয়া দ্য ভিভ্র (Joie de vivre) পদবন্ধটি দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
উচ্ছল জীবনানন্দ বলতে কথোপকথন, ভোজন, কিংবা জীবনের যেকোনও কর্মকাণ্ড থেকে আনন্দ গ্রহণ করা বোঝাতে পারে। উচ্ছল জীবনানন্দকে জীবনের সবকিছুতে বিদ্যমান এক সর্বাঙ্গীন আনন্দ, জীবনের দর্শন, বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি (জার্মান ভাষায় যাকে বলে "ভেল্টআনশাউং"), ইত্যাদি হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
বিকাশ
সম্পাদনাফরাসি ভাষাতে উচ্ছল জীবনানন্দ অর্থে "জোয়া দ্য ভিভ্র" পদগুচ্ছটির অনানুষ্ঠানিক প্রয়োগ ১৭শ শতকের শেষভাগ থেকেই দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে ফেনলোঁ-র রচনাতে। এরপর ১৯শ শতকে এসে প্রথমে জ্যুল মিশলে তাঁর সর্বেশ্বরবাদী আঁসেক্ত (১৮৫৭) গ্রন্থে উদ্ভিদরাজির নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের সাথে প্রাণীদের জীবনের বৈসাদৃশ্য বোঝাতে "জোয়া দ্য ভিভ্র" কথাটি ব্যবহার করেন।[১]:৩০০ এরপর এমিল জোলা তাঁর জোয়া দ্য ভিভ্র (১৮৮৩-১৮৮৪) নামক গ্রন্থটির মাধ্যমে আবারও এই পদগুচ্ছটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।[১]:৩০৫
এরপরে ধারণাটি এক ধরনের জীবনচর্যা হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করে, এবং ২০শ শতকের শুরুতে এসে কদাচিৎ প্রায় এক ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মের মর্যাদায় উন্নীত হয়।[১]:৩০৬ পরবর্তীতে জাক লাকঁ-র দর্শনে ভোগবিলাসী মূলনীতিকে ছাড়িয়ে জীবনকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপভোগ করা বা জুইসঁস (Jouissance) নামক যে ধারণাটির অবতারণা করা হয়, তার সাথে এটির মিল আছে।[২] ২০শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে হিপি সংস্কৃতির উদয়ের সাথে সাথে জীবনকে উদ্যম, উচ্ছাস, উল্লাস, শক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে উপভোগ করার ব্যাপারটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব লাভ করতে শুরু করে।[৩]
মনোবিজ্ঞান
সম্পাদনা২০শ শতকের আত্ম-বাস্তবায়নের প্রবক্তা যেমন আব্রাহাম মাসলো বা কার্ল রজার্স নিজসত্তায় বিরাজ করার নিরব আনন্দ পুনরাবিষ্কারের ব্যাপারটিকে এক ধরনের আদিম উচ্ছল জীবনানন্দের একটি উপজাত হিসেবে গণ্য করতেন।[৪]
উচ্ছল জীবনানন্দের সাথে ডি ডব্লিউ উইনিকটের ক্রীড়ারসের (Sense of play) ধারণা এবং সত্যিকারের নিজসত্তার সাথে সংযোগস্থাপনের ধারণাটির তুলনা করা হয়েছে।[৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনা- ভোজনবিলাসী (Bon vivant)
- কার্পে দিয়েম (Carpe diem)
- জীবনীশক্তি (Élan vital)
- এপিকুরোস
- প্রবাহ (মনোবিজ্ঞান)
- সুখ
- ইকিগাই
- জুইসঁস
- আনন্দ
- লেসে লে বোঁ তঁ রুলে
- জীবনযাত্রার মান
- ফ্রঁসোয়া রাবলে
- টমাস নাগেল
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Harrow, Susan; Unwin, Timothy A; Freeman, Michael (২০০৯)। Joie de vivre in French literature and culture : essays in honour of Michael Freeman। Amsterdam, NTH & New York, NY: Rodopi Publishers। আইএসবিএন 9789042028968। ওসিএলসি 430229593।
- ↑ Lacan, Jacques; Miller, Jacques-Alain; Sheridan, Alan (১৯৯৪)। The four fundamental concepts of psycho-analysis। London, UK: Penguin Books। পৃষ্ঠা 184। আইএসবিএন 9780140242782। ওসিএলসি 33725110।
Later online version of The four fundamental concepts of psycho-analysis। London, UK & New York, NY: Karnac। ২০০৪। ওসিএলসি ৭৩৩৮৪১৩৮৭, ৭২৯১৬৬৯৪৬। - ↑ Andrews, Cecile (২০০৬)। Slow is beautiful : new visions of community, leisure and joie de vivre। Gabriola Island, BC, Canada: New Society Publishers। পৃষ্ঠা 96। আইএসবিএন 9781550924145। ওসিএলসি ৪৭১১২৪৮৯০, ৮১০৫৩৯৩৮৫।
- ↑ Rogers, Carl R (১৯৬১)। On becoming a person : a therapist's view of psychotherapy । Boston, MA, USA: Houghton Mifflin Company। পৃষ্ঠা 87–88। আইএসবিএন 9780395084090। ওসিএলসি 172718।
Later online versions of On becoming a person : a therapist's view of psychotherapy.। ওসিএলসি ৭৮২৮৭৩৭৪৯, ৭৮৩৫৮৫০১৭, ৮৫৬৯৩২৭৯৭, ৮৫৮৯৭০৭০৬।
গুগল বইয়ে On Becoming a Person: A Therapist's View of Psychotherapy - ↑ Lamb, Charles (১৯৮৫)। Phillips, Adam, সম্পাদক। Selected prose । Harmondsworth, Middlesex, UK & New York, NY: Penguin classics। পৃষ্ঠা 446। আইএসবিএন 9780140432381। ওসিএলসি 680112630।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Schutz, William (১৯৭৩)। Joy: Expanding Human Awareness। New York, NY: Ballantine Books। আইএসবিএন 9780345274595। ওসিএলসি 3756811।
- Csikszentmihalyi, Mihaly (১৯৯১)। Flow: The Psychology of Optimal Experience। New York, NY: Harper Perennial। আইএসবিএন 9780060920432। ওসিএলসি 473801272। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৬।
- Harrow, Susan; Unwin, Timothy A. (২০০৯)। Joie de Vivre in French Literature and Culture: Essays in Honour of Michael Freeman (ইংরেজি ভাষায়)। Rodopi। আইএসবিএন 978-90-420-2579-0।