ইন্দ্রলাল রায় (২ ডিসেম্বর ১৮৯৮ - ১৮ জুলাই ১৯১৮) প্রথম ভারতীয় বাঙালি বিমান চালক এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একমাত্র ভারতীয় বৈমানিক। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ফ্রান্সের পক্ষ হয়ে জার্মানির বিপক্ষে বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযানে অংশ নেন এবং যুদ্ধবিমান চালনায় দক্ষতার পরিচয় দেন।

ইন্দ্রলাল রায়
আরএফসি ইউনিফর্মে ইন্দ্রলাল
আনুগত্য ব্রিটিশ রাজ
সেবা/শাখা রয়েল ফ্লাইং কর্‌প্‌স
কার্যকালc.এপ্রিল ১৯১৭ – জুলাই ১৯১৮
পদমর্যাদাসেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
যুদ্ধ/সংগ্রামওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
পুরস্কারডিস্টিংগুইশ্‌ড ফ্লাইং ক্রস

জীবনী সম্পাদনা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

 
১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ভারতের ডাকটিকিটে ইন্দ্র লাল রায়

ইন্দ্রলাল রায়ের জন্ম ভারতের কলকাতায়। তার পিতা পিয়ারীলাল রায় বরিশাল জেলার লকুতিয়া অঞ্চলের জমিদার ও আইনজীবী এবং মা ললিতা রায় ছিলেন নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনকারী। ভ্রাতা পরেশলাল রায় ছিলেন মুষ্টিযোদ্ধা। শিক্ষা জীবনে তিনি বেশ কয়েকটি বৃত্তি অর্জন করেন। বৈমানিক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি সর্বশেষ ব্যালিওল বৃত্তি লাভ করেন। এই বৃত্তি নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি কেনিংস্টনে-এর সেন্টা পল'স স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার মূল শিক্ষার প্রায় পুরোভাগই ইংল্যান্ডে।

১৯১৭ সালের এপ্রিল তিনি রয়েল ফ্লাইং কর্‌প্‌সে যোগ দেন। এই ফ্লাইং কোর থেকে ১৯১৭ সালের ৫ জুলাই সেকেন্ড লেফটেণ্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ভেন্ড্রোমে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। এরপর টার্নবারি-তে বন্দুক চালনা শিক্ষা করেন। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বিমান বাহিনীর ৫৬ স্কোয়াড্রনে যোগ দেন।[১]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

কমিশনের পরপরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দ্রলাল ফ্রান্সের পক্ষে জার্মানির বিপক্ষে একটি সামরিক বিমান অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযানের সময় তার বিমান জার্মান বিমান কর্তৃক নো ম্যানস ল্যান্ডে ভূপাতিত হয়। তিন দিন পর একটি ব্রিটিশ সেনাদল তাকে উদ্ধার করে ফ্রান্সের ব্রিটিশ সামরিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সামরিক হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি জ্ঞান ফিরে পান। সুস্থ হওয়ার পর আবার বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়ে নিয়মিত উড্ডয়ন শুরু করেন।

১৯১৮ সালে ৬ জুলাই থেকে তিনি বিমান আক্রমণ শুরু করেন এবং ৯টি জার্মান বিমান ধ্বংস করে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৮ জুলাই তারিখে তার বিমান পুনরায় ভূপাতিত হয় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১]

রেকর্ড সম্পাদনা

তিনিই প্রথম ভারতীয় বিমান চালক, যিনি ১৭০ ঘণ্টা বিমান চালানোর রেকর্ড করেছিলেন।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

  • ইংল্যান্ড সরকার তাকে মরণোত্তর বিশিষ্ট উড্ডীয় ক্রস (Distinguished Flying Cross - ডিএফসি) সম্মানে ভূষিত করে।[১]
  • কলকাতার ভবানীপুরে ‘ইন্দ্র রায় রোড’ রাস্তাটির নাম তার নামানুসারে করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ইন্দ্রলাল রায়; বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ - এ মুজাফ্‌ফর
  2. "রেকর্ড" 

আরও দেখুন সম্পাদনা