ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ও সবচেয়ে বড় শ্রীকৃষ্ণ মন্দির।

ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। মন্দিরটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) দ্বারা পরিচালিত হয়।[১][২]এটি বাংলাদেশে তৈরি সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দির।[৩][৪]

ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাচট্টগ্রাম
উৎসবকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, রাধা জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা, দোলপূর্ণিমা।
পরিচালনা সংস্থাআন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ
অবস্থান
দেশ বাংলাদেশ

ইতিহাস সম্পাদনা

২০০৭ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শ্রীল জয়পতাকা স্বামী। তিনতলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের নকশা করেছেন ভারতীয় স্থাপত্যবিদ পুণ্ডরিক বিদ্যাদাস ব্রহ্মচারী। ১৯২১ সালে পাঁচলাইশের গোলপাহাড়ে সংঘের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯২১-৪১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২৮ একর জমি কিনে গরু পালনের মাধ্যমে দুধ ও ঘি তৈরির প্রকল্প, অনাথ আশ্রম, বিদ্যালয়, শরীরচর্চা কেন্দ্র, দেশীয় তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের জন্য চরকা কারখানা স্থাপন করেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে প্রবর্তক সংঘের উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় ও অনাথ আশ্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রবর্তক সংঘের বদান্যতায় পাহাড় চূড়ায় ইসকন শ্রীকৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে।

স্থাপত্যশৈল্য সম্পাদনা

রাজস্থানের মাকরানা মার্বেল দিয়ে নির্মিত হয়েছে পুরো মন্দির। দরজা-জানালার কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে আফ্রিকা ও মায়ানমার থেকে। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১শ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট এবং উচ্চতা ৬৫ ফুট। ১৮ গণ্ডা জায়গায় ৯টি গম্বুজবিশিষ্ট এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত। এসব সিঁড়ির থামগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম দিয়ে। মন্দিরের সর্বোচ্চ তিনটি গম্বুজে শোভা পাচ্ছে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র[৫]। প্রবেশপথে মন্দির গাত্রে অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শনের রেপ্লিকা, বসানো হয়েছে বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল জয়-বিজয় মূর্তি। ভেতরে প্রতিটি দেওয়ালজুড়ে আছে চোখ জুড়ানো নকশা, বসছে ঝাড়বাতি। মায়ানমার থেকে আনা কাঠ দিয়ে তৈরি দরজা-জানালায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শৈল্পিক কারুকাজ। মন্দির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ জানান, শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের নিচতলা ব্যবহৃত হবে অডিটোরিয়াম হিসেবে[৬]। এরপর ১ম তলায় নাটমন্দির, ২য় ও ৩য় তলায় বিগ্রহ মন্দির। মূল বিগ্রহ শ্রীশ্রী রাধা-কুঞ্জবিহারী (রাধা-কৃষ্ণ), দুইপাশে আছেন ললিতা-বিশাখা, আরেকদিকে শ্রীশ্রী জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রা মহারানী এবং ডানপাশে শ্রীশ্রী গৌর নিতাই পূজিত হবেন ভক্তের ভক্তি-অর্ঘ্যে। বিগ্রহ কক্ষ লাগোয়া ভোগ ঘরটি (প্রসাদ রন্ধনশালা) থাকবে দর্শনার্থীদের দৃষ্টির বাইরে। ভোগ রান্না পরবর্তী দেব বিগ্রহের সামনে নিবেদন কার্যক্রম ধর্মীয় রীতি অনুসারে সম্পাদনের লক্ষ্যেই এই ভোগঘর সবার দৃষ্টির বাইরে রাখা হচ্ছে বলে জানান মন্দির কর্তৃপক্ষ। আর ছাদের একপাশে থাকছে পূজারীদের থাকার কক্ষ। মন্দিরে আফ্রিকা থেকে আনা কাঠ দিয়ে নির্মিত বিগ্রহের আসন সাজছে রত্নালংকারে। মন্দির গর্ভে বিগ্রহের মুখোমুখি রত্ন সিংহাসনে স্থাপিত হচ্ছে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ মূর্তি। মন্দিরের সেবায়েত স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বাংলানিউজকে জানান, এই মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে প্রবর্তক সংঘ স্মৃতিস্মরণ শিব মন্দির ও শ্রীরাম ভক্ত মহাবীর হনুমানজী মন্দির। ফাইবারের কাজে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ধর্মীয় চিত্রকলা। দরজায় শ্রীরাম লীলা, নৃ-সিংহ লীলা, গৌড়লীলা, জগন্নাথ লীলা, শ্রীবিষ্ণুর বাহন গরুড় দেব, মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য, প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত, গদাধর, শ্রীবাস এর ম্যুরাল খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আছে দৈত্যরাজ বলির মস্তকে চরণ ছোঁয়ানো বিষ্ণুর প্রথম অবতার বামন দেবের প্রতিচিত্রও।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "চট্টগ্রামে ইসকনের নান্দনিক মন্দির উদ্বোধন"NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১ 
  2. "নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর [[ইসকন]] মন্দির চট্টগ্রামে"banglanews24.com। ২০২০-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১  ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  3. "বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দির তৈরি করলো ইসকন"। ২০২১-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-৩০ 
  4. জুনাইদ, এনাম হাসান (২০২০-০২-২২)। "৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে ইসকন মন্দির"ইসলাম টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-৩০ 
  5. "শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েনের আবেদন প্রবর্তক সংঘের"কালের কণ্ঠ। ২০২১-০৬-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১ 
  6. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে অন্নকূট মহোৎসব"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]