আলাউদ্দিন আল আজহারী

মাওলানা আলাউদ্দিন আল আজহারী একজন বাংলাদেশি ইসলামিক স্কলার, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও ভাষা আন্দোলন কর্মী ছিলেন।[১][২] তিনি বাংলাদেশে আধুনিক আরবি ভাষার প্রচলনে পথিকৃৎ ছিলেন।[৩] এছাড়াও তার ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় দখল ছিলো। তিনি বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।[৪] তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েঢাকা মাদ্রাসা-ই আলিয়ার আরবি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৫]

মাওলানা

আলাউদ্দিন আল আজহারী
জন্ম১৯৩০
সাহেবরামপুর গ্রাম, কালকিনি থানা, মাদারীপুর জেলা
মৃত্যু২৭ মার্চ, ১৯৭৮
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ববাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশাশিক্ষকতা, লেখালিখি, গবেষণা
পিতা-মাতা
  • মুন্সী আবদুল করিম (পিতা)
  • আম্বিয়া খাতুন (মাতা)

জন্ম ও পরিচয় সম্পাদনা

আলাউদ্দিন আল আজহারী ১৯৩০ সালে মাদারীপুর জেলার তৎকালীন কালকিনি থানার সাহেবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।[৬] তার পিতার নাম মুন্সী আবদুল করিম ও দাদার নাম মোহাম্মাদ ফয়েজউদ্দিন মুন্সি। আজহারীর মাতার নাম আম্বিয়া খাতুন।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আজহারী তার পিতা মাতার নিকট বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তার নানার প্রতিষ্ঠিত এনায়েতনগর সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে কয়েক বছর পড়ার পর সাহেবরামপুর হাই মাদ্রাসায় (বর্তমানে সাহেবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন, এই মাদ্রাসায় তিনি দাখিল পাশ করেন। এই সময় তিনি কুরআন তেলওয়াত বিশুদ্ধ ভাবে শেখার প্রয়োজনে এক বছরের জন্য কয়ারিয়া কারামাতিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপরে তিনি গ্রামের বাইরে এসে চাদপুর উসমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন, এবং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ উসমান গনির বাড়িতে লজিং থাকেন। এই মাদ্রাসা থেকেই তিনি ১৯৪৭ সালে আলিম ও ১৯৪৯ সালে ফাজিল পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা শহরে এসে মাদ্রাসা-ই আলিয়া ঢাকায় ভর্তি হন, ১৯৫১ সালে এখান থেকে কামিল পাশ করেন।[৭]

তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছর অবস্থান করে মাস্টার্স অফ থিওলজি ও স্পেশালিস্ট ইসলামিক ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে বিভাগে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি মিশরে থাকা অবস্থায় ১৯৫৬ সালে পবিত্র হজ পালন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

তিনি শিক্ষাজীবন শেষে কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করিয়েছেন। তিনি তিনি কায়রো বেতার কেন্দ্রেও কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডে অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় আধুনিক আরবি প্রভাষক (লেকচারার ইন মডার্ন অ্যারাবিক) হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি এই মাদ্রাসার উর্দু ডিপ্লোমা বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের আরবি প্রোগ্রামের উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ৩৬টি মুসলিম দেশসহ প্রায় ৪৫টি দেশ ভ্রমন করেছেন।

অবদান সম্পাদনা

আজহারী সমাজ সেবার উদ্দেশ্যে বহু সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ও জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মসজিদ মিশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামি শিক্ষা সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আরবি ভাষায় প্রকাশিত আস সাকাফাহ নামক পত্রিকার সম্পাদক ও পরিচালক ছিলেন। এই পত্রিকাটি ১৯৭১ সালের দিকে আরব বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

এছাড়াও সাহিত্য চর্চার সুযোগ সৃষ্টির জন্য তিনি বাংলাদেশ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদ গঠন করেন। তিনি মাসিক মুসলিম মহিলা পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৮]

লিখিত অবদান সম্পাদনা

আজহারী ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় ২৪টা বই লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

বাংলা ভাষায় লেখা বই

  • আরবি-বাংলা অভিধান
  • উর্দু-বাংলা অভিধান
  • বাংলা-আরবি অভিধান
  • তাফসিরে আজহারী
  • ইসলামের ইতিহাস
  • আল-আজহারের ইতিহাস
  • বায়তুল মোকাদ্দাসের ইতিহাস
  • আরবি শিক্ষা-বাংলা ভাষায় আরবি ব্যাকরণ
  • ইংরেজি ভাষা ও এর প্রয়োজনীয়তা
  • কুরআনে বিজ্ঞান
  • লোগাতুল কুরআন
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলাম
  • ইসলামিয়াত

আরবি ভাষায় লেখা বই

  • মাদরাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস
  • ইনসাউল আসরি
  • আদদিরাসাতুল ইসলামিয়াহ
  • ইসলামি শিক্ষা
  • হিন্দুধর্ম ও দর্শন
  • বাংলাদেশ পরিচিতি
  • উম্মুল কুরআন: বাংলাদেশের মুসলমান
  • হাজিহি হিয়া বাংলাদেশ’

ইংরেজি ভাষায় লেখা বই

  • অমুসলিমদের জন্য ইসলামের নির্দেশনাবলি

মৃত্যু সম্পাদনা

আজহারী ১৯৭৮ সালের ২৭ মার্চে ঢাকায় দুরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃতুবরন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মো: মতিউর রহমান, সচিব। "স্ম র ণ : মাওলানা আলাউদ্দিন আল আজহারী"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৩ 
  2. "মাওলানা আলাউদ্দিন আল-আযাহারীর জীবন ও কর্ম | পাঠাগার"www.pathagar.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৪ 
  3. আ.ত.ম মুছলেহউদ্দীন (২০১২)। "আরবি"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. মুস্তাফিজুর রহমান, পৃ. ১৫।
  5. "ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে মাদরাসার ছাত্রদের অবদান"দ্য ডেইলি সরকার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৪ 
  6. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. মাওলানা মুহাম্মাদ (২০০৭)। মাওলানা আলাউদ্দিন আল-আযহারীর জীবন ও কর্ম। বাংলাবাজার, ঢাকা: আলাউদ্দিন আল আযহারী ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ০১। 
  7. মুস্তাফিজুর রহমান, পৃ. ১০।
  8. মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ (২০০৭)। মাওলানা আলাউদ্দিন আল-আযাহারীর জীবন ও কর্ম (পিডিএফ)। আলাউদ্দিন আল-আযহারী ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ২৪। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা