আলেকজান্ডার পেডলার
স্যার আলেকজান্ডার পেডলার সিআইই এফআরএস (২১ মে ১৮৪৯ - ১৩ মে ১৯১৮) ছিলেন একজন ব্রিটিশ সরকারি আধিকারিক, অধ্যাপক ও রসায়নবিদ, যিনি অবিভক্ত বাংলা তথা ব্রিটিশ ভারতে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে অগ্রণী ভূমিকা নেন। কলকাতায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও (১৯০৪-১৯০৬) ছিলেন।[১]
আলেকজান্ডার পেডলার | |
---|---|
জন্ম | ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার পেডলার ২১ মে ১৮৪৯ সেন্ট ডানস্তান পশ্চিম, মিডলসেক্স, যুক্তরাজ্য |
মৃত্যু | ১৩ মে ১৯১৮ সেন্ট মার্টিন, লন্ডন যুক্তরাজ্য | (বয়স ৬৮)
পেশা | রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | এলিজাবেথ মার্গারেট শ্মিট (১৮৫৯-১৮৯৬) মেবল ওয়ারবারটন (১৮৭৮-?) |
সন্তান | নিঃসন্তান |
পিতা-মাতা | জর্জ স্ট্যানবারি পেডলার (পিতা) হান্না রাইডাল (মাতা) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআলেকজান্ডার পেডলারের জন্ম ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্সের সেন্ট ডানস্তান পশ্চিমে। পিতা জর্জ স্ট্যানবারি পেডলার ছিলেন স্থানীয় ফ্লিট স্ট্রিটের একজন ফার্মাসিস্ট এবং মাতা হান্না রাইডাল।[২] আলেকজান্ডারের পড়াশোনা লন্ডনের প্রাইভেট সিটি অব লন্ডন স্কুলে। তিনি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে বেল স্কলারশিপ পেয়ে 'ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন'-এ গবেষণাগারে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাএরপর তিনি রয়্যাল ইনস্টিটিউশনে হার্বার্ট ম্যাকলিওড, এডওয়ার্ড ফ্রাঙ্কল্যান্ড, স্যার জোসেফ নরম্যান লকইয়ার প্রমুখ রসায়নবিদদের সহকারী হিসাবে কাজ করেন। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি সিসিলিতে নরম্যান লকিয়ারের সাথে সূর্যের জ্যোতির্বলয়ের বর্ণালী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এতে এক মৌলের সন্ধান পান। স্যার এডওয়ার্ড ফ্র্যাংকল্যাণ্ড এবং স্যার নরম্যান লকইয়ার এটির নাম দেন হিলিয়াম। তিনি পরে ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডের সঙ্গে ভ্যালেরিক অ্যাসিডের চিরাল আইসোমারের গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আমেরিকা সফর করেন এবং ফিরে এসে তিনি রয়্যাল কলেজ অফ কেমিস্ট্রির বিজ্ঞান ও শিল্প বিভাগে রাসায়নিক পরীক্ষক হন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কেমিক্যাল সোসাইটির একজন ফেলো হন। হার্বার্ট ম্যাকলিওড, কুপার্স হিলে নতুন প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, যোগ দিলে, পেডলার তার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে স্যার এডওয়ার্ড ফ্রাঙ্কল্যান্ডের সুপারিশে তাকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের অধ্যাপকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। [৩] আলেকজান্ডার পেডলার ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ২৪ বৎসর বয়সে প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন।[৪]
১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হন এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের আবহাওয়া সংক্রান্ত রিপোর্টার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় বিজ্ঞানের উপর তার বিশেষ প্রভাব পড়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়নের অধ্যাপক হিসাবে। সেখানে তৎকালীন এফ.এ কোর্সে তার বক্তৃতা প্রথম প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে রসায়ন অধ্যয়নে আকৃষ্ট করে। [৫] ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে তার অভিজ্ঞতার পর পেডলার ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এছাড়াও, পেডলার ভারতে রাসায়নিক ক্ষেত্রে মূল্যবান ব্যবহারিক প্রয়োগে বেশ কিছু কাজ করেছেন, যেমন- কোবরা বিষের বিষাক্ত পদার্থ, চা রাখার চেস্টে ব্যবহৃত সীসার আস্তরণের ক্ষয়, কলকাতায় জল সরবরাহ বিশ্লেষণ এবং কয়লা গ্যাস পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে চারবার (১৮৮৭, ১৮৮৭-১৮৮৯, ১৮৮৯, এবং ১৮৯৬-১৮৯৭) অধ্যক্ষ হন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক তথা পাবলিক ইন্সট্রাকশনের ডিরেক্টর ছিলেন।
তিনি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল হতে ৩০ মার্চ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন।[১]
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর নাইট উপাধি পান এবং লন্ডনে ফিরে স্ট্যানহপ গার্ডেনে বসবাস করতেন। স্যার নরম্যান লকইয়ার সঙ্গে তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সায়েন্স গিল্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর অনারারি সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [৩]
সম্মাননা
সম্পাদনা- ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে পেডলার রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। [৬]
- ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে তাকে 'কম্প্যানিয়ন অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার' ( সিআইই ) হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান
সম্পাদনাআলেকজান্ডার পেডলার ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কফুর্টের সি কে স্মিটের কন্যা এলিজাবেথ মার্গারেটকে বিবাহ করেন। এলিজাবেথ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি উইলিয়াম ওয়ারবার্টনের কন্যা ম্যাবেলকে বিবাহ করেন। তারা নিঃসন্তান ছিলেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে তারিখে মিনিশনস মন্ত্রণালয়ের এক কমিটির সভায় যোগ দিতে যান এবং হঠাৎই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার স্মরণে প্রতি বৎসরে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে 'আলেকজান্ডার পেডলার বক্তৃতা'র আয়োজন করা হয়। [৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "List of Vice Chancellors of the University of Calcutta"। University of Calcutta। ৬ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "Alexander Pedler"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১১।
- ↑ ক খ MacLeod, Roy M. (২০০৪)। "Oxford Dictionary of National Biography"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/48706। (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
- ↑ "Presidency University - Chemistry Dept. History"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১২।
- ↑ "Prafulla Chandra – A Tribute to the Master" (পিডিএফ)। Animesh Chakravorty, Sreebrata Goswami, Samaresh Bhattacharya।
- ↑ "Fellow details"। Royal Society। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Lecture, Alexander Pedler (১৯৪০)। "Alexander Pedler Lecture delivered by Prof. Allan Ferguson"। Nature। Nature 145, 508-508 (30 March 1940) | doi:10.1038/145508d0। 145 (3674): 508। ডিওআই:10.1038/145508d0 ।