আর্থার লেভেলিন বাশাম

আর্থার লেভেলিন বাশাম (২৪ মে ১৯১৪ – ২৭ জানুয়ারি ১৯৮৬) ছিলেন একজন ইতিহাসবিদ ও বিখ্যাত ভারত-তত্ত্ববিদ। প্রাচ্যবিদ্যায় অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ভিজিটিং অধ্যাপক হিসাবে কাজ করার আমন্ত্রণ পান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের “দেশিকোত্তম” উপাধিতে ভূষিত অধ্যাপক এবং “দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়া” বিখ্যাত গ্রন্থটির জন্য সমধিক পরিচিত ছিলেন।[১]

আর্থার লেভেলিন বাশাম
জন্ম(১৯১৪-০৫-২৪)২৪ মে ১৯১৪
মৃত্যু২৭ জানুয়ারি ১৯৮৬(1986-01-27) (বয়স ৭১)
জাতীয়তাব্রিটিশ
শিক্ষালন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ
পেশাইতিহাসবিদ ও প্রাচ্যবিদ
পরিচিতির কারণভারততত্ত্ববিদ
সন্তান১ (কন্যা)
পিতা-মাতাআর্থার এডওয়ার্ড বাশাম (পিতা)
মারিয়া জেন বাশাম (থম্পসন)(মাতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আর্থার লেভেলিন বাশাম ইংল্যান্ডের এসেক্স কাউন্টির লটন নগরীতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা আর্থার এডওয়ার্ড বাশাম এবং মাতা মারিয়া জেন বাশাম (থম্পসন)[২] তার পিতা ছিলেন একজন সাংবাদিক এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছুদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে হিমাচল প্রদেশের শিমলার কসৌলীতে ছিলেন। তিনি পিতার কাছ থেকে ভারত সম্পর্কে নানা গল্পগাথা শুনতেন।[৩] তাঁর মাতাও ছিলেন একজন সাংবাদিক ও ছোটগল্পকার। স্বভাবতই ধীরে ধীরে বাল্যকালে তার মনে ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। সঙ্গীতে শিক্ষা লাভ করেন,ভালো পিয়ানো বাজাতে শেখেন। ষোল বৎসর বয়সে নিজে সুরকার হন।

স্কুল-কলজের শিক্ষার সাথে তার ধর্ম সম্বন্ধে জানতে প্রবল আগ্রহ জাগ্রত হয়। প্রথমে খ্রিষ্টধর্ম। তারপর একে একে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলাম ধর্ম। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ হতে সংস্কৃতে স্নাতক হন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

 
মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাক্ষাতের সময়ের ফটোগ্রাফ - টিভি ভেঙ্কটাচাল শাস্ত্রী (ডান থেকে প্রথম) এবং এইচএম নায়ক (ডান থেকে তৃতীয়) এ এল বাশম (বাম থেকে তৃতীয়)

বিশ্বযুদ্ধের শেষে লন্ডনে ফিরে আসেন এবং প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ লিওনেল ডেভিড বার্নেটের অধীনে গবেষণা করে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি গবেষণার সময় কাজের উপর ভিত্তি করে রচনা করেন 'হিস্ট্রি অ্যান্ড ডকট্রিন অফ দি আজিবিকাশ'। গবেষণার জন্য তিনি একটি বৃত্তি পেয়েছিলেন। লন্ডনের ওরিয়েন্টাল স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজেই তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রভাষক এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে তাঁর অধ্যাপনার সময় বহু স্বনামধন্য ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামশরণ শর্মা, রোমিলা থাপর, অওধ কিশোর নারায়ন, বিশ্বম্ভরশরণ পাঠক প্রমুখেরা তাঁর ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের প্রধান হন এবং প্রাচ্য বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন।[৪] তিনি ক্যানবেরা অবস্থানকালে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।[১]

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর এক বৎসর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। বাশাম একমাত্র পাশ্চাত্যের ইতিহাসবিদ যিনি স্বামী বিবেকানন্দর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বিভিন্ন সময়ে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে যে মন্তব্য তিনি প্রায়শই করতেন তা হল―

(ইংরেজি)

«"in centuries to come, he will be remembered as one of the main moulders of the modern world"»

(বাংলা)

«"আগামী শতাব্দীতে তিনি আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রধান রূপকার হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন"»

তিনি কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির "বিবেকানন্দ অধ্যাপক" পদে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৃত ছিলেন। ভারতের তথা বিশ্বের নানা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কমিটি ফর কমপ্রিহেন্সিভ স্টাডি অব রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ মুভমেন্ট '-র সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে "দেশিকোত্তম" উপাধিতে ভূষিত করে।[১]

