ইয়াং শাংখুন
ইয়াং শাংখুন[টীকা ১] (৫ জুলাই, ১৯০৭ – ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮) চংকিংয়ের তংনান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী চীনের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। দেং জিয়াওপিংয়ের অধীনে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের সহ-সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন।
ইয়াং শাংখুন | |
---|---|
杨尚昆 | |
গণচীনের ৪র্থ রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ৮ এপ্রিল, ১৯৮৮ – ২৭ মার্চ, ১৯৯৩ | |
প্রিমিয়ার | লি ফেং |
উপরাষ্ট্রপতি | ওয়াং চেন |
নেতা | তেং শিয়াওফিং চিয়াং সেমিন |
পূর্বসূরী | লি শিয়েন-নিয়েন |
উত্তরসূরী | চিয়াং সেমিন |
সিপিসি কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের মহাসচিব | |
কাজের মেয়াদ আগস্ট, ১৯৪৫ – নভেম্বর, ১৯৫৬ | |
উত্তরসূরী | হুয়াং খছেং |
কাজের মেয়াদ জুলাই, ১৯৮১ – নভেম্বর, ১৯৮৯ | |
পূর্বসূরী | কেং পিয়াও |
উত্তরসূরী | ইয়াং পাইপিং |
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২১ ডিসেম্বর, ১৯৬৪ – ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭৫ | |
সংসদীয় এলাকা | পিএলএ অ্যাট-লার্জ |
কাজের মেয়াদ ২৫ মার্চ, ১৯৮৮ – ১৫ মার্চ, ১৯৯৩ | |
সংসদীয় এলাকা | সিছুয়ান অ্যাট-লার্জ |
কুয়াংচৌ নগরীর ৭ম নগরপ্রধান | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭৯ – ১৯৮১ | |
পূর্বসূরী | চিয়াও লিন-ই |
উত্তরসূরী | লিয়াং লিংকুয়াং |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | তুংনান, ছুংছিং, সিছুয়ান, ছিং রাজত্বকাল | ৫ জুলাই ১৯০৭
মৃত্যু | ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ বেইজিং, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন | (বয়স ৯১)
জাতীয়তা | চীনা |
রাজনৈতিক দল | চীনের কমিউনিস্ট পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | লি পোচাও (বি. ১৯২৯-১৯৮৫) (তাঁর মৃত্যু) |
সন্তান | ৩ |
শাংহাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি মস্কোয় মার্কসবাদ বিষয়ে অধ্যয়ন করেন যা তাকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সূচনালগ্নে অন্যতম শিক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিতি ঘটায়। ২৮ বলশেভিকের একজন হিসেবে চীনে প্রত্যাবর্তন করেন। শুরুতে সমাজতান্ত্রিক নেতা ঝাং গুতাওয়ের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু লং মার্চের সময়কালীন মাওয়ের আদর্শ গ্রহণ করেন। চীনের গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে রাজনৈতিক কমিসারের দায়িত্ব পালন করেন।[১]
শাংখুন দলের নেতৃত্বে আসার পর তিনি চীনের জ্যেষ্ঠ আট নেতার একজন ছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক পুণর্গঠনে মনোনিবেশ ঘটান কিন্তু রাজনৈতিক উদারতাবাদের বিপক্ষে ভূমিকা নেন। অথচ, দেং তাকে উদারতাবাদের জন্যই দলে ভিড়িয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভকালীন তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের তুঙ্গে পৌঁছেন। কিন্তু জিয়াং জেমিনের নেতৃত্বের বিরোধিতা করায় তাকে জোরপূর্বক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতুংনান কাউন্টির শুয়াংচিয়াং এলাকার এক ভূমিহীন পরিবারে ইয়াং শাংখুনের জন্ম।[১] ছেংতু হায়ার নর্মাল স্কুলে অধ্যয়ন করেন। বড় ভাই ইয়াং ইয়াংয়ং সিছুয়ানের চীনা সাম্যবাদী দলের (সিসিপি) নির্বাহী পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন যা তার চিন্তাধারায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। ১৯২৫ সালে কমিউনিস্ট যুব লীগে ও ১৯২৬ সালে সিসিপিতে যোগ দেন।