আলী আকবর আকন

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: জানুয়ারি ২০১২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

আলী আকবর আকন
মৃত্যুজানুয়ারি ২০১২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আলী আকবর আকনের জন্ম পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আসমত আলী আকন এবং মায়ের নাম আয়েশা খানম। তার স্ত্রীর নাম হাসিনা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

আলী আকবর চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তখন তার পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তারা পালিয়ে গিয়ে সমবেত হন বদরগঞ্জে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় ভারতে। চিকিৎসা নিয়ে আবার যোগ দেন যুদ্ধে। কিন্তু প্রত্যক্ষযুদ্ধে তিনি আর অংশ নিতে পারেননি। পরে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আলী আকবর আকন পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

সেনানিবাসে অবাঙালি সেনাসদস্যরা বাঙালিদের হাঠৎ করে এড়িয়ে চলা শুরু করে। তাছাড়া সেনানিবাসে বাঙালিও তেমন নেই। বেশির ভাগ অবাঙালি। বাঙালি বলতে আছেন আলী আকবর আকনসহ আনুমানিক ১৬০ জন। সেনানিবাসের বাইরে কী ঘটছে, সেটা আলী আকবর আকন ও তার সহযোদ্ধারা তেমন জানেন না। ২৫ মার্চের পর দৃশ্যপট বদলে গেল। এর মধ্যে আদেশ এল অস্ত্র জমা দেওয়ার। আলী আকবর আকনের মনে হলো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। নিজের উপস্থিত বুদ্ধিতেই তিনি সজাগ হয়ে গেলেন। তার সহযোদ্ধারাও একইভাবে সজাগ। কেউ অস্ত্র জমা দিলেন না। তারপর সময় গড়াতে থাকল। ২৮ মার্চ আলী আকবর আকন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন দেশের কিছু ঘটনা। এরপর ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তারা কয়েকজন আলোচনা করলেন। সবাই বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে একমত হলেন। কিন্তু সেই সুযোগ তারা পেলেন না। ৩১ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরাই আলী আকবর আকনদের অতর্কিতে আক্রমণ করল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট গোলন্দাজ বাহিনী। আলী আকবর আকন ও তার সহযোদ্ধারা সতর্কই ছিলেন। তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন। দুই পক্ষে তুমুল গুলিবিনিময় চলতে থাকল। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে আলী আকবর আকনদেরই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলো। কয়েকজন শহীদ ও আহত হলেন। সকালবেলা গোলাগুলি কমে গেল। তিনি ধারণা করলেন, পাকিস্তানি সেনারা আবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড আক্রমণ চালাবে। সেই আক্রমণে তাঁদের টিকে থাকতে হবে। তিনি সহযোদ্ধাদের গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে বললেন। বেলা আনুমানিক পাঁচটা কি সাড়ে পাঁচটা। আলী আকবর দুরবিন দিয়ে আড়াল থেকে দেখতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের তৎপরতা। ঠিক তখনই পাকিস্তানি অবস্থান থেকে ছুটে এল একঝাঁক গুলি। একটি গুলি বিদ্ধ হলো তার বুকে। তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল স্টেনগান ও দুরবিন। তীব্র যন্ত্রণায় আলী আকবর আকনের মুখটা নীল হয়ে গেল। তবে দমে গেলেন না। সাহসও হারালেন না। সেখানে তার কোনো সহযোদ্ধা নেই। তারা জানেও না তিনি আহত। অনেক কষ্টে সেখান থেকে ফিরে গেলেন সহযোদ্ধাদের কাছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৭-০৫-২০১২"। ২০১৫-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা