ড. ইলিনা সেন (১৯৫১ - ৯ আগস্ট ২০২০) ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী ও লেখক। ট্রেড ইউনিয়ন এবং সবচেয়ে বেশি দুর্বলদের বিশেষকরে নারীদের জন্য এক শক্তিশালী ও প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিলেন তিনি। [১] জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা তিনি ও তার স্বামী বিনায়ক সেন বহু বছর মধ্যভারতের প্রত্যন্ত উপজাতীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট ৬৯ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।[২] লড়াকু ইলিনা সেন শুধু নারী-আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনে ভারতের এক উজ্জ্বল প্রতিভূই ছিলেন না, এর বিশ্লেষণেও তিনি ছিলেন বিশেষ পারদর্শিনী। সেই অর্থে তিনি ভারতের নারী-আন্দোলন তিনি একেবারে গোড়ার দিকের ঐতিহাসিক।

অধ্যপক

ইলিনা সেন
জন্ম১৯৫১
মৃত্যু৯ আগস্ট ২০২০(2020-08-09) (বয়স ৬৮–৬৯)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয় ভারত
পেশাঅধ্যপক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ
পরিচিতির কারণমানবাধিকার কর্মী
দাম্পত্য সঙ্গীবিনায়ক সেন
সন্তানপ্রহ্নিতা সেন (কন্যা)
অপরাজিতা সেন (কন্যা)

কর্মজীবন সম্পাদনা

ইলিনা ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় মহাত্মা গান্ধী অন্তররাষ্ট্রীয় হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে অনুষদ পদে উন্নীত হন। পরে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুম্বাই এর টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস (TISS)- এর অ্যাডভান্সড সেন্টার ফর উইমেন স্টাডিজে শিক্ষকতা করেন।[২]

তিনি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত দু'বছর 'নেহরু মেমোরিয়াল লাইব্রেরি'র একজন সিনিয়র ফেলো ছিলেন।

২০১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেনস স্টাডিজের (IAWS) মানবীবিদ্যার সর্বভারতীয় সম্মেলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং তারপর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের গুয়াহাটির সর্বভারতীয় সম্মেলনে তিনি সভানেতৃত্বে ছিলেন। [৩]

ছত্তিশগড়ে সক্রিয়তা সম্পাদনা

১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইলিনা ও তার স্বামী বিনায়ক সেন যিনি গান্ধীবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রতিষ্ঠিত 'ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ' বা (পিইউসিএল) এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন, ছত্তিশগড়ে আসেন। 'ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা'র প্রতিষ্ঠাতা শঙ্কর গুহনিয়োগীর কাজে অনুপ্রাণিত হন সেন দম্পতি। উপজাতি অঞ্চলে আদিবাসী মানুষের চিকিৎসাসেবা নিয়ে কাজে লিপ্ত হন তারা। 'ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংগঠন' (CMSS) প্রতিষ্ঠিত 'শহিদ হাসপাতালে' নিজেদের নিয়োজিত করেন এবং সেখানকার জনস্বাস্থ্য সেবার মধ্য দিয়ে তারা প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে সংযোগে, তাদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিয়েও সরব হন।[৪] তিনি বীজ ও ধানের জাত সংরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য টেকসই উন্নয়নের সাথে জড়িত ছিলেন।[১] তিনি শঙ্কর গুহনিয়োগীর শুরু করা ট্রেড ইউনিয়নের কাজেও নিজেকে যুক্ত করেন। বহু বছর ধরে আদিবাসী ও সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের সঙ্গে অতিবাহিত করেন।

পেশায় সমাজতত্ত্ববিদ হয়েও তিনি স্বামী বিনায়ক সেনের সঙ্গে 'সালওয়া জুডুম'-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠে সোচ্চার হন এবং ছত্তিশগড়ে 'কোয়া কমান্ডো' নামক সিভিল নজরদারী গোষ্ঠী স্থাপন করেন। রূপান্তর নামের স্বামীর প্রতিষ্ঠিত এনজিওর কাজে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিকল্প স্বাস্থ্যসেবার রোল মডেল হয়ে ওঠেন তিনি।[৫] একজন নকশাল নেতা এবং একজন ব্যবসায়ীর মধ্যে সংযোগকারী হিসাবে কাজের অভিযোগে দু-বছরের বেশি সময় কারাগারে কাটান ডাঃ সেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে নকশাল আন্দোলনকে সমর্থন করায় এবং নকশাল মাওবাদীদের লড়াইয়ে সহায়তা করার অভিযোগে ছত্তিশগড়ের একটি নিম্ন আদালত তার স্বামী ডঃ বিনায়ক সেনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং ছত্তিশগড়ের এক বিচার আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।[৬]

ইলিনা মধ্য ভারত থেকে আদিবাসী পুরুষদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান এবং বিনায়কের মুক্তির জন্যও লড়াই করেন। বিনায়ক অবশেষে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি লাভ করেন।

রচিত গ্রন্থ সম্পাদনা

  • এ স্পেস উইদিন দ্য ব্যাটল (১৯৯০) - কেরালা, তামিলনাড়ু, অসম, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, কর্ণাটক, বিহার ও উত্তরাখণ্ড জনগণের আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের উপর প্রবন্ধের সংকলন [৪]
  • ইনসাইড ছত্তিসগড় – এ পলিটিক্যাল মেমোয়ার (২০১৪)
  • সুখবাসিন:দ্য মাইগ্রেন্ট ওমেন অফ ছত্তিসগড় (১৯৯৫)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Ilina Sen As We Knew Her: A Tribute from WSS"Countercurrents (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  2. "Social Activist, Academic and Author Ilina Sen Passes Away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২ 
  3. সংগ্রহের-তারিখ=2020-08-15 "Essay: A tribute to Ilina Sen" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)hindustantimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। 
  4. "Essay: A tribute to Ilina Sen"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২ 
  5. "বিশিষ্ট্ সমাজসেবী লেখিকা ইলিনা সেন প্রয়াত, জীবন-যুদ্ধে থামলেন অবশেষে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৩ 
  6. "Activist, academic & author Ilina Sen passes away"The Bengal Story - English (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২