[২] এ সময় তিনি সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। ১৯২৬ সালের শেষদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন ও মস্কো সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[১] কমিউনিস্ট পার্টির সূচনালগ্নে নেতৃত্বে থাকা নেতাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তার এ পড়াশোনা সেরা শিক্ষিতের মর্যাদা এনে দেয়। চীনের একদল ছাত্রদের একজন হিসেবে মস্কোয় পড়াশোনা করেন ও চীনে ফিরে সিসিপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন যা ২৮ বলশেভিক হিসেবে পরিচিতি পায়।[২]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা হলে তিনি অনেকগুলো রাজনৈতিক পদবী ধারণ করেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্ষমতাধর সদস্যে পরিণত হন। ১৯৬৬ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছড়িয়ে পড়লে দল থেকে বিতাড়িত হন।[৩] এরপর দেং জিয়াওপিং ক্ষমতা গ্রহণ করলে ১৯৭৮ সালে তাকে তিনি পুনরায় দলের সদস্য হন।
১৯৮৮ সালে লি শিয়েন-নিয়েনের পরিবর্তে চীনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অনেকাংশেই প্রতীকীস্বরূপ।[৪] ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভকালীন সময়ে তার ভূমিকায় চীনের রাজনৈতিক অবকাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন এনে দেয়। শুরুতে তিনি ছাত্রদের প্রতি নমনীয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। মহাসচিব ঝাও জিয়াংয়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের মহাসচিব হিসেবে ঝাওয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন যে, জিয়াং ছাত্রদেরকে গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত করছেন।
এরপর ইয়াং লিকে সমর্থন দেন। মে, ১৯৮৯ সালে ইয়াং চীনা টেলিভিশনে লিয়ের সঙ্গী হন। সেখানে তিনি ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অরাজকতার অভিযোগ আনেন ও বেইজিংয়ের আশেপাশে সামরিক আইন জারী করেন। ৪ জুন শতশত বিক্ষোভকারী নিহত হয়।[৪] দেংয়ের কর্তৃপক্ষ ইয়াং পরিবারের উত্থানের বিষয়ে অভিযোগ আসে। ১৯৯৩ সালে তার পরিবর্তে জিয়াং জেমিনকে নিযুক্ত করা হয় ও দলে থাকা তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ তাকে জোরপূর্বক অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয়।[৩] মৃত্যুর পূর্বে তিনি ৪ জুনের ঘটনাকে কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুতর ভুল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি মনে করেন যে, এ ধরনের ভুল সংশোধনযোগ্য।[৫]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাবিখ্যাত লং মার্চে অংশগ্রহণকারী স্বল্পসংখ্যক নারীদের একজন হিসেবে লি বোঝাওকে ১৯২৯ সালে বিয়ে করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে। আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলা হয় যে, তিনি মহান শ্রমিক বিপ্লবী, বক্তা, সমর কুশলী, মার্কসবাদের ধারক, দলসহ রাষ্ট্র ও পিপলস আর্মি’র অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন।[৩]
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ এই ম্যান্ডারিন চীনা ব্যক্তিনাম বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ম্যান্ডারিন চীনা শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Domes, Jurgen. Peng Te-huai: The Man and the Image, London: C. Hurst & Company. 1985. আইএসবিএন ০-৯০৫৮৩৮-৯৯-৮.
- Eckholm, Erik. "Yang Shangkun, 91, Ex-China Chief, Dies". The New York Times. September 15 1998. Retrieved January 28 2012.
- Teiwes, Frederick C. "Peng Dehuai and Mao Zedong". The Australian Journal of Chinese Affairs. University of Chicago Press. No. 16, July 1986. pp. 81–98. Retrieved 10 February 2012.
- Xinhua. "The Glorious, Militant Life of Yang Shangkun" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে The People's Daily. Retrieved January 28 2012.
টেমপ্লেট:Presidents of the People's Republic of China টেমপ্লেট:NPCSC Vice-Chairpersons