ইয়েরুকালা জনগোষ্ঠী

ইয়েরুকালা বা এরুকালা বা এরুকুলা হল একটি আদিবাসী সম্প্রদায় যাদের প্রাথমিকভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় দেখতে পাওয়া যায়।[১] ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ইয়েরুকালা উপজাতির জনসংখ্যা হল ৫,১৯,৩৩৭ জন। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মোট সাক্ষরতার হার হল ৪৮.১২%। তাদের অধিকাংশই দক্ষিণ উপকূলীয় অন্ধ্র এবং রায়লসীমায় বাস করে, তেলেঙ্গানায় এই সম্প্রদায়ের অল্প কিছু মানুষ বাস করে। তাদের স্থানীয় ভাষা হল তামিল ভিত্তিক ইয়েরুকালা, কিন্তু এখন বেশিরভাগই তেলুগু ভাষায় কথোপকথন চালায়। অভ্যাসগত অপরাধী নাম দিয়ে ব্রিটিশরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত,[২] এবং তাদের ফৌজদারি উপজাতি আইনের অধীনে রাখা হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে অপরাধীর সংখ্যা কমই ছিল এবং সম্ভবত তাদের যাযাবর জীবনধারার জন্য তাদের লক্ষ্য করা হয়েছিল।[৩]

ইয়েরুকালা
শ্রেণীবিভাগআদিবাসী
ধর্মহিন্দুধর্ম
ভাষাইয়েরুকালা, তেলুগু
জনবহুল অঞ্চলঅন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা
জনসংখ্যা৫,১৯,৩৩৭
উপবিভাগ5

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

এই উপজাতি নিজেদের ‘কুর্রু’ বলে। তাদের নারীরা ঐতিহ্যগত ভাগ্য গণনা করার পেশা (এরুকা চেপ্পুতা) অবলম্বন করে। সেই অনুসারে তাদের নাম হয়েছে ‘ইয়েরুকালা’।[৪]

ভাষা সম্পাদনা

ইয়েরুকালা উপজাতির নিজস্ব একটি উপভাষা আছে যাকে বলা হয় 'ইয়েরুকুলা ভাষা' বা 'কুর্রু ভাষা' বা 'কুলভাথা'। এটি বেশিরভাগই তেলুগু, তামিল এবং কন্নড়ের মত দ্রাবিড়ীয় ভাষাগুলি থেকে উদ্ভূত।[৪]

খাদ্যাভ্যাস সম্পাদনা

ইয়েরুকালারা আমিষভোজী। উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশে চাল হল তাদের প্রধান খাদ্যশস্য, আর জোয়ার হল রায়লসীমা এবং তেলেঙ্গানা অঞ্চলের ইয়েরুকালাদের প্রধান খাদ্যশস্য। তারা শুকরের মাংস খায়।[৪]

জীবিকা সম্পাদনা

ইয়েরুকালাদের ঐতিহ্যগত পেশার মধ্যে রয়েছে ঝুড়ি তৈরি, মাদুর বুনন, শূকর পালন, দড়ি তৈরি ইত্যাদি। ইয়েরুকালা মহিলারা দৈবজ্ঞগিরি এবং ভাগ্য বলার ক্ষেত্রে পারদর্শী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝুড়ি তৈরি, মাদুর বুনন ইত্যাদির মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করে। তারা বুনো খেজুর পাতা দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করে।[৪]

পরিবার এবং বিবাহ সম্পাদনা

ইয়েরুকালা উপজাতিরা সাধারণত ছোট পরিবারের হয়। বংশধর হল পুরুষতান্ত্রিক, বাসস্থান হল পিতৃস্থানীয় (স্বামীর ঘরে বসবাস) এবং কর্তৃত্ব হল পিতৃতান্ত্রিক। দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ (মেনারিকাম) পছন্দ করা হয়। মামা ও ভাগ্নীর মধ্যে বিবাহও অনুমোদিত। একবিবাহ সাধারণভাবে পালন করা হলেও, বহুবিবাহ সামাজিকভাবে অনুমোদিত। আলাপ-আলোচনা এবং বিনিময়ের মাধ্যমে সাধারণত বিবাহ হয়।[৪]

ধর্ম সম্পাদনা

ইয়েরুকালারা হিন্দু কল্যাণময় দেবতাদের পূজা করে যেমন ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর, নরসিংহস্বামী, নারায়ণস্বামী এবং রাম। এরা আত্মা এবং ভূত-প্রেত বিশ্বাসী মানুষ এবং প্রতিটি রোগ বা দুর্ভাগ্যের জন্য কিছু অশুভ আত্মা এবং পূর্বপুরুষের ভূতের ক্রিয়াকে দায়ী করে। এরা ছাগল, শুকর, পাখী ইত্যাদি বলি দিয়ে অশুভ আত্মার প্রভাব এড়ানোর চেষ্টা করে। তারা সংক্রান্তি, শিবরাত্রি, শ্রীরামনবমী, দশেরা, উগাদি (তেলুগু নববর্ষের দিন) ইত্যাদি হিন্দু উৎসবগুলি উদযাপন করে।[৪]

তথ্যসূত্র এবং টীকা সম্পাদনা

  1. Chaudhuri, Sarit Kumar; Chaudhuri, Sucheta Sen, সম্পাদকগণ (২০০৫)। Primitive tribes in contemporary India: concept, ethnography and demography2। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 263। আইএসবিএন 81-8324-026-7 
  2. Thurston, Edgar। Castes and Tribes of Southern India 
  3. P, Samuel Jonathan (২০১৭-১১-২৫)। "The agony of Stuartpuram"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৫ 
  4. "YERUKULA"। ৩০ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা