উগ্র শ্রীনিবাস হলেন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের তিরুমালার বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের একটি বিগ্রহ। উগ্র শব্দের অর্থ ক্রুদ্ধ। এই বিগ্রহটির আদি নাম ছিল বেঙ্কটত্তুরৈবরতামিল ভাষায় বেঙ্কটত্তুরৈবর শব্দের অর্থ ‘বেঙ্কটমের অধিবাসী সর্বোচ্চ ঈশ্বর’।[১] বিগ্রহটিকে বেঙ্কটেশ্বরের ক্রুদ্ধ রূপ মনে করা হয়। এটি স্নাপন মূর্তি নামেও পরিচিত।

কিংবদন্তি সম্পাদনা

কিংবদন্তি আছে যে, ১৪শ শতাব্দীতে ব্রহ্মোৎসবম্‌ অনুষ্ঠানের সময় গ্রামে একটি অগ্নিকাণ্ড হয় এবং পুরো গ্রামটি ভস্মীভূত হয়। গ্রামবাসীরা দেবতার কাছে প্রার্থনা জানালে, বেঙ্কটেশ্বর এক ভক্তকে স্বপ্নাদেশ দেন। সেই সময় উগ্র শ্রীনিবাস ছিলেন শোভাযাত্রা বিগ্রহ বা উৎসব মূর্তি। স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে নতুন উৎসব মূর্তি মালায়াপ্পা স্বামীর বিগ্রহটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সময় থেকে উগ্র শ্রীনিবাসের বিগ্রহটি আর সূর্যোদয়ের পর মন্দিরের বাইরে বের করা হয় না। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন যে, সূর্যালোক এই বিগ্রহের গায়ে লাগলে তা থেকে মন্দির চত্বরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

ধ্রুব বেরা ছাড়া উগ্র শ্রীনিবাসের বিগ্রহটি মন্দিরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিগ্রহ। এই বিগ্রহ কবে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে নথি অনুসারে, ১০ম শতাব্দীতেও মন্দিরে এই বিগ্রহ পূজিত হত। সেই ক্ষেত্রে এই বিগ্রহ ভোগ শ্রীনিবাস বিগ্রহেরও আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। নথিপত্র থেকে আরও জানা যায় যে, ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত মন্দিরের উৎসব মূর্তি হিসেবে এই বিগ্রহ ব্যবহৃত হয়েছে। এরপরই মালায়াপ্পা স্বামীর মূর্তিটি পাওয়া যায় এবং সেটি উৎসব মূর্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

পূজা সম্পাদনা

উগ্র শ্রীনিবাসের বিগ্রহটির উচ্চতা ১৮ ইঞ্চি। এটি একটি ৭ ইঞ্চি উঁচু বেদীর উপর দণ্ডায়মান। বিগ্রহের হাতের চক্রটি সামান্য বাঁকা। এটি ব্যবহারোন্মুখ চক্রের নিদর্শন। তাই এটিকে বলা হয় প্রয়োগ চক্র।[২] বিগ্রহের সঙ্গে ভূদেবী ও শ্রীদেবীর বিগ্রহও দণ্ডায়মান অবস্থায় দেখা যায়।

এই বিগ্রহের পূজা বছরের তিনটি দিনে হয়। এগুলি হল উত্থান একাদশী, মুক্কোতি দ্বাদশী ও দ্বাদশারাধনা।[২] কেবলমাত্র কৈশিকা দ্বাদশীর (যা মুক্কোতি দ্বাদশী নামেও পরিচিত) দিন সূর্যোদয়ের আগে বিগ্রহটিকে শোভাযাত্রা সহকারে বের করা হয়।[৩][৪] অন্য দুদিন মন্দিরের ভিতরেই বিগ্রহটিকে পূজা করা হয়।[১]

কৈশিকা দ্বাদশীর গুরুত্ব সম্পাদনা

শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায় উত্থান একাদশী ও কৈশিকা দ্বাদশীকে প্রবোধোৎসব আখ্যা দিয়ে থাকে। উত্থান একাদশীর দিন বিষ্ণুকে যোগণিদ্রা থেকে জাগ্রত করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, আষাঢ় শুক্লা একাদশী (বিষ্ণু শয়ন একাদশী) তিথিতে বিষ্ণু যোগণিদ্রায় মগ্ন হন। শ্রীবৈষ্ণবরা কৈশিকা দ্বাদশীর নামকরণ করেছেন, বিষ্ণুভক্ত চণ্ডাল ভক্ত নাম্বদুবনের রচিত একটি গানের ‘রঙ্গম’ অনুসারে। ভক্ত নাম্বদুবন তার সত্যরক্ষার জন্য এক রাক্ষসের খাদ্য হতে সেই রাক্ষসের কাছে গিয়েছিলেন। কৈশিকা পুরাণম্‌ গ্রন্থে এই দিনের উষাকালের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লিখিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থখানি সংস্কৃত, তামিল বা তেলুগুর মিশ্র ভাষায় (মণিপ্রবলম্‌) রচিত। এতে অনেক সংস্কৃত উদ্ধৃতি ও স্থানীয় ভাষায় ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Spathagiri Magazine January 2003 - Ugra Srinivasa Murti"। ২০০৩-০১-০১। ২০০৭-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  2. The Tirumala Temple। Tirumala: Tirumala Tirupati Devasthanams। ১৯৮১। 
  3. "`Kaisika Dwadasi' observed"The Hindu। ২০০৬-১১-০৩। ২০০৭-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  4. "`Kaisika Dwadasi' observed"The Hindu। ২০০৫-১১-১৪। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  5. "Sapthagiri Magazine June 2003 - History of Kaisika Dvadasi"। ২০০৩-০৬-০১। ২০০৭-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২