আলতে

কীটপতঙ্গের প্রজাতি

আলতে[১](বৈজ্ঞানিক নাম: Pachliopta aristolochiae; Atrophaneura aristolochiae (Fabricius)) এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি, যার মূল শরীরটা লাল বর্ণের, ডানা কালো এবং তার ওপর লাল রঙের নকশাযুক্ত। এই প্রজাপতির সামনের ডানা কালো বর্ণের হয় কিন্তু পিছনের ডানায় আঁচলে সাদা অঞ্চল দেখতে অনেকটা ফুল কাটা জাফরির মতো। বার-আঁচল বরাবর সারি দিয়ে উজ্জ্বল লাল রঙের বুটি দেখা যায়। আলতে ওড়ে সরলরেখা বরাবর, অচঞ্চল ছন্দে। এই প্রজাপতিটি ওড়ে তার সামনের ডানা দুটি দিয়ে। পিছনের ডানা জোড়া ভারসাম্য এবং দিকনিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এরা ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের এবং 'প্যাপিলিওনিনি' উপগোত্রের সদস্য।

আলতে
(Common Rose)
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: সন্ধিপদী
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: লেপিডোপ্টেরা
পরিবার: Papilionidae
গণ: Pachliopta
প্রজাতি: P. aristolochiae
দ্বিপদী নাম
Pachliopta aristolochiae
(Fabricius, 1775)

আকার সম্পাদনা

প্রসারিত অবস্থায় আলতের ডানার আকার ৮০-১১০মিলি মিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]

উপপ্রজাতি সম্পাদনা

আলতে প্রজাপতির আপাতত ২০ রকমের উপপ্রজাতি চিহ্নিত করা গেছে। তাদের মধ্যে এই পাঁচ রকমের উপপ্রজাতি ভারতে দেখা যায়।[৩][৪]

বিস্তার সম্পাদনা

সাধারণত এই জাতীয় প্রজাপতিটি আন্দামান সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।[৫] এছাড়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকাসহ মায়ানমারজাপানএ দেখা যায়। বর্ষার আগে এবং পরে এদের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়।[৬]

আচরণ সম্পাদনা

এই প্রজাতির প্রজাপতিরা যখন আলস্যভরে উড়ে বেড়ায়, এরা আংশিক ভাবে সামনের ডানাদুটি ঝাপটে সামনের দিকে এগিয়ে চলে এবং এই উড্ডীয়ন প্রক্রিয়ায় পিছনের ডানার বিন্দুমাত্র ভূমিকা থাকে না। দৃশ্যত মনে হয় পিছনের ডানাদুটি যেন নিষ্ক্রিয় ভাবে বাহিত হয়ে চলেছে।[৭] আলতে এর অ্যাপোজমেটিক রঙ এর সাহায্যে নিজের বিষাক্ত ধরনের ব্যাপারে খাদকদের জানান দেয় এবং এই করনবশত কদাচিৎ এদের প্রধান খাদক পাখিদের হাতে আক্রান্ত হয়। এই প্রজাতির বিষাক্ত ধরনের জন্য দায়ী মূল যৌগ হল অ্যারস্টোলোচিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য যৌগ যা এদের দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। পূর্নাঙ্গ প্রজাপতিটি এই বিষাক্ত যৌগ অ্যাসিড প্রাপ্ত হয়, এদের লার্ভা দশা থেকে যখন এই লার্ভা অ্যাস্টোলোচিয়া প্রজাতির গাছের পাতা খেয়ে বড় হয়। এদের গায়ে হাত দিলে অথবা বিরক্ত করলে, এরা একপ্রকার অস্বস্তিকর এবং কটু গণ্ধ নির্গত করে, সম্ভবত এই কারণে খাদকরা এদের শিকার করা থেকে বিরত থাকে।

