ইয়াসমিন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা

ইয়াসমিন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দ্বারা ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের দিনাজপুরে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত ইয়াসমিন আক্তার নামক ১৪ বছর বয়স্ক এক বালিকার গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়। এ ঘটনার ফলে দিনাজপুরে তীব্র প্রতিবাদ দেখা দেয়[১][২]

ঘটনা সম্পাদনা

ইয়াসমিন আক্তার নামক ১৪ বছর বয়স্ক বালিকাটি ঢাকায় একজন গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট সে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় নিজ বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাকে পুলিশ ভ্যানে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর তিন পুলিশ সদস্য তাকে গণধর্ষণ করে এবং তারপর হত্যা করে[৩][৪][৫]

প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

১৯৯৫ সালের ২৫ আগস্ট স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল দৈনিক উত্তরবাংলা পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানকে জানান যে, পুলিশ সদস্যরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। রহমান ২৬ আগস্ট নিহত মেয়েটির পরিচয় জানতে পারেন এবং এ সম্পর্কে পত্রিকায় লিখতে চান কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে নিষেধ করে। সেদিন রাতে পুলিশ বাহিনী রহমানের পত্রিকার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। রহমান তার প্রতিবেশীর বাসা থেকে বিদ্যুৎ ধার করে সংবাদটি প্রকাশ করেন। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে। অঞ্চলটিতে কারফিউ জারি করা হয় এবং পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৭ জন নিহত হয় এবং প্রায় ১০০ জন আহত হয়[৩][৬]

বিচার সম্পাদনা

মামলাটিতে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে দুই জনকে ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং ২০০৪ সালে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অমৃত লাল নামক আরেক অভিযুক্ত মামলার রায় প্রকাশের বহুদিন পর গ্রেপ্তার হয়। পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিচার প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল এবং প্রথমদিকে এই মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু নারী অধিকার কর্মী এবং নাগরিক সমাজ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করায় সরকার দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়[৭]। অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২৪ আগস্ট বাংলাদেশে 'নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে[৩][৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Alam, S. M. Shamsul। Governmentality and Counter-Hegemony in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। আইএসবিএন 9781137526038। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  2. Kumari, Ved; Brooks, Susan L.। Creative Child Advocacy: Global Perspectives (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 9788132103288 
  3. "Yasmin Murder 1995: Media played a brave role despite threat"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  4. Children in South Asia: Securing Their Rights (ইংরেজি ভাষায়)। Amnesty International। পৃষ্ঠা 15। 
  5. "ইয়াসমিনদের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে নারীবাদীদের মুখে কুলুপ"দৈনিক সংগ্রাম। ০৯ জানুয়ারি ২০১৩। ৩১ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 12 জুন 2017  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. "She is mine" [সে আমার]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  7. "REMEMBERING YASMIN" [ইয়াসমিনকে স্মরণ]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  8. "নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস (ইয়াসমিন হত্যা দিবস) উপলক্ষে মানববন্ধন-সমাবেশ-মিছিল অনুষ্ঠিত"বাসদ। ১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৭