ইটভাটা
ইটভাটা বা ইটখোলা ইট উৎপাদনকারী স্থানের নাম। বিশেষ মানের কাদামাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির কারখানাগুলো ইটভাটা বা ইটখোলা হিসেবে পরিচিত। নির্মাণ কাজে ব্যবহারোপযোগী পাথরের বিপরীতে পলি মাটি বা কাদামাটির তৈরি ইটের নির্ভরতা ব্যাপক। প্রাচীন আমল থেকে নির্মাণকাজে ইটের ব্যবহার রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের নগরী পুন্ড্রবর্ধন বা মহাস্থানগড়ের নির্মাণকাজে পোড়ানো ইট ও কাদামাটির ব্যবহার রয়েছে। ইট জোড়া দেয়ার কাজে চুন এবং চিটাগুড়ের মিশ্রণ প্রযুক্তি ইটের তৈরি স্থাপনাগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। খোলা মাঠ বা জমির উপরিভাগের মাটি সংগ্রহ করে কাদামাটি হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে প্রক্রিয়াক্রমে ইট হিসেবে প্রস্তুত হয়। ইটভাটা স্থানটি অনেকটা খোলা মাঠ উদ্যানের মতো হয়ে থাকে।[১]
প্রক্রিয়াকরণ
সম্পাদনাইটখোলায় ব্যবহূত কাদামাটি সচরাচর সংলগ্ন মাঠ থেকে সংগ্রহের পাশাপাশি উপযুক্ত মাটি দূরবর্তী স্থান থেকেও সংগ্রহ করা হয়। স্বয়ংক্রিয় কারখানা ব্যতিরেকে সাধারণ ইটখোলাগুলিতে কাদামাটি দিয়ে হাতে তৈরি ইট রোদে শুকানোর জন্য প্রাথমিকভাবে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ৫ থেকে ১২ দিন রোদে শুকানোর পর ইটখোলা ইটভাটার ভেতরে পোড়ানোর জন্য সাজানো হয়। ভাটার ভিতরে ইট পোড়ানোর সময় তাপের অপচয় রোধের জন্য ইটের গুঁড়া দিয়ে আস্তরণ দেওয়া হয়। জ্বালানি গ্যাসের সংযোগবিহীন ইটখোলাগুলিতে ইট পোড়ানো শুরু হয় জ্বালানি কাঠ দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে সেগুলিতে কয়লা ব্যবহূত হয়। অপেক্ষাকৃত সস্তা হওয়ায় ইটখোলায় ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হয়। কয়লার বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়া, ফার্নেস অয়েল এমনকি গাড়ির বাতিল টায়ারও পোড়ানো হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার গ্যাস নেটওয়ার্কের কাছাকাছি অবস্থানের প্রায় ২০০টি মাত্র ইটখোলা জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে ইটভাটা
সম্পাদনাবিশেষ মানের কাদামাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির কারখানাকে ইটভাটা বা ইটখোলা বলা হয়। নির্মাণ কাজে ব্যবহারোপযোগী পাথর সুলভ না হওয়ায় এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল পলিগঠিত হওয়ায় নির্মাণ-উপাদান হিসেবে কাদামাটির তৈরি ইটের ওপর নির্ভরতা বেশি।
রাংগুনিয়ার এক ইউনিয়নেই ৭০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।[২]
ইটখোলা
সম্পাদনাবাংলাদেশে প্রায় ৬,০০০ ইট প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইট তৈরি হয় হয়। । অধিকাংশ ইটখোলা কেবল শুষ্ক মৌসুমে সচল থাকে। শহরে বা বড় মাপের নির্মাণ কাজের কাছাকাছি জায়গায় সাধারণত ইটখোলাগুলির অবস্থান। প্রতিবছর একই অবস্থানে ইটখোলা গড়ার চেষ্টা করা হয়। কোনো কোনো ইটখোলার নিজস্ব স্থায়ী কারখানার ছাউনি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা আছে। সাধারণত বড় বিনিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি, স্বয়ংক্রিয় কারখানা-সুবিধাসম্পন্ন ইটখোলার বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে উন্নতমানের ইট প্রস্ত্তত করা হয়।[৩]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
সুনামগঞ্জের একটি ইটভাটায় সুউচ্চ চিমনি, ২০১৭।
-
ইট তৈরীর জন্য মাটি কাটছে শ্রমিকেরা।
-
মাথায় করে মাটি পরিবহন করছে শ্রমিকেরা।
-
মাটি দিয়ে চৌকো ইট তৈরীর পর নির্মাতার মার্কা খোদাই করা হয়।
-
ইটভাটায় নানা কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদল।
-
ইট তৈরীর পর রোদে শুকানোর জন্য সারি বেঁধে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
-
ইট পোড়ানোর পর ভাটার বহিরাঙ্গিক দৃশ্য।
-
ইট পোড়ানোর পর ভাটার আভ্যন্তরীক দৃশ্য।
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ইটখোলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৮।
- ↑ "Union chairman, member control 70 illegal brick kilns in Rangunia" (ইংরেজি ভাষায়)। THE BUSINESS STANDARD। ২৬ ডিসেম্বর ২০২২। ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Warden, Charles D.; Kanaya, Noriko; Chen, Shiuan; Yuan, Yate-Ching (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "BD-Func: a streamlined algorithm for predicting activation and inhibition of pathways"। PeerJ (ইংরেজি ভাষায়)। 1: e159। আইএসএসএন 2167-8359। ডিওআই:10.7717/peerj.159।