আলতে প্রজাপতি অন্যান্য অধিকাংশ প্রজাপতির থেকে সকাল বেলাতেই বেশি সক্রিয়। সকালের অনেক আগের দিকেই এদের সক্রিয়তা চোখে পড়ে এবং এই সময় প্রায়ই এদের আকাশে উড়তে দেখা যায়। এরা খোলা জায়গায় ফুলের উপর এসে বসে মধু সংগ্রহের জন্য। জংলা অথবা ঝোপঝাড় পূর্ন জায়গা অপেক্ষা খোলামেলা জায়গা এদের অধিক পছন্দের। সাধারনত বাগানের বনওকড়া (Urena lobata),তোকমা (Hyptis suaveolens),বন মটমটিয়া (Chromolaena odorata), (Leea indica) এছাড়া Stachytarpheta এবং Sida প্রজাতির গাছের ফুলের উপর বসার প্রবণতা দেখা যায়। আলতে র ,বনাঞ্চলে ঝোপ জাতীয় কিছু গাছ এর ফুলএও এদের বিচরন ক্ষেত্র যেমন- সাদা ভেরেন্ডা (Jatropha curcas) এবং লালভান্ডির (Clerodendrum paniculatum)[৮]

এদের মাঝে মধ্যে ভেজা মাটি থেকে রস আহরণ করতে দেখা যায়। তবে অন্যান্য প্রানীর বিষ্ঠায় এরা কদাচিৎ বসে।[৯]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ডিম সম্পাদনা

আলতের ডিম হলদেটে খয়েরি বর্ণের এবং গোল আকৃতির হয় যার ওপরের তল অমসৃণ। ডিমগুলির নিচের দিকে কয়েকটি খাঁজ লক্ষ্য করা যায়।[১০]

শূককীট সম্পাদনা

শূককীট গুলি লম্বাটে এবং কালচে মেরুন রঙের হয়। তবক মখমলের মত হয় কিন্তু দেহের সপ্তম খণ্ডে সাদা আংটার মতো একটা সাদা পটি লক্ষ্য করা যায়। শরীর জুড়ে কয়েকটা সমান্তরাল সারিতে অনেকগুলো মাংসল অংশ থাকে, তার থেকে একাধিক সূক্ষ্ম রোঁয়া দেখা যায়।

আহার্য উদ্ভিদ সম্পাদনা

এই শূককীট কিরামার Aristolochia bracteolata, ইশের মূল বা রুদ্রজটা Aristolochia indica[১১] ও তাদের সমগোত্রীয় কিছু Aristolochia tagala, Thottea siliquosa গাছের পাতার রসালো অংশ আহার করে।

মূককীট সম্পাদনা

মূককীট এর রঙ খয়েরি হয়। এদের উদর ও বক্ষে এবং পিঠের দিকে একসারি গোল চ্যাপ্টা ফলক দেখা যায়।[১২]

জীবনচক্রের চিত্রশালা সম্পাদনা

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা 39। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  2. Kunte, Krushnamegh (২০০০)। Butterflies of Peninsular India। India, A Lifescape। Hyderabad, India: Universities Press। পৃষ্ঠা 141। আইএসবিএন 978-8173713545 
  3. Cotton, Adam; Fric, Zdenek Faltynek; Smith, Colin & Smetacek, Peter (মার্চ ২০১৩)। "Subspecies catalogue of the butterflies of India (Papilionidae): A Synopsis"। Bionotes15 (1): 5–8। 
  4. "Pachliopta aristolochiae Fabricius, 1775 – Common Rose"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  5. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  6. Gaonkar, Harish (১৯৯৬)। Butterflies of the Western Ghats, India (including Sri Lanka) - A Biodiversity Assessment of a Threatened Mountain System। Bangalore, India: Centre for Ecological Sciences। 
  7. Gay, Thomas; Kehimkar, Isaac David; Punetha, Jagdish Chandra (১৯৯২)। Common Butterflies of India। Nature Guides। Bombay, India: World Wide Fund for Nature-India by Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0195631647 
  8. Van Der Poorten, George Michael; Van Der Poorten, Nancy E. (২০১৬)। The Butterfly Fauna of Sri Lanka। পৃষ্ঠা 303। আইএসবিএন 978-1-77136-189-7 
  9. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ৭। 
  10. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies। New Delhi: Oxford University Press। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  11. Tian-Shung Wu, Yann-Lii Leu and Yu-Yi Chan (2000). Aristolochic Acids as a Defensive Substance for the Aristolochiaceous Plant-Feeding Swallowtail Butterfly, Pachliopta aristolochiae interpositus. Journal of the Chinese Chemical Society 47:221-226 [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জুলাই ২০২২ তারিখে
  12. Munshi, G.H.। "The pupa of Polydorus aristolochiae (Papilionidae)" (পিডিএফ)। Journal of the Lepidopterists' Society। পৃষ্ঠা 115-118। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]