আলেকজান্ডার ক্যাসল

ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত একটি অষ্টাদশ শতকীয় প্রাসাদ

আলেকজান্ডার ক্যাসল বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত একটি ঊনবিংশ শতকীয় প্রাসাদ। আলেকজান্ডার ক্যাসল ময়মনসিংহ শহরের প্রাচীন স্থাপনাসমূহের মধ্যে অন্যতম। শহরের কেন্দ্রস্থরে কোর্ট-কাঁচারীর কাছে এটির অবস্থান।

আলেকজান্ডার ক্যাসল
ময়মনসিংহ in বাংলাদেশ
লোহার কুঠি.jpg
আলেকজান্ডার ক্যাসলের সম্মুখভাগ
সাইটের ইতিহাস
নির্মিত১৭৮৯ (1789)
উপকরণলোহা


বর্তমানে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ গ্রন্থাগার

ইতিহাসসম্পাদনা

১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠা শতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে মহারাজা সুকান্ত সুর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদটি নির্মিত হয়। এতে সে সময় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। ভবন নির্মাণে লৌহের ব্যবহারের কারণে এটি জনসাধারণ্যে "লোহার কুঠি" নামেও পরিচিত ছিল। বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[১] তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে ভবনটির নাম করা হয়েছিল ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। পরবর্তীতে লোকমুখে এটি আলেকজান্ডার ক্যাসেল বা লোহার কুঠির বলে পরিচিতি পায়।[২]

নির্মাণসম্পাদনা

১৮৭৯ সালে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ জমিতে নির্মাণ করা হয় বাংলো আদলের সুরম্য বাগানবাড়ি লোহার কুঠি বা আলেকজান্দ্রার ক্যাসেল। ক্যাসেলের ভেতরে ছিলো শ্বেত পাথরের ফ্লোর। নির্মাণের পর নানা রাজকীয় আসবাবে ভবনটি সুসজ্জিত করা হয়েছিল। ভবন চত্বরের রয়েছে দীঘি ও বাগান।

টিচার্স ট্রেনিং কলেজসম্পাদনা

আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে ১৯৪৮ সালে ২৭ দশমিক ১৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। প্রথমে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে কলেজে বেশ কয়েকটি সুবিশাল ভবন নির্মিত হলে ক্যাসেলের দোতলায় স্থানান্তরিত হয় শিক্ষকদের বাসভবন। তৎপরর্বীতে গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল। ৮ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে প্রায় ১৫,০০০ গ্রন্থ। একসময় আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর থাকলেও পরবর্তীতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কর্তৃপক্ষ অবাধ যাতায়াত ও সংরক্ষণে একটি অংশে তারের বেড়া স্থাপন করলেও সিংহভাগ রয়ে গেছে অরক্ষিতই।

 
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে অনেক কবিতা রচনা করেছেন।

বরেণ্য ব্যক্তিদের পদার্পণসম্পাদনা

বহু বরেণ্য ব্যক্তি এই প্রাসাদে অবস্থান করেছেন। মহারাজার আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে আসেন। সেসময় কবির সফরসঙ্গী ছিলেন তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইতালির অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি প্রমুখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিন কবি গুরু সূর্যকান্তের বাগান বড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান নেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে অনেক কবিতা রচনা করেছেন। একই বছর মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন। এখানে আরো পদার্পণ করেছিলেন লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

বহি:সংযোগসম্পাদনা