রচিত গ্রন্থ সম্পাদনা

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থদ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়া১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সাত বৎসর পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক বাশাম শতাধিক প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

রচনাবলী সম্পাদনা

পুস্তক

তিনি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মর্টিমার হুইলারের সাথে ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথের অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া গ্রন্থটির পরিবর্ধন ও সংশোধন করেন।[৫]

গবেষণাপত্র-নিবন্ধ
  • বাশাম, এ এল (অক্টোবর ১৯৪৮)। "Harṣa of Kashmir and the Iconoclast Ascetics": 140–145। ডিওআই:10.1017/S0041977X00083269 
  • বাশাম, এ এল (ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯)। "Recent Work on the Indus Civilization": 140–145। ডিওআই:10.1017/S0041977X00081891 
  • বাশাম, এ এল (১৯৫৩)। "A New Study of the Śaka-Kuṣāṇa Period": 80–97। জেস্টোর 608886ডিওআই:10.1017/s0041977x00087279 
  • বাশাম, এ এল (ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭)। "The Succession of the Line of Kaniṣka": 77–88। ডিওআই:10.1017/S0041977X00061693 
  • বাশাম, এ এল (১৯৮১) দ্য ইভোলিউশন অফ দ্য কনসেপ্ট অফ বোধিসত্ত্ব[৬] কাওয়ামুরা, লেসলি এস, ওয়াটারলু, অন্ট দ্বারা সম্পাদিত: কানাডিয়ান কর্পোরেশন ফর স্টাডিজ ইন রিলিজিয়ন/কর্পোরেশন কানাডিয়ান দেশ উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রেস, 1981 দ্বারা বিজ্ঞান ধর্মীয়। ("ক্যালগারি বৌদ্ধধর্ম সম্মেলনে উপস্থাপিত কাগজ, সেপ্টেম্বর 18-21, 1978, ধর্মীয় গবেষণা বিভাগ, মানবিক অনুষদ, ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা স্পনসর"),আইএসবিএন ৯৭৮০৯১৯৮১২১২৩, ওসিএলসি ৭৮১৪৩৩৫১৬

জীবনাবসান সম্পাদনা

বাশাম ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন।

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমস্যার উপর আর্থার লেভেলিন বাশামের দৃষ্টিভঙ্গি কি ছিল তাই নিয়ে তাঁরই এক ছাত্র শচীন্দ্র কুমার মাইতি রচনা করেন - "প্রফেসর এ এল বাশাম, মাই গুরুজি অ্যান্ড প্রবলেমস্ অ্যান্ড পার্সপেক্টিভ অফ অ্যানসেন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার" শীর্ষক এক গ্রন্থ। এই বইটির মধ্যে লেখকের উদ্দেশ্যে লেখা অধ্যাপক বাশামের আশিটি চিঠি রয়েছে। বইটি অভিনব পাবলিকেশন কর্তৃক প্রকাশিত। এছাড়াও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক টমাস আর ট্রাউটম্যান ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এ এল বাশাম এর স্মরণে রচনা করেন " ইন মেমোরি অফ এ এল বাশাম, বৃটিশ স্যান্সকৃটিস্ট হিস্টোরিয়ান অফ ইন্ডিয়া, গুরু,ফ্রেন্ড" শীর্ষক এক গ্রন্থ। গ্রন্থটি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস হতে প্রকাশিত হয়। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাঁর স্মরণে বার্ষিক বক্তৃতামালার আয়োজন করে।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রথম খণ্ড, স্বামী বিবেকানন্দ (২০০৫)। আমার ভারত অমর ভারত। কলকাতা: রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার। পৃষ্ঠা ১৯৫,১৯৬। আইএসবিএন 978-81-8584-316-2 
  2. Diane Langmore, Darryl Benne, Australian Dictionary of Biography: Volume 17 1981–1990 A-K, Volume 17, p71, The Miegunyah Press, 1 April 2009
  3. Sachindra Kumar Maity, Professor A.L. Basham, My Guruji and Problems and Perspectives of Ancient Indian History and Culture, page 3, 1997, (Abhinav Publications: India)
  4. Sachindra Kumar Maity, Professor A.L. Basham, My Guruji and Problems and Perspectives of Ancient Indian History and Culture, page 4, 1997, (Abhinav Publications: India)
  5. Ballhatchet, Kenneth (অক্টোবর ১৯৮৬)। "A. L. Basham": 561–562। জেস্টোর 609067ডিওআই:10.1017/S0041977X00045122  
  6. Leslie Kawamura. (২০০৬)। Bodhisattva Doctrine in Buddhism.। Wilfrid Laurier University Press। আইএসবিএন 0-88920-748-8ওসিএলসি 